Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all 87249 articles
Browse latest View live

বিরোধী প্রার্থীর ইস্যু দুর্নীতি , শাসকদলের প্রচারে উন্নয়ন

$
0
0

শুভেন্দু হালদার ■ ডায়মন্ড হারবার

ফকিরচাঁদ কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থানীয় বিধায়ক দীপক হালদারকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়৷ এক দিন তাঁকে পুলিশ হেফাজতে কাটাতে হয়৷ ওই ঘটনার পর দলে তাঁর বিরোধীরা ভেবেছিলেন , এ বার বোধ হয় দীপক আর টিকিট পাবেন না৷ তিনি যাতে টিকিট না পান , তার জন্য দীপকের বিরোধীরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দরবারও করেন৷ কিন্ত্ত সাসপেন্ড হওয়ার পর থেকে দীপক একটাও দলবিরোধী কথাও বলেননি৷ নীরবে নিজের কাজ করে গিয়েছেন৷ তারপরই দল তাঁর উপর থেকে সাসপেনশন তুলে নেয়৷ তখনই দীপক বুঝে যান , তাঁর টিকিট প্রায় নিশ্চিত৷ তিনি নিজের বিধানসভা এলাকায় কাজ শুরু করে দেন৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যেই শিকে ছেঁড়ে৷ এখন তিনি পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন৷ তবে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর কয়েক জন নেতা ময়দানে নামেননি৷ দীপক অবশ্য দাবি করছেন , দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই৷ তাঁর হয়ে সকলেই ভোটের কাজে নেমে পড়েছেন৷

এই কেন্দ্রে লড়ছেন সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসনাত৷ লড়াইয়ে আছেন বিজেপির শিক্ষক -প্রার্থী বলরাম হালদার এবং এসইউসির মনিরুল ইসলাম৷ নাম ঘোষণার পরই সব প্রার্থী প্রচারে নেমে পড়েছেন৷ বিধানসভা কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন এলাকায় ভোটের প্রচার করছেন দীপক৷ রোজ ভোরে উঠে বাড়িতে রোগী দেখে তবেই স্থানীয় নিউ টাউনের বাড়ি থেকে ভোটের প্রচারে বেরোচ্ছেন ৬৫ বছরের হাসনাত৷ গ্রাম পঞ্চায়েত ধরে ধরে প্রচার করছেন তিনি৷ বলরাম ও মনিরুলও বাড়ি বাড়ি প্রচারের উপর জোর দিচ্ছেন৷

২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা থেকে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন হাসনাত৷ কিন্ত্ত ২০১১ সালে প্রবল পরিবর্তনের হাওয়ায় ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন মোল্লার কাছে ১১ হাজার ৯৭০ ভোটে পরাজিত হন তিনি৷ সে বার ডায়মন্ড হারবার আসন থেকে দীপক হালদার ২০ হাজার ৭৭৪ ভোটে জেতেন৷ সিপিএম প্রার্থী শুভ্রা সাউ পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৮৭১ ভোট৷ তখন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল এসইউসি ও কংগ্রেসের৷ ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনেও হাসনাত ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন৷ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের থেকে প্রায় দু'হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল৷ বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ২৬ হাজার ভোট৷ এ বার তৃণমূল একাই লড়াই করছে এই আসনে৷

গত পাঁচ বছরে এই বিধানসভা এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় , জল প্রকল্প , ইলেকট্রিক চুল্লি , কিষাণ মাণ্ডি ও পলিটেকনিক কলেজ৷ এ ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের পাশেই মেডিক্যাল কলেজ ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনের কাজ চলছে৷ তৃণমূল এ সবকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছে৷ দীপক প্রচারে বেরিয়ে বলছেন , 'গত পাঁচ বছরে ডায়মন্ড হারবারের চেহারাই অনেক পাল্টে গিয়েছে৷ এটাই আমার প্রচারের মূল বিষয়৷ 'তবে তাঁর অনেক দাবিই খারিজ করে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ৷ বোড়িয়ার বাসিন্দা অশীতিপর কৃষ্ণধন পুরকাইত বলেন , 'কন্যাশ্রী ও সাইকেল বিলি করাটাকে এলাকার উন্নয়ন হিসেবে ধরা যায় না৷ এলাকার রাস্তাঘাট , পানীয় জল ও বিদ্যুতের সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি৷ '

গৃহবধূ মালতী মণ্ডল বলেন , 'আমরা গরিব , রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না৷ এখানকার তৃণমূলের নেতাদের কাছে একটা ঘর চেয়েছিলাম৷ ওরা দেবে বলেও দেয়নি৷ ' বেকার যুবক অর্পণ মণ্ডল বলেন , 'তিন বছর হল এমএ পাস করে বাড়িতে বসে রয়েছি৷ টেট থেকে শুরু করে সমস্ত চাকরির পরীক্ষায় বসেছি৷ পরে শুনেছি , শাসক দলের নেতাদের হাত ধরে গোপনে নিয়োগ হয়ে গিয়েছে৷ ' সিপিএম প্রচারে শাসক দলের দুর্নীতিকেই ইস্যু করছে৷ তার পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেও সিপিএম প্রচারের কাজে লাগাচ্ছে৷ হাসনাত বলেন , 'তৃণমূলের উন্নয়ন মানে হল সিন্ডিকেট , দুর্নীতি , তোলাবাজির উন্নয়ন৷ এই পাঁচ বছরে মানুষের জন্য কোনও উন্নয়ন হয়নি৷ ' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের বার্তা ডায়মন্ড হারবারের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছেন বিজেপি প্রার্থী বলরাম হালদার৷ তিনিও তৃণমূলের দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করে প্রচার করছেন৷ তৃণমূলপ্রার্থী দীপক অবশ্য বিরোধীদের কোনও অভিযোগই কানে তুলতে চান না৷ তিনি বলেন , 'আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী৷ এই পাঁচ বছরে রাজ্যের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে৷ ডায়মন্ড হারবারও তার বাইরে নয়৷ এ বার ভোট হবে এই উন্নয়নের ইস্যুতেই৷ '৷


ভোট কাটাকুটির জটিল হিসাবে ঝুলে আমতার ভাগ্য

$
0
0

অনির্বাণ ঘোষ ■ আমতা

গত বারের পাওয়া ভোটগুলোর বেশিরভাগই এ বার পাবেন না , নিশ্চিত৷ আর যে ভোটগুলো তিনি পাননি , পেয়েছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী , সেগুলো তিনি পাবেন এ বার৷ সেটাই যা নিশ্চিন্তি ! ভোটের হিসেব করতে নেমে এমন খটমট অঙ্কেই মশগুল আমতা কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক , এবারের বাম -কংগ্রেস জোটপ্রার্থী অসিত মিত্র৷ কেননা , ২০১১ আর ২০১৬ -র বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে জোটের সংজ্ঞা -সমীকরণ সবই বদলে গিয়েছে আমূল৷ তার আঁচ অনেক কেন্দ্রে পড়লেও , আমতা কেন্দ্র সেখানেও কিঞ্চিত্ ব্যতিক্রমী৷ তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভাঙার পরও ২০১১ -র যে সব কংগ্রেস প্রার্থী ২০১৪ -র লোকসভা ভোটে নিজের ভোটব্যাঙ্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিলেন , অসিত তাঁদের মধ্যে পড়েন না৷ ফলে চিরশত্রু সিপিএম -কে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূলকে হারানোর হিসেব -নিকেষ করছেন তিনি৷ অতীতের চারটি ভোটে সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ মিত্রকে তিন বারই হারিয়েছেন অসিত৷

ছাত্রজীবন থেকেই এলাকার দাপুটে এই কংগ্রেসি নেতা ১৫টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বিধায়ক হিসেবে৷ এ বারের ভোটে সেই রবীন্দ্রনাথই আবার অসিতের নির্বাচন কমিটির মাথা৷ গত বার তিনি যাঁর কাছে মাত হয়েছিলেন , এ বার তাঁকে জেতাতেই দিনরাত এক করে ফেলছেন তিনি৷ তৃণমূল শিবির সে সব দেখে হাসাহাসি করছে আর বলছে , আমতাবাসীও নাকি সেই কারণেই অসিতকে আর বরদাস্ত করবেন না এ বার৷ মানুষকে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন , টানা তিন দশক যে সিপিএমের অত্যাচার সয়ে কোনও রকমে বেঁচে রয়েছে আমতা , যে সিপিএম -কে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হারিয়ে তিন -তিন বার আমতাবাসী বিধানসভায় পাঠিয়েছিলেন অসিতকে , এ বার সেই অসিতই ভোটে জিততে সিপিএমের হাত ধরেছেন এলাকাবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে৷ তৃণমূল প্রার্থী তুষার শীল তো আবার আরও এককাঠি বাড়া৷ ১৯৯১ সালের পঞ্চায়েত ভোটে , সাবেক আমতার কান্দুয়াতে (অধুনা অন্য কেন্দ্রে ) হাতচিহ্নে ভোট দেওয়ার জন্য যে ছ'জনের হাত কেটে নিয়েছিল সিপিএম , তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে নিয়ে প্রচারে ঘুরছেন তুষার৷ বলছেন , 'এঁদের মানুষ দেখলে অতীতের কথা মনে পড়বে৷

আর বুঝবে , এখন কংগ্রেসের চরিত্রে কতটা অধঃপতন হয়েছে৷ তা না -হলে সিপিএমের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে ! এ তল্লাটের মানুষ কেন জোটকে ভোট দেবে ?' অসিত অবশ্য এ সব সমালোচনা গায়ে মাখার ধার ধারছেন না৷ তাঁর সাফ কথা , 'পশ্চিমবঙ্গে তো গণতন্ত্রের সর্বনাশ ডেকে এনেছে তৃণমূল৷ সেই সঙ্কটই তো জোটের জন্ম দিয়েছে৷ তৃণমূলকে তাড়াতে তাই সিপিএমের হাত ধরায় যে অন্যায় কিছু নেই , তা ভালোই বোঝেন স্থানীয়রা৷ ' কিন্ত্ত উন্নয়ন ? যাকে পাখির চোখ করে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার প্রচারে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল , সেই উন্নয়ন থেকেই তো বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে আমতা ! গত পাঁচ বছরে বিধায়ক তহবিলের মাত্র ৪২ % টাকা খরচ হয়েছে আমতায়৷ ফি বছর বর্ষায় এখনও ভাটোরা , ঘোড়াবেড়িয়া -চিতনান , কাশমোলি , ঝামটিয়া , তাজপুর , সারদা , কুশবেড়িয়া , পানশিল -সহ আমতার বিস্তীর্ণ এলাকা চলে যায় জলের তলায়৷

এ সব দায় কি তিন বারের বিধায়কের নয় ? প্রশ্ন শুনে অসিতের প্রতিক্রিয়া , 'কে বলেছে আমতায় আমি উন্নয়ন করিনি ? রাস্তা , বাঁধ আর সেচের জন্য আমি যা যা করেছি , তা কম নয়৷ কিন্ত্ত বিশ্বাস করুন , বিধায়ক হিসেবে বাম আমলেও সিপিএম আর স্থানীয় প্রশাসনের থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছি , তার কানাকড়িও জোটেনি তৃণমূলের জমানায়৷ তাই বিধায়ক হিসেবে আমার যা সাফল্য তার প্রায় সবই বাম আমলে৷ আর টাকা খরচ ? সেটাও পুরোটাই করেছি৷ এ যাবত্ ৪২ % টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটই পেয়ে গিয়েছি বলে তা -ই নিয়েই নিন্দুকেরা তর্জন -গর্জন করছে৷ ' বিদায়ী বিধায়ক দীর্ঘদিনের বলেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা থাকাটা স্বাভাবিক৷ কিন্ত্ত পাটিগণিতের হিসেবেও বেশ কিছুটা পিছিয়েই রয়েছেন অসিত৷ ২০১৪ -তে তিনি নিজেও কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে৷ কিন্ত্ত ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত আমতা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল যেখানে প্রায় ৮৩ হাজার ভোট পেয়েছিল , সেখানে কংগ্রেসের কপালে জুটেছিল মোটে ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোট৷ বরং সিপিএম আমতায় ভোট পেয়েছিল ৫৫ হাজার ৭০০ -র মতো ভোট৷ অর্থাত্, বাম -কংগ্রেস জোটের মোট ভোট ছিল প্রায় ৭৬ হাজার৷

সেই হিসেবে , তৃণমূল অন্তত ৭ হাজার ভোটের 'লিড ' দিয়েই দৌড় শুরু করেছে চলতি বিধানসভা ভোটে৷ জোটের তরফে যদিও দাবি , পাটিগণিতের এমন সরল হিসেব দিয়ে ভোটের হার -জিত নির্ণয় করা যায় না৷ পেরোতে হয় বিস্তর জটিল 'ফ্যাক্টর '-ও৷ কেমন সে সব ফ্যাক্টর ? কলাতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে ডিওয়াএফআই কর্মী অজিত শিট বলছিলেন , 'আমতা বিধানসভায় ১৮টি পঞ্চায়েত রয়েছে৷ তার অধিকাংশতেই ক্ষমতায় রয়েছে হয় কংগ্রেস অথবা সিপিএম৷ সাবশিটের মতো কয়েকটা পঞ্চায়েতে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও , এখানের পাড়াগাঁয়ে বরাবরই মূল লড়াইটা বাম -কংগ্রেসে৷ এ বার তারা একসঙ্গে৷ ফলে তৃণমূল চাপে থাকবে৷ ' শাসক শিবির লোকসভার পাটিগণিত নিয়ে যতই মশগুল থাকুক , তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে আরও ক 'টি বিষয়৷

প্রথমত , ভূমিপুত্র হিসেব দুঁদে রাজনীতিক অসিত যে এলাকার নাড়িনক্ষত্র জানেন , তার ধারেকাছে পৌঁছানো অসম্ভব পাইকপাড়ার তুষার শীলের পক্ষে৷ দ্বিতীয়ত , অসিতের জনসংযোগের ক্ষমতা যার বিপক্ষে অরাজনৈতিক তুষার বার বার পিছলে যাচ্ছেন প্রচারের সময়েই৷ তৃতীয়ত , তৃণমূলেই প্রার্থিত্বের স্থানীয় দাবিদার ছিলেন রমেশ পাল , সেলিমুল আলম , সুকান্ত পালরা৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ এড়াতে কলকাতা থেকে আমতায় প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হলেও , স্থানীয় নেতাদের কতটা সহযোগিতা পাবেন বহিরাগত প্রার্থী , তা নিয়েও রয়েছে জল্পনা৷ আর চতুর্থত , এ সব খুটিনাটি নিয়ে অনেকটা অন্ধকারেই রয়েছেন রাজনীতিতে আনকোরা তুষার৷ ফলে , যোগাসন দেখিয়ে আদৌ আসন জিততে পারবেন কিনা তিনি , তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন৷



ক্রিকেটই মেলাচ্ছে আশিক -জুলফিকারদের

$
0
0

চিত্রদীপ চক্রবর্তী ■ হিলি

অনিশ্চয়তায় ভরা খেলা ক্রিকেট। বদলে দেয় কত কিছু। কত না -কে , হ্যাঁ করিয়ে দেয়৷ ভুলিয়ে দেয় সীমান্তের লক্ষ্মণরেখা৷ ভোটের বাজারে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের হাঁড়িভাঙা গ্রামে না এলে মালুমই হোত না৷ এখানকার বর্ডার রোড পেরিয়ে এক কিলোমিটার হাঁটা আলপথ পেরিয়ে রওনা দিলে ডান পা পড়ে হাঁড়িভাঙা গ্রামে৷ পাঁচ ফুট রাস্তাতে বাঁ পা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বাগমারাতে৷ এই আধা কাঁচা আধা পাকা রাস্তাটিতে দু'টি ফোনই কাজ করে , ভারতের বিএসএনএল আর গ্রামীণ ফোন৷

ক্রিকেট বৈরিতা থেকে নয় , তবে বিজিবি (বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ )-এর দু'দেশের মাঝে বুক চিরে যাওয়া রাস্তাটি পুরোটা কংক্রিটের ঢালাই যায়নি৷ তেমনি বিডিআর আপত্তি তোলায় সীমান্তের জিরো লাইনে প্রায় বছরের পুরোনো মসজিদে এপারের বাসিন্দাদের নমাজ পড়াও নিষিদ্ধ দেওয়া হয়েছে৷ বন্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশের স্কুলে গিয়ে এদিকের কচিকাঁচাদের পড়াশুনোও৷ স্রেফ বিডিআরের আপত্তিতে ওপারে জুলফিকারের বাড়ির ঢাউস টিভিতে ফিরদৌসের হিট সিনেমা দেখা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন হাঁড়িভাঙার মানুষ৷ কিন্ত্ত একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে সেই ক্রিকেট৷ যে খেলাকে কেন্দ্র করে কালের মধ্যে দুই দেশের তিক্ততা ক্রমেই বেড়েছে৷ পারাপারের ক্ষেত্রে কড়া হলেও এক্ষেত্রে বৈধ ছাড়পত্রের নাম সেই ক্রিকেটই৷ এপারে হলে তবে সাতখুন মাপ৷ মসজিদের পাশ দিয়ে পঞ্চাশ মিটার পেরিয়ে ওপারে বাংলাদেশের ঘরে ঢুকে আইপিএল বা অন্য ম্যাচ দেখতে পান হাঁড়িভাঙার বাসিন্দা আশিক কিংবা আনোয়াররা৷ তাঁদের সঙ্গে একাসনে বসে বিরাট কোহলি আর কেকেআরের ফ্যান পলাশ বর্মনরাও৷

সীমান্তের এই হাঁড়িভাঙা গ্রামটি বড়ই বিচিত্র৷ এখানে প্রায় সাড়ে সাতশো বাস৷ মোট ভোটার সাড়ে তিনশো৷ গ্রামে স্নাতক পাঁচজন৷ প্রায় সবারই চাষের জমি রয়েছে৷ কিন্ত্ত আজ পর্যন্ত এই গ্রামের কোনও বাসিন্দা সরকারি কোনও চাকরি পাননি৷ বাম আমলেও নয় , মমতার আমলেও নয়৷ এলাকার যুবক ১৯ বছরের সানোয়ার আলি মণ্ডল৷ তাঁর কথায় , 'আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এ বার উচ্চশিক্ষায় যাব৷ তবে এটাও জানি , পাশ করে সেই কৃষিকাজই করতে হবে৷ 'এই গ্রামে ঘরে ঘরে নতুন বাইক৷ কাঁচা রাস্তাতে টোটো চলে৷ হিলির বাসিন্দারা অবশ্য মনে করেন এখানকার লোকেদের কাঁচা টাকা থাকার বড় কারণ সেই সীমান্ত৷ রাতের অন্ধকারে ফেনসিডিল , আয়োডেক্স , জিরার প্যাকেট সব এপার -ওপার হয়ে যায়৷ আর ইদানীং নাকি নতুন ব্যবসা হিসেবে উজিয়ে এসেছে সোনার বিস্কুট৷ যা জুতো কিংবা অন্তর্বাসে ভরে ওপারে নিলেই হাতে হাতে কয়েক হাজার টাকা৷ হাঁড়িভাঙা গ্রামে বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল রয়েছে৷

কিন্ত্ত তাতে আয়রনের প্রকোপ৷ ফলে অনেকেই বাজার থেকে ২৫ লিটারের মিনারেল ওয়াটারের জার কিনে আনেন৷ মঙ্গলবার চাঁদিফাটা গরমে দেখা হল আমিরুল শেখের সঙ্গে৷ সাইকেলে করে জল বয়ে আনছিলেন তিনি৷ ভোটের কথায় ক্ষেপে গিয়ে উত্তর দিলেন , 'এখানে জল খেয়ে খেয়ে পেটের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্ত্ত ভোটবাবুদের সেটা বোঝাবে কে ? সেই তো এক ভোটে আসে আবার পরের ভোটে দেখতে পাই৷' আমিরুল শেখের আক্ষেপ ,'রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে এই রাস্তা দিয়ে দু'কিলোমিটার দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সমস্যা৷ কিন্ত্ত আমাদের বলা হল বিডিআর নাকি রাস্তাটা পাকা করতে বাধা দিচ্ছে৷ 'গ্রামে ঢোকার বর্ডার রোডের ওপর বিএসএফ ক্যাম্প৷ এই গ্রামের লোকেদের গ্রামের বাইরে কোথাও যেতে হলে পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক৷ খাতায় এন্ট্রি করিয়ে সেই পরিচয়পত্র জমা রাখতে হয় ক্যাম্পে৷

ফেরার পথে আবার তা ফেরত পাওয়া যায়৷ মঙ্গলবার সকালে গ্রামে ঢুকতে গিয়ে আমাকেও পরিচয়পত্র জমা রাখতে হল বিএসএফ জওয়ানদের কাছে৷ তার পর ঢোকার অনুমতি৷ গ্রামের যুবক শ্যামল ঘোষ কানের কাছে মুখ এনে জানাল , 'বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখুন৷ অনেক মহিলাকে দেখতে পাবেন কি ভয়ঙ্কর মোটা লাগছে৷ আসলে সারা শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবে৷ আবার বেশি রাতে ফিরে আসবে ওপারের গুড় নিয়ে৷ তখন আর কোথায় বিএসএফ৷ ' গ্রামের বাসিন্দা রহিমা খাতুন সায় দিলেন শ্যামলের কথায়৷ তাঁর বক্তব্য , এসব তো রোজই হয়৷

মঙ্গলবার অবশ্য অন্যরকম অভিজ্ঞতাও হল৷ জিরো পয়েন্টের মসজিদের সামনে কথা বলার সময় এগিয়ে এলেন এক ভদ্রলোক ৷ নাম না বললেও নিজের পরিচয় দিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মী হিসেবে৷ তিনিই জানালেন , 'এপারে ভোট৷ লোক যাতে না ঢোকে সেজন্য কড়াকড়ি করা হয়েছে৷ ' হাঁড়িভাঙা গ্রামের প্রত্যেকেই বাংলাদেশের তৈরি লম্বা মাপের সিগারেট খান৷ ঠান্ডা পানীয় খেতে হলে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশের দোকানে৷ সেটা সাময়িক৷ একমাত্র ক্রিকেট হলেই ওপারে ঢোকার সময় বাড়ানো যায়৷ কিন্ত্ত ক্রিকেটেই কেন ছাড় ? গ্রামের যুবক লিয়াকত ফাঁস করলেন সেই তথ্য৷ '২০০৭ সালের বিশ্বকাপ খেলার সময় লোডশেডিং হওয়ায় আমরা ওপারে যাই৷ সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল৷ তারপর থেকে ওরা আমাদের খেলা দেখতে ঢুকতে দেয়৷ ভাবে আবার জিতবে৷ কিন্ত্ত বেশির ভাগ সময়েই হেরে যায়৷ সে যেটাই হোক৷ খেলাটা তো আমরা দেখতে পারি , এটাই বড় ব্যাপার৷ '

জাত খুইয়ে শক্ত লড়াইয়ে সিদ্দিকুল্লা

$
0
0

সাবেরী গুপ্ত ■ মঙ্গলকোট

প্রথমজন শাজাহান চৌধুরি৷ গতবারের বিধায়ক৷ এ বারও মঙ্গলকোট কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী৷ দ্বিতীয়জন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি৷ জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের নেতা৷ মঙ্গলকোটে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী৷ এবং তৃতীয়জন অপূর্ব চৌধুরী৷ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি৷ গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন৷ এ বারও টিকিট পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত ছিল তাঁর৷ সেটা না পেলেও সিদ্দিকুল্লার ভাগ্য নির্ধারণে অপূর্বর ভূমিকাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷

বর্ধমানের মঙ্গলকোটে তিন চৌধুরীর লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন , সেটা ঠিক হয়ে যাবে আট দিনের মাথায়৷ কিন্ত্ত লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে এবং অনেক স্রোত -চোরাস্রোতের অঙ্ক মেলাতে পাকা ম্যাথেমেটিশিয়ানকেও মাথা চুলকোতে হবে , তা নিয়ে ধন্দের কারণ নেই৷ যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করছেন অপূর্ব৷ আর সিপিএম , তৃণমূল দু'দলেরই প্রার্থীর বক্তব্য , জয়ের ব্যাপারে ত াঁরা '১০০ শতাংশ নিশ্চিত৷ 'জমিয়তের কাজকর্মের দৌলতে সিদ্দিকুল্লা বেশির ভাগ সময় কলকাতাতেই কাটান৷ কিন্ত্ত আদতে তিনি কাটোয়া কেন্দ্রের করজগ্রামের বাসিন্দা৷ সেখানে তাঁর বাবার মাদ্রাসা পরিচালনার কাজও করেছেন৷ কিন্ত্ত সিদ্দিকুল্লাকে ঠিক ঘরের লোক বলে মানতে যেন কোথাও একটা বাধছে তৃণমূল সমর্থকদের৷ এ ব্যাপারে শাজাহান চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি , মানছেন দলীয় কর্মী -সমর্থকেরাই৷

সিদ্দিকুল্লা নিজেও যে খুব স্বচ্ছন্দ, তেমনটা ভাবার কারণ নেই৷ এক রকম জাত খুইয়েই তৃণমূলের টিকিটে লড়তে নেমেছেন জমিয়তের এই নেতা৷ তৃণমূলের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে মঙ্গলকোট জয়ে তিনি নিজের আদি ঘাঁটি জমিয়তেরই শরণাপন্ন হয়েছেন৷ জেলায় জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক , সভাপতির সাহায্য নিচ্ছেন৷ নিজেই বলেন , 'এখানে জমিয়তের প্রায় দেড় লক্ষ সদস্য৷ তাঁদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাব বলে আশা করছি৷ ' ইতিহাস বলছে , ১৯৪৩ -এর বন্যায় মঙ্গলকোটের প্রভূত ক্ষতি হয়৷ আর সেই সময়ই সেখানে ঝান্ডা গেড়ে বসে কমিউনিস্ট পার্টি৷ পার্টি ভাগের পর থেকে এই সে দিন পর্যন্ত সিপিএমের শক্তঘাঁটি ছিল এই এলাকা৷ গতবারের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ঝড়েও গড় সামলে রেখেছিল 'লালপার্টি'৷ যদিও ১৮টা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টাই তৃণমূলের দখলে৷ আলমপুর পঞ্চায়েতই কেবল সিপিএমের৷

সেই আলমপুরের বরমপুর , গোশুম্বা , গাঁফুলিয়া গ্রামে সোমবার সকাল আটটা নাগাদ প্রচারে বেরিয়েছিলেন শাজাহান চৌধুরি৷ তখনই পারদ ৩৫ ডিগ্রির উপরে৷ বরমপুর ছেড়ে মিছিল গোশুম্বা আসছে শুনে পতাকা হাতে , ঢাক -ঢোল পিটিয়ে প্রস্ত্তত সিপিএমের দল৷ গ্রামে শাসক দলের একটি পতাকাও নেই৷ চারিদিকে শুধুই লাল৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শাজাহান বলেন , 'বিদ্যুতের দাম কোথায় গিয়েছে ! কৃষকেরা কী করে চাষ করবেন ? রাজ্যে আইন -শৃঙ্খলা নেই৷' এক সময় পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন বৃদ্ধ কংগ্রেস কর্মী মন্টু সাহা৷ বলেন , 'এই গ্রামে তৃণমূল , বিজেপি যে ক 'টি পতাকা লাগিয়েছিল , কে বা কারা খুলে নিয়েছে৷

কাদা লেপে দিয়েছে দেওয়াল লিখনে৷ ' সরাসরি না বললেও মন্টুর ইঙ্গিত যে সিপিএম কর্মীদের দিকেই , সেটা আঁচ করা কঠিন নয়৷ অথচ গ্রামের সিপিএম কর্মীদের অভিযোগ , পূর্ব মঙ্গলকোট এলাকায় যদিও বা তাঁরা প্রচার করতে পারছেন , পশ্চিমের নাকুড়িয়া , মঙ্গলকোট , নওয়াপাড়া ইত্যাদি জায়গায় যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে৷ তাঁদের অভিযোগ যে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় , সেটা বোঝা গেল মঙ্গলকোটে হাজির হয়ে৷ ভরদুপুর৷ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির আশপাশে৷ চারিদিকে সিদ্দিকুল্লার নামে দেওয়াল লিখন , মুখ্যমন্ত্রীর ছবি আর তৃণমূলের পতাকা৷ মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত অফিসের সামনে শাজাহান শেখের চায়ের দোকানে বসেছিলেন ছলিম শেখ , লালু শেখরা৷ বিরোধীরা কই ? উত্তর আসে , 'আছে৷ তলেতলে আছে৷ পতাকা টাঙিয়ে মইরবে না কি ?' আপনারা করেন কী ? 'কী করব ? নিরীহ লোকের এই গ্রামে কিসু করার জো নাই৷ আগে ন্যাতারা নিজেদের পকেট ভরলেও তা -ও গরিব মানুষরে ইকটু আদটু দ্যাখত৷ অ্যাখন তো সবটাই নিজেদের মধ্যে ,' উত্তর দেন ছলিম৷

সাংবাদিকের কাছে এত অকপট হতে দেখে একটু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বৃদ্ধ শাজাহান৷ লালু মিয়া বলে ওঠেন , 'ক্যান ? ভুলটা কী বইলল ও ? হক কতাটা বলে দিসে৷ ' সার , বীজ , বিদ্যুত্--- সবের দাম আকাশছোঁয়া৷ ৬০ কেজি চালে (এক বস্তা ) ১৫০ -২০০ টাকা ক্ষতি৷ তার উপরে ১০০ দিনের কাজ মেলে না৷ ওই গ্রামে ঢোকার আগে অসম্ভব খারাপ মাটির রাস্তা ধরে ধান্যরুখিতে গিয়েও চাষবাসের এই দুরবস্থার কথা জানা গিয়েছিল৷ সেই ধান্যরুখি , যেখানে সিপিএম নেতা ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়কে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে গ্রামে আগুন জ্বলেছিল৷ পরে সেখানে গিয়ে সিপিএম সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হয়ে ধুতি তুলে ধানখেত ভেঙে দৌড়েছিলেন মানস ভুঁইয়া৷ সেই ছবি দিয়েই জোটের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল৷

এখন ধান্যরুখি শান্ত৷ ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি ফলকের সামনে বসে সিপিএম নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন , 'এখানে এখনও আমরাই শক্তিশালী৷ ' যে ধানখেত ধরে মানসকে পালাতে হয়েছিল , তার সামনেই বাড়ি শরত্ পালের৷ তিনি আবার তৃণমূল করেন৷ শরতের কথায় , 'এটা সিপিএমেরই গ্রাম৷ আমরা ক 'ঘর তৃণমূল আছি৷ যাদের দলের নেতাকে দৌড় লাগাতে হয়েছিল , তারাই যদি সব ভুলে যায় , তো আমরা ধরে রেখে কী করব ?'ওই গ্রামে ঢোকার ঠিক মুখেই পড়েছিল শ্যামবাজার৷ ক্ষতি স্বীকার করেও সেখানকার মানুষ এক রকম অনন্যোপায় হয়ে কৃষিজীবী৷ গ্রামের সনাতন হাজরা , রূপাতন লাহাররা জানালেন , সেখানে শাসক দলই শক্তিশালী৷ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা অজিত পাঁজার গ্রাম মাজিগ্রামও একেবারেই নির্বিবাদী৷ সেখানে দু'দলেরই পতাকা , দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে৷ এমনকি , তৃণমূলের পার্টি অফিসও অজিত পাঁজার নামে৷

এমন বৈচিত্র্যময় একটি কেন্দ্রে সিদ্দিকুল্লার ভাগ্য অনেকখানিই অপূর্ব ও তাঁর দলবলের উপরে নির্ভর করছে বলে তৃণমূলের সমর্থকেরাই মনে করছেন৷ মঙ্গলকোটে যখন সিপিএম বাহিনী দাপিয়ে বেড়াত , সেই সময়ও নেতৃত্ব দিয়ে দল আগলে রেখেছেন অপূর্ব৷ অন্য দিকে , সিদ্দিকুল্লা নানা সময়ে মমতার সরকারের বিরোধিতায় কলকাতার রাস্তায় নেমেছেন , শহর অচল করেছেন৷ হতাশা গোপন করেই মঙ্গলকোট ২ নম্বর ব্লকের কইচর পার্টি অফিসে বসে অপূর্ব বলেন , 'পার্টি নিশ্চয়ই আরও ভালো প্রার্থী পেয়েছে , তাই তাঁকেই টিকিট দিয়েছে৷ আমাকেও তো দল ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে৷ '

শান্তির খোঁজে বাগদাদ ’, তবু ছায়া আতঙ্কের

$
0
0

তাপস প্রামাণিক ■ ডোমকল

এ যেন ভূতের মুখে রামনাম !কয়েক মাস আগেও তাঁদের নাম শুনলে ভয়ে শিউরে উঠতেন ডোমকলের মানুষ৷ কেউ খুনের আসামি৷ কারও বিরুদ্ধে রয়েছে ছিনতাই , অপহরণ , ডাকাতি , সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ৷ তাঁদের দাপটে প্রতিবারই ভোটের সময় রক্ত ঝরত ডোমকলে৷ জমত লাশের পাহাড়৷ জেলা পুলিশের হিসেব অনুযায়ী , ১৯৯৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক হানাহানিতে শুধু ডোমকলেই ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এ জন্য ডোমকলকে ইরাকের বাগদাদ শহরের সঙ্গে তুলনা করেন অনেকেই৷ সেই ডোমকলে ভোটের আগে অন্য ছবি৷ যাদের নিয়ে ভোটের সময় চিন্তায় থাকত পুলিস -প্রশাসন , তাঁরাই এখন শান্তির বাণী আওড়াচ্ছেন৷ বলছেন , ঢের হয়েছে , আর খুন নয়৷ ভোট যাতে শান্তিতে হয় , তার জন্য সবার কাছে কাতর আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা৷ ডোমকলের ঘোড়ামারা এলাকার এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কংগ্রেস নেতা খলিল মণ্ডল৷ তাঁর দাপটে বাম আমলেও সিপিএম এখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি৷

গত তিন দশকে এই অঞ্চলে প্রায় মোট ১১টি রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে৷ তার মধ্যে ছ 'টি খুনের মামলায় তিনি অভিযুক্ত৷ একাধিক বার জেলেও গিয়েছেন৷ সেই স্মৃতি এখন ভুলতে চান৷ মোমিনপুর মোড়ে চায়ের ঠেকে বসে ৭০ -এর কোঠায় পা রাখা খলিল বলেন , 'জীবনে অনেক রক্তপাত দেখেছি৷ আর এসব চাই না৷ যে যার রাজনীতি করুক , কিন্ত্ত খুনোখুনি বন্ধ হোক৷ ' ওই অঞ্চলেরই প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান তথা বর্তমানে তৃণমূল নেতা বাগবুল ইসলাম জানালেন , 'ঘোড়ামারা অঞ্চলে যত খুনের মামলা ছিল , প্রায় সবই মিটমাট হয়ে গিয়েছে৷ ১১টি মামলার মধ্যে মাত্র একটি মামলা ঝুলে রয়েছে৷ সেটাও মিটে যাবে৷ কারণ , আমরা আর অশান্তি চাই না৷ ' যদিও তাতে খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না সাধারণ ভোটাররা৷ ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা৷ সে কথায় শোনা গেল ন 'নম্বর গড়াইমারি অঞ্চলের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা অজয় দত্তের গলায়৷

তিনি বলেন , 'লোকসভা অথবা পঞ্চায়েত ---কোনও ভোটই দিতে পারিনি৷ আগে যারা কংগ্রেসের হয়ে গুন্ডামি করত , তারা এখন তৃণমূলে৷ বুথে সিআরপিএফ থাকলে কী হবে৷ ওরা তো বাড়ি থেকেই আমাদের বেরোতে দেবে না৷ 'রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বাম -কংগ্রেসের জোট হলেও ব্যতিক্রম মুর্শিদাবাদ৷ তার মধ্যে ডোমকলও রয়েছে৷ বাম -কংগ্রেস আলাদা ভাবে প্রার্থী দেওয়ায় এখানে এ বার ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে৷ কাস্তে হাতুড়ি চিহ্নে লড়ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান৷ কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুর রহমান৷ তৃণমূলের প্রার্থী সৌমিক হোসেন৷ ২০১১ সালের পরিবর্তনের ঝড়েও ডোমকলে বামদুর্গ অটুট ছিল আনিসুরের সৌজন্যে৷ তবে লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস৷ গত পঞ্চায়েত ভোটে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে জিতেছিল কংগ্রেস৷ তবে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসের অধীনে থাকা চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে নেয় শাসক দল৷ তবে পঞ্চায়েত সমিতি এখনও কংগ্রেসেরই দখলে৷ জেলা পরিষদও কংগ্রেসের৷ তাই কংগ্রেস কিছুটা হলেও এগিয়ে৷ কিন্ত্ত ভোটের আগে ডোমকলের চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই৷

প্রচারে সবাইকে পিছনে ফেলেছে শাসক দল৷ অধিকাংশ বাড়ির দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে সৌমিক হোসেনের নাম৷ বাজছে মা মাটি মানুষের থিম সং৷ রাস্তার মোড়ে মোড়ে তৃণমূলের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়৷ সেখানে সমর্থকদের ভিড়৷ তুলনায় কংগ্রেসের নির্বাচনী অফিসে ভিড় কম৷ কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিচ্ছে সিপিএম৷ দেওয়াল লিখনেও বামেরা খুব একটা পিছিয়ে নেই৷

ডোমকলের মতো জায়গায় কংগ্রেসের এই অবস্থা কেন ? কংগ্রেস প্রার্থীর সাফাই , 'আসলে আমাদের দেরি করে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে৷ তার আগেই তৃণমূল লোক ভাড়া করে দেওয়াল লিখে ফেলেছে৷ তাই আমাদের দেওয়াল লিখন কম চোখে পড়ছে৷ ' যদিও ডোমকলের আনাচে কানাচে অন্য গল্প৷ শোনা যাচ্ছে , আনিসুরকে কার্যত ওয়াকওভার দিয়েছেন অধীর চৌধুরী৷ বিরোধী দলগুলিও সেই অভিযোগ তুলছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মান্নান হোসেনের ব্যাখ্যা , মুর্শিদাবাদ জেলায় বাম আমলে কংগ্রেস কর্মীরা সবথেকে বেশি অত্যাচারিত হয়েছেন৷ বহু কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন৷ মান্নানের কথায় , 'যাঁরা মনপ্রাণ দিয়ে কংগ্রেস করেন , তাঁরা তৃণমূলকেই ভোট দেবেন৷ অধীরের অঙ্ক খাটবে না৷ দেখে নেবেন , মুর্শিদাবাদে এ বার তৃণমূল অবিশ্বাস্য ফল করবে৷ '

তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা নির্দল প্রার্থী হুমায়ুন কবীরও জানাচ্ছেন , 'ডোমকলেই সিপিএমের হাতে সবথেকে বেশি কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন৷ এই সব মানুষরা মরে গেলেও সিপিএম 'কে ভোট দেবেন না৷ তাই ডোমকলে যদি জোট হত , তাহলে কংগ্রেস কর্মী -সমর্থকদের একটা বড় অংশ রাগে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে দিত৷ তাই 'সেফটি ভালভ ' হিসাবে ডোমকলে একজন কংগ্রেস প্রার্থীকে দাঁড় করানো হয়েছে৷ ' অধীর চৌধুরী মনে করছেন , 'সিপিএমের ভোটেই আনিসুর জিতে বেরিয়ে আসবেন৷ সে জন্যই মুর্শিদাবাদে 'ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ' খেলছে কংগ্রেস৷ 'সে কথা যে একেবারে অমূলক নয় তা টের পাওয়া গেল খুন হওয়া কংগ্রেস পরিবারের সদস্যদের মেজাজ দেখেই৷ আনিসুর রহমান অবশ্য এসবে কান দিচ্ছেন না৷ তাঁর দাবি , 'এখানে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে৷ কেউ কাউকে জমি ছাড়ছে না৷ সিপিএম নিজেদের শক্তির জোরেই জিতবে৷ কারও সাহায্য লাগবে না৷ যারা একসময় গুন্ডামি করত , তারা সবাই এখন তৃণমূলে৷ তাতে আমাদের লাভই হয়েছে৷ মানুষ ভালো -মন্দ বিচার করবেন৷ '

লোপাট হয়েছে অনুদান , পৌঁছয়নি নকশাল গ্রামে

$
0
0

মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য ■ কৃষ্ণনগর

সূর্যের ক্রোধে ঝলসে যাওয়া মেঠোপথটার ধারে ছোট জটলাটা৷ ছেঁড়া কাপড়ে মাথা ঢেকে এসে দাঁড়িয়েছিলে গাঁয়ের মেয়ে -বৌরাও৷ আচমকাই ভিড়ের মধ্যে চড়ালেন এক মহিলা৷ পাকানো দড়ির মতো ঝাঁকিয়ে বলে উঠলেন 'গত বার ভোটের এইসিই বলেছিল , ভোট দে ঘর করি দিব । কই কইরল ? কাগজখানা নিয়ে অবধি হাইরে ফেইলছে৷ ' এর আগে যা বলার বলছিলেন গাঁয়ের ব্যাটা 'রাই৷ জহিনুল বিবির গলার কর্কশ শুনে কিছুটা থতমত খেলেন তাঁরা৷ আমতা করে বদু মল্লিক বলে উঠলেন , তা সবাইকে কি ঘর দিবে ? যে গরিব , শুধু তাকেই দিবে৷ ' শহুরে সাংবাদিকের সামনে বিধায়কের 'ইজ্জত ' বাঁচাতে কথাটা বলে তো ফেললেন , কিন্ত্ত , মনে মনে বদুও বিলক্ষণ জানেন , এই পাথরাদহ গ্রামে যদি জহিনুল বিবি গরিব না -হন , তা হলে কেউই গরিব নয়৷আর জহিনুল বিবি বা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কেন প্রকল্পে ঘর পাননি , সে কারণটাও অজানা নয় বদু মল্লিক এবং এ গাঁয়ের অন্য ঘরের মানুষদের৷ কারণ , এটা নকশালদের গ্রাম !

যে রাজ্যে জোড়াফুলের ঝড়ে প্রায় নিভু নিভু দশা খোদ সিপিএমেরই , সেখানে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কৃষ্ণনগর -দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের ন 'পাড়া কেন্দ্রের ২ গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে রেখেছে সিপিআইএমএল(লিবারেশন )৷ আর তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ভাবে বিরোধিতার জায়গা নেই, তাই এ গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে , সাংসদদের অনুদান৷ প্রকৃতিও যে পাথরাদহের দিকে বিশেষ করুনার নজর দিয়েছে , তেমনটা বলা যাবে না৷ফি বছরই জলঙ্গির জলে ডুবে যায় চাষখেত৷ কাঁচা বাড়িগুলো দেখিয়ে গাঁয়ের র্‌ চাষি আহার আলি বলে ওঠেন , 'এই বাড়িগুলো গত বন্যায় ভেইঙে চুরে গিয়েছিল৷ ফি বছর যায়৷ ফের বানাইতে হয়৷ ' ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ কিছুু পাননি ? বদলে যায় বৃদ্ধের মুখভঙ্গি৷ মুখে বলেন , 'নামমাত্র '৷ অথচ , খানিক আগেই ধুবুলিয়ার তৃণমূল পার্টি অফিসে কৃষ্ণনগর -দক্ষিণের বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস দাবি করলেন , 'এখানকার বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোয় ত্রাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি৷ '

জেকের আলি শেখের গৃহিণী আঁচলে মুখ ঢেকে বলে ওঠেন , 'যাঁরা খাজনা দিতে পেরেছে , শুধু তারাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছে৷ বন্যায় সব হারিয়ে খাজনাটা দিতাম কী করে ?'পাথরাদহ পেরিয়ে খানিক উত্তরের দিকে এগোতেই সোনাতলা মোড়৷ তীব্র গরমেও চায়ের দোকানে ঠেক জমিয়েছিলেন জনা কয়েক৷ অধিকাংশই খেত -ফেরতা , গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন সস্তার চায়ে৷ সঙ্গে ছিলেন মোবারক হোসেন মোল্লার মতো শিক্ষিত যুবাও৷ কেমন কাজ হয়েছে গত পাঁচ বছরে ? শুনে খানিক বিদ্রুপের হাসি হাসলেন অপূর্ব সাহা৷ 'দু'দশকেরও বেশি এই গ্রাম পঞ্চায়েতে লিবারেশন দলের আধিপত্য৷ বুঝলেন৷ কিন্ত্ত , গত তিন বছরের মতো এতটা ভুগতে হয়নি কখনও ,' মন্তব্য তাঁর৷ অপূর্ব সাহার কথা থামিয়ে রে রে করে উঠলেন মোবারক হোসেন , 'কী যে বলেন , কত উন্নয়ন হয়েছে৷ এলইডি লাইট, সবুজসাথীর সাইকেল , কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে স্কুলের মেয়েরা৷ আর কত উন্নয়ন হবে ?'

সত্যিই , সরকারের এত সব প্রকল্পের বিন্দুবিসর্গও আসেনি এ গাঁয়ে ? 'এসেছে তো ! উঠতি তৃণমূল কর্মীদের ঘরে এসেছে৷ মোবারকের ঘরে এলইডি লাইট লেগেছে৷ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজও পেয়েছে৷ টিএমসি করে বলে সব পেয়েছে ,' বলে ওঠেন অপূর্ব৷ কথাটা যে মিথ্যে নয় , তার প্রমাণ খোদ দোকানির মেয়ে সুষমা গড়াই -ই৷ স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে শান্ত স্বভাবের মেধাবী মেয়েটা৷ টেস্টেই তার ঝুলিতে ছিল ৪০০ -র উপর নম্বর৷ মাধ্যমিকের পর মেয়েটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও তা কতটা হয়ে উঠবে , জানেন না সুষমার মা সরস্বতী৷ করুণ মুখে বলেন , 'কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করেছিলাম৷ টাকাটা পাইনি৷ ওটা পেলে , মেয়েটার পড়াশোনাটা হত৷ দেখছেনই তো , এই একচিলতে ভাঙা দোকান৷

এর উপর তিন -তিনটে মেয়ে৷ কী ভাবে যে ওর স্বপ্ন পূরণ করব , জানি না৷ 'কার পক্ষে রায় দেবেন ? উত্তর দেয় না দোকানের জটলা৷ 'এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি হয়ে এক প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন বটে , কিন্ত্ত এবার অধিকাংশই জোটের পক্ষে মত দেবে ', দাবি ন 'পাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছবি বিশ্বাসের৷ ন 'পাড়ার ক্ষোভের আংশিক প্রতিফলনও এই বিধানসভার বাকি ১১টা গ্রাম পঞ্চায়েতে হলে বিপাকে পড়বেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস৷ তা না হলেও যে বিশেষ স্বস্তিতে তিনি আছেন তেমনটা নয়৷ এ বার তাঁর বিরুদ্ধে জোটপ্রার্থী বামফ্রন্টের মেঘলাল শেখ৷ ২০১৩ পর্যন্ত যিনি ছিলেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি৷ ইতিমধ্যেই তাঁর হয়ে প্রবল ভাবে প্রচারে নেমে পড়েছে কংগ্রেস৷ কুণ্ঠা কাটিয়ে তাঁদের সবটুকু ভোটও যদি বামেদের বাক্সে পড়ে , তা হলেই বেকায়দায় পড়বেন বিধায়ক৷

শাসক দলের ভোট কাটার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে বিজেপিও৷ এই বিধানসভার ১২টা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩টেরই দখলে তাঁরা৷ যদিও , এ সবকে প্রকাশ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ উজ্জ্বল বিশ্বাস৷ তাঁর দাবি , 'ওদের সঙ্গে কেউ নেই৷ বিজেপি আর সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশই আমাদের তরফে চলে এসেছে৷ গতবারের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভোটে জিতব৷ 'উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি ঠিক প্রমাণিত হয় , নাকি জোটের গুঁতোয় উল্টে পড়ে বিধায়কের গদি , এখন সেটাই দেখার৷

বিরোধী জোট নয়, অন্দরেই মাথাব্যথা মালার

$
0
0

ঝিলম করঞ্জাই

সকাল সাড়ে আটটা৷ একজন নেত্রী তখন দলবল নিয়ে চরকি কাটছিলেন ঘিঞ্জি অলিগলিতে৷ যাকেই সামনে দেখছেন, আবেদন করছিলেন ভয় না পেতে৷ ভোটের দিন তাড়াতাড়ি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে৷ কেউ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, কেউ নির্বাক হয়ে শুনছিলেন, কেউ আবার হাসি মুখে সম্মতি জানাচ্ছিলেন৷ প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, একটুও বিচলিত হচ্ছিলেন না ওই নেত্রী৷ আর এক নেত্রী তখন ঠাকুর ঘরে বসে৷ মঙ্গলবার নীলষষ্ঠী৷ পুজো শেষ করে খাবার টেবিলেই স্বামীর সঙ্গে দ্রুত সেরে ফেললেন দিনের প্রথম বৈঠকটি৷
নির্বাচন কমিশনের দন্তরে প্রচারের খরচের খতিয়ান জমা দিতে হবে৷ ওই নেত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট তাঁর স্বামীই৷ চা শেষ হওয়ার আগেই একজন যুবক এসে জানিয়ে গেলেন , নীচের অফিসে অনেক কর্মী -সমর্থক অপেক্ষা করছেন৷ উত্তরে নেত্রী বললেন, 'এই আসছি৷ সবাইকে চা দিয়েছ তো?' প্রথমজন কনীনিকা ঘোষ৷ বাম-কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী৷ দ্বিতীয়জন তৃণমূল প্রার্থী মালা সাহা৷ উত্তর কলকাতার কাশীপুর -বেলগাছিয়া কেন্দ্রে যুযুধান দুই পক্ষ৷ ভোটের আর মাত্র দিন দশেক বাকি৷ একদা বামেদের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় দাপট ছিল কংগ্রেসেরও৷ সে সব অতীত হয়ে এই এলাকা এখন তৃণমূলের গড়৷ হারানো জমি ফিরে পেতে একদিকে মরিয়া চেষ্টায় কনীনিকা৷

অন্যদিকে, তৃণমূলের প্রার্থীর শরীরী ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে অদৃশ্য আত্মবিশ্বাস৷ দম্ভ নেই , রয়েছে ফাইনাল পরীক্ষার আগে প্রস্ত্ততি শেষ করা পড়ুয়ার ভাব৷ তবে , দু'পক্ষেরই পথের কাঁটা নিজেদের শিবিরের লোকজন এবং তাদের কাজকর্ম৷ তৃণমূল শিবিরকে চিন্তায় রেখেছে কাশীপুরের বিবদমান দুই সমর্থক শিবিরের প্রকাশ্য হানাহানি৷ নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় সকলে গ্রেন্তার হলেও , পরে প্রত্যেকেই জামিন পেয়ে যান৷ 'গ্যাং ওয়ার'এর অংশিদাররা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে তৃণমূলের প্রচারে অংশগ্রহণ করছেন৷ কেউ জানে না কতক্ষণ সংযত থাকবেন এঁরা৷ কিন্ত্ত এদের ঝেড়েও ফেলতে পারছে না দল৷ মালা বলছেন , 'ওঁরা প্রত্যেকেই দলের সমর্থক৷ কেউ যদি দলের সমর্থন করে প্রচার মিছিলে অংশগ্রহণ তা হলে কি করে থামাব বলুন?'

আবার জোটের কাঁটা রাজদেও গোয়ালা-সহ বেশ কিছু বাম নেতার দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের ইতিহাস৷ এলাকার বহু মানুষ এখনও এই বাম নেতাদের দুর্বিনীত ব্যবহার, দুর্নীতি ও পীড়নের কথা ভোলেননি৷ প্রচারে এদের মুখ দেখে অনেক বাসিন্দাই চরম বিরক্ত৷ জোটের বিরুদ্ধেও অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে এলাকার বহু আদি কংগ্রেসের সমর্থকের৷ বাম জমানায় দীর্ঘদিন অত্যাচারিত হওয়ার পর ফের সেই দলকে ভোট দেওয়া মেনে নিতে পারছে না অনেকেই৷ বিটি রোডে সিপিএম জোনাল পার্টি অফিসে রাজদেও গোয়ালা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন , 'অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি৷ আমরা ভুল স্বীকার করেছি৷ মানুষ মাত্রেই ভুল হয়৷'

২০১১-তেও এই দু'জন ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী৷ প্রায় ৪০ হাজার ভোটে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য বিধায়ক হন মালা৷ চলতি বিধানসভা নির্বাচনে বাম শিবিরের পালে হাওয়া লেগেছে৷ শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও, শেষ ল্যাপে বাড়তি দূরত্ব অতিক্রম করার উত্সাহ চোখে পড়ার মতো৷ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াইয়ে নেমেছেন কনীনিকা৷ সকাল-বিকেল দফায় দফায় ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার সারছেন৷ মানুষের কাছে বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে ভোটের মাধ্যমে জবাব দিতে বলছেন৷ কনীনিকা বললেন, 'নারী নির্যাতনে এ রাজ্য শীর্ষে৷ দুর্নীতিতে শীর্ষে৷ তরুণ প্রজন্মের চাকরি নেই৷'

তৃতীয় বার জয়ে তৃণমূল শিবির আত্মবিশ্বাসী হলেও মুখে সে কথা উচ্চারণ করতে নারাজ মনোবিদ মালা৷ স্বামী তরুণ সাহা রাজনীতিতে অজিত পাঁজার ছাত্র৷ তাঁর কাছ থেকে যোগ্য ছাত্রীর মতো রন্ত করেছেন নির্বাচনী যুদ্ধ জয়ের নানান কৌশল৷ সঙ্গে শান দিয়েছেন মন জয়ের নানা বিদ্যায়৷ জনপ্রতিনিধি হলেও , আদতে যে সাইকোলজিস্ট৷ এলাকায় জমা জলের সমস্যা এখন অতীত৷ পানীয় জল সরবরাহ বেড়েছে৷ নতুন নতুন আবাসন নির্মাণ হলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নেই৷ স্থানীয় বেকার যুবকরা নির্মাণ শিল্পে সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কোথাও কোনও জোরাজুরি নেই৷ পুরো বিধানসভা কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া , প্রায় সর্বত্রই অপেক্ষাকৃত শান্তিতে রয়েছেন বলেই মত অঞ্চলবাসীর৷ মালার কথায় , 'এই এলাকায় গত দু'দফায় যে উন্নয়নের ধারা এনেছি তা বজায় রাখাটাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ৷'

ফিরবো তো ? উদ্বেগ নিয়ে চা বাগানে প্রশ্ন মমতার

$
0
0

জয়া চক্রবর্তী ■ আলিপুরদুয়ার সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ জলপাইগুড়ি

সভা তখনও শুরু হয়নি৷ আলিপুরদুয়ারে পৌঁছেই মঞ্চের মাঝখানে জেলার চার দলীয় প্রার্থীকে ডেকে নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নিজের চোখে -মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট থাকলেও বলে উঠলেন , 'তোদের এতটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কী মোহন , কালচিনির কী হবে ? সৌরভ , তুই এত ছটফট করছিস কেন ? জেমস সামনে আসুন , অনিলদা দূরে কেন ?'তৃণমূল নেত্রী সম্ভবত খেয়াল করেননি , সামনে রাখা মাইক্রোফোনে তাঁর কথা স্পষ্ট ধরা পড়ছে৷ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই মাইকের মুখটা ঘুরিয়ে দিলেন কুমারগ্রামের প্রার্থী জেমস কুজুর৷ তার পরেও অবশ্য দেখা গেল , প্রত্যেক প্রার্থীকে বেশ খানিক ক্ষণ ধরে টিপস দিচ্ছেন তিনি৷ বোঝাই গেল , নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ শুধু তাই নয় , আগের বেশ কিছু সভার কায়দাতেই ভোট দিতে জনগণকে প্রায় মিনতি করেছেন মমতা৷

চা -বাগানের শ্রমিকদের আবেগ উস্কে দিতে বলেছেন , 'কি , আমাকে ভোট দেবেন তো ? আমি ফিরব তো ?' তবে ঘটনা হল , আলিপুরদুয়ারের জনসভায় চা -শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডের সভায় প্রথমেই মমতা একরাশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আলিপুরদুয়ারের বিদায়ী বিধায়ক , প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায়ের প্রতি৷ বলেন , 'মিঠুদা , তাঁকে আপনারা প্রত্যেকেই চেনেন৷ বাম -কংগ্রেস জোটের বিরোধিতা করে তিনি এবার নির্বাচনে না -দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ' তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই৷ প্রতিবাদীদের আমি চিরকাল কুর্নিশ করি৷ এ ছাড়া আরও অনেকে আমার দলকে নানা ভাবে সাহায্য করছেন৷ তাঁদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ৷ ' কাদের কথা বলতে চেয়েছেন মমতা ? প্রশ্ন উঠে যায় , এঁদের মধ্যে কি রয়েছেন আরএসপি প্রার্থী নির্মল দাসও ? কারণ , স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের প্রবল চাপের মুখেও তো প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেননি প্রাক্তন এই বিধায়ক ? তাঁর অনড় মনোভাবের জন্যই আলিপুরদুয়ারে সার্বিক ঐক্য সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম -কংগ্রেস৷ এর মধ্যে মমতার এই মন্তব্য যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ৷

এর পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির চা -বলয়ে গিয়ে বিরোধীদের একযোগে আক্রমণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি মমতা৷ সরাসরি নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে৷ বলেছেন , 'সেন্ট্রাল মে সব ঠগবাজ হ্যায়৷ ইয়ে এক ঠগও কা মহল্লা বন গিয়া হ্যায়৷ দিল্লিমে সরকার ঠিক সে চালানে নেহি সকতা হ্যায়৷ উপরসে ইধারমে আকে খুদ কো চায়েওয়ালা বোলকে পরিচয় দেতা হ্যায়৷ ইয়ে এক বড়া ধোঁকা হ্যায়৷ ' তাঁর অভিযোগ , কেউ চা বাগানের জন্য কিছু করেনি৷ মমতার কথায় , 'কেন্দ্রীয় সরকার ডানকানের সাতটি চা বাগান অধিগ্রহণ করলেও কী হল ? সব তো ঝুলে রয়েছে৷ আমরা আপনাদের জন্য যত কাজ করেছি , বিপদের সময় যে ভাবে আমরা চা -শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি , তা অস্বীকার করতে পারবেন আপনারা ?

এর আগে কেউ কি আপনাদের জন্য এই ভাবে চিন্তা করেছে ? পেটের ভাত দিয়েছি৷ পানীয় জল , আলোর ব্যবস্থা করেছি৷ পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছি , সাইকেল দিয়েছি৷ এর পর আর কী চাই ?' এখানেই ভোট দেওয়ার জন্য মমতার মিনতি , 'আপনারা আমাকে আশীর্বাদ করুন৷ জোড়া ফুল চিহ্নে আগামী ১৭ এপ্রিল দু'হাত ভরে ভোট দিন৷ যাতে আমি আবার ফিরে আসতে পারি৷ কি দেবেন তো ? আমি ফিরব তো ?' শুধু তাই নয় , তাঁর আবদার , 'আমি আলিপুরদুয়ারের মানুষকে জেলা উপহার দিয়েছি৷ ২৫ জুন এই জেলার জন্মদিন৷ সে দিন আপনারা আমাকে উত্সবে মাতার সুযোগ দেবেন তো ?' জনসভায় উপস্থিত হাজার সাতেক মানুষের মধ্যে থেকে অবশ্য ততটা স্বতঃস্ফর্ত সাড়া মেলেনি৷ কারণ , সভায় চা -শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ছিল যথেষ্ট৷ জলপাইগুড়ির সভায় আবার নরেন্দ্র মোদীকে 'ভোটপাখি ' বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন , 'সাহস থাকা ভালো৷ দুঃসাহস ভালো নয়৷ ভোট এলেই পাহাড়ে গিয়ে উসকে দেয় বিজেপি৷ আমি বেঁচে থাকতে বাংলাকে ভাগ করতে দেব না৷ '




সূর্যর নারদ -খোঁচা শুনে পাল্টা হুঙ্কার অনুব্রতের

$
0
0

হেমাভ সেনগুপ্ত ■ সিউড়ি

তৃতীয় দফার ভোটের আগে বীরভূমে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র৷ বললেন , 'আপনি কোন অফিসারকে কী বলছেন , কী ষড়যন্ত্র , কী চক্রান্ত করছেন , সবই আমরা জানতে পারছি৷ ' মঙ্গলবার সিউড়ির জেলা স্কুলের মাঠে নারায়ণগড়ের সিপিএম প্রার্থীর দাবি , মমতার প্রশাসনের অফিসাররাও জেনে গিয়েছেন , ১৯ মে ভোটের ফল বেরোনোর পরে তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন না৷

সূর্যকান্তর কথায় , 'মুশকিল এই যে, উনি যাকে যে কথা বলছেন , সব আমরা জানতে পারছি৷ মুখ্যমন্ত্রী তো কানে ফিসফিস করে বলছেন৷ কিন্ত্ত সেগুলো যে আমাদের কাছে আসছে বুঝতে পারছেন না৷ আপনি যাকে বলছেন , সে, তারাই খবর দিচ্ছে আমাদের৷ কারণ কি জানেন ? তারা বুঝে গিয়েছে , এই ভোটের ফলাফলের পর উনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না৷ ' এ বারের ভোটে তৃণমূলের নৌকাডুবি হবে বলে দাবি করে মমতাকে সূর্যকান্তর কটাক্ষ , 'ধেড়ে ইঁদুর যদি বুঝতে পারে নৌকো ডুবে যাবে , তা হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে৷ এক পাটাতন থেকে অন্য পাটাতনে আশ্রয় নেয়৷ ভাববেন না আপনি একা চালাক , আর মানুষ সব বোকা , অন্ধ৷ ' সারদা থেকে নারদা --- সব বিষয়েই তৃণমূলকে কটাক্ষ করেন তিনি৷

মমতার পাশাপাশি এ দিনের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও একহাত নেন সূর্য৷ বলেন , '৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতিওয়ালা প্রধানমন্ত্রী দাদাভাই , ২০১৪ সালের নির্বাচনে কত বড় বড় কথা বলেছিলেন৷ কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারেননি , খালি বিদেশ যাচ্ছেন৷ ' একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ , প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী যাঁরা হচ্ছেন , তাঁরা এই সুযোগে কালো টাকা বিদেশের ব্যাঙ্কে রেখে আসছে৷ ' যদিও এ ব্যাপারে বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন , 'যে দলটাকে লোকসভায় মাইক্রোস্কোপে দেখতে হয় , যারা ভোট -বাজারে মসনদের লড়াইয়ে জিততে মিথ্যার আশ্রয় নেয় , তাদের কাছে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে সমস্ত নেতা -নেত্রীরা বিদেশে যান , তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ করার যোগ্যতা নেই সূর্যকান্তবাবুর৷ '

সারদা তদন্ত নিয়েও তোপ দেগেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক৷ তাঁর বক্তব্য , সিপিআই কানের পাশে মশার মতো ভনভন করছে আর খুচরো কিছু লোককে ধরছে৷ এগুলো না করে কান টানতে হবে , তবেই মাথা আসবে৷ নারদ প্রসঙ্গে সূর্যর মন্তব্য , 'মার্কামারা চোরেরা কী বলে দেখুন৷ চোর চুরির বিচার করবে৷ বেড়াল মাছ পাহারা দেবে !' যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাল্টা কটাক্ষ , 'নিজের কেন্দ্রে হেরে যাবে , তাই সূর্য পাগলের প্রলাপ বকছে৷ নারদ কোনও বিষয়ই নয়৷ তৃণমূলকে ওর কুকথায় জব্দ করা যাবে না৷ ওর মুখ দেখলে ভাত জুটবে না আর দু'দিন পরে৷ '

‘ঘুষ দস্তিদার ’ নন , কর্মিসভায় বিস্ফোরক সব্যসাচী

$
0
0

প্রিন্স রায়

সিন্ডিকেট নিয়ে তাঁর খুল্লমখুল্লা সমর্থনের ভিডিও ফুটেজ কয়েকদিন আগেই রাজ্য -রাজনীতি থেকে জাতীয় সংবাদমাধ্যম --- সর্বত্র তোলপাড় ফেলেছিল৷ টাইমস নাও -এর গোপন ক্যামেরার সামনে বিধাননগরের মেয়র স্বীকার করে নিয়েছিলেন , তাঁর ভোটের কাজে অর্থ ও পেশিশক্তির জোগান দিচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই৷ ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নারদ স্টিং অপারেশনে দলের নেতাদের যোগসাজশ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ফের বির্তক বাড়ালেন বিধাননগরের মেয়র তথা রাজারহাট -নিউ টাউনের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত৷ নারদ স্টিংয়ে দলেরই সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করলেন তিনি৷ সব্যসাচীর বাক্যবাণ থেকে ছাড় পেলেন না রাজারহাটের আরও এক তৃণমূল নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়ও৷

সরাসরি কারও নাম না করে সোমবার রাজারহাটের সুলঙ্গরি গ্রামে আয়োজিত কর্মিসভায় সব্যসাচীর কটাক্ষ , 'স্টিংই বলুন আর রিং৷ অন্ধকার ঘরে বসে আমায় কিছু করতে হয় না৷ ফলে আমি ভয়ও পাই না৷ এখন দেখছি , কারও নাম হয়ে যাচ্ছে ঘুষ দস্তিদার৷ ' একইসঙ্গে নিউ টাউনের তৃণমূল প্রার্থীর দাবি , 'ঘুষ খেতে আমাকে কোনওদিনও দেখবেন না৷ যেদিন দেখবেন , সেদিন আপনাদের মাঝে আমি আর আসব না৷ ' সরাসরি কারও নাম না করলেও সব্যসাচীর স্পষ্ট ইঙ্গিত দলেরই বারাসতের সাংসদ তথা নারদ স্টিং অপারেশনে নাম জড়িয়ে পড়া কাকলি ঘোষ দস্তিদারের দিকে৷ সাংসদের অনুগামীদেরও অভিযোগ , তাঁদের 'দিদি 'কে কালিমালিন্ত করার জন্যই এ কথা বলেছেন সব্যসাচী৷ খোদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এসএমএসে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন , 'এত নিম্নমানের বক্তব্যের জবাব দেব না৷

তা ছাড়া বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্যও করব না৷ 'সব্যসাচীর এহেন মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , 'সব্যসাচী কর্পোরেশন চালাতে পারে ঠিকই৷ তবে দল যাতে ঐক্যবদ্ধ চলে তা সবসময় দেখতে হবে৷ আমি বিষয়টি নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলব৷ ' যাকে ঘিরে এত বির্তক , সেই সব্যসাচীর সঙ্গে যদিও এ দিন বারেবারে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন , 'প্রচারে ব্যস্ত রয়েছি৷ যা বলার পরে বলব৷ 'কিন্ত্ত এ ভাবে সরাসরি কাকলিকে কেন ‌িঁবধলেন সব্যসাচী ? তা -ও সেই সময় , যখন নারদ স্টিং নিয়ে তাঁর দল তৃণমূলই যথেষ্ট বেকায়দায় আছে ?

নিজের সিন্ডিকেট -ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সব্যসাচী নিজেও৷ এ ব্যাপারে কাকলির অনুগামীদের ব্যাখ্যা , দীর্ঘদিন ধরেই ডাম্পি মন্ডল , ভজাই সর্দারদের কাজে লাগিয়ে রাজারহাট -নিউটাউন এলাকায় সিন্ডিকেট সাম্রাজ্য দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিধাননগরের মেয়র৷ তবে ওই পথে তাঁর একমাত্র কাঁটা সাংসদ কাকলি ও তাঁর অনুগামীরা৷ ওই ইমারতি সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা কেন্দ্র করেই নেতা -নেত্রীর দ্বন্দ্ব চলে আসছে৷ সেই যুদ্ধ জিততেই নারদা স্টিংয়ের ভিডিয়োকে ভোটবাজারে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন সব্যসাচী৷ কারণ ম্যাথু স্যামুয়েলসের প্রকাশ করা নারদ স্টিং ভিডিয়োর নির্বাচিত অংশে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে টাকার বান্ডিল নিতে দেখা গিয়েছে৷

শুধু নারদ নিয়ে কাকলিকে বিঁধেই থামেননি সব্যসাচী৷ পুরসভা নির্বাচনের আগে জার্সি বদল করে সিপিএম থেকে ঘাসফুলে আসা তাপস চট্টোপাধ্যায়কেও কর্মিসভা থেকে তোপ দেগেছেন সব্যসাচী৷ বলেছেন , 'নারায়ণপুর থেকে একজন আমাদের দলে এসেছেন৷ ভোটবাজারে যিনি ঘরে বসে আছেন৷ ভোট মিটলে উনি আরও অকেজো হয়ে যাবেন৷ ' একসময়ের প্রতিপক্ষ তথা বর্তমানে দলীয় সতীর্থের এহেন মন্তব্যের জবাবে তাপস অবশ্য বলছেন , 'তৃণমূল করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে৷ এই ধরনের বক্তব্য নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না৷ 'দলেরই দুই নেতাকে কর্মিসভা থেকে একহাত নেওয়ার পাশাপাশি বাম আমলে রাজারহাট -গোপালপুর পুরসভায় কাজে যোগ দেওয়া ৮০০ জন কর্মীকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন বিধাননগরের মেয়র৷

সব্যসাচীর মন্তব্য , 'যারা সকালে তৃণমূল আর রাতে সিপিএম করছেন তাদের বলে রাখি , ১৯ মে আমার জয় সুনিশ্চিত৷ তবে আপনাদের চাকরি সুনিশ্চিত কি না বলতে পারছি না৷ ' এখানেই থেমে না থেকে বিধায়ক পদপ্রার্থীর আরও হুমকি , 'যদি নিজেদের না শোধরান , তা হলে চাকরি খেয়ে নেব৷ ' দলীয় সতীর্থ ও কর্মীদের হুমকি দেওয়া ছাড়াও নিজের গলাতেই ওই মঞ্চ থেকেই নিজেকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন সব্যসাচী৷ ওই সভা থেকে বিধাননগরের মেয়রের দাবি , 'টাকার বিনিময়ে আমি চাকরি দিই না , যা করি সামনে থেকে করি৷ অন্ধকার ঘরে বসে ঘুষ আমাকে নিতে হয় না৷ তাই আমার কোনও ভয় নেই৷ 'স্টিংই বলুন আর রিং৷ অন্ধকার ঘরে বসে আমায় কিছু করতে হয় না৷ ফলে আমি ভয়ও পাই না৷ এখন দেখছি , কারও নাম হয়ে যাচ্ছে ঘুষ দস্তিদার৷ ঘুষ খেতে আমাকে কোনওদিনও দেখবেন না৷ যেদিন দেখবেন , সেদিন আপনাদের মাঝে আমি আর আসব না৷ টাকার বিনিময়ে আমি চাকরি দিই না , যা করি সামনে থেকে করি৷ অন্ধকার ঘরে বসে ঘুষ আমাকে নিতে হয় না৷ তাই আমার কোনও ভয় নেই

অন্য জায়গা থেকে বাঘ এনে জঙ্গল ভরাতে চায় কাম্বোডিয়া

$
0
0

নম পেন: কাম্বোডিয়ার জঙ্গল থেকে হারিয়ে গিয়েছে হলুদ-কালো ডোরা৷ ওদের আবার ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল সে দেশের সরকার৷ আর সে বিষয়ে তাদের পথ দেখাবে ভারত৷

সম্প্রতি কাম্বোডিয়া সরকার, ডব্লিউ ডব্লিউ এফ এবং ওয়াইল্ডলাইফ অ্যালায়েন্স নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে কম্বোডিয়া থেকে বাঘের বিলুন্তির কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে৷ ওই সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়, 'এই মুহূর্তে কম্বোডিয়ায় কোনও প্রজননকারী বাঘের অস্তিত্ব নেই৷ তাই কার্যক্ষেত্রে তা বিলুপ্ত বলে ধরে নেওয়া হল৷'

প্রসঙ্গত, কাম্বোডিয়ার জঙ্গলে এক সময় কুড়ি থেকে পঞ্চাশটি বাঘ ছিল৷ কিন্ত্ত চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সংখ্যা কমে আসছিল৷ শেষ বার সেখানে বাঘের দেখা মিলেছিল ২০০৭ সালে, মন্ডুলকিরির জঙ্গলে রাখা ক্যামেরা ট্র্যাপের (এমন এক ধরনের লুকোনো ক্যামেরা যা দূর থেকে পশুপাখিদের নড়াচড়া বুঝতে পারে এবং তার ফলে চালু হয়ে যায়) সাহায্যে৷ বাঘ বিলুপ্ত ধরে নিলেও তাকে ফেরাতে আগ্রহী কাম্বোডিয়া সরকার৷

সে জন্য ভারত, মালয়েশিয়া , থাইল্যান্ডের মতো এশিয়ার অন্য দেশগুলির কাছে সাহায্য চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কম্বোডিয়ার বন্যপ্রাণ আধিকারিক কেও ওমালিস৷ সাত থেকে আটটি বাঘ সে দেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ ডব্লিউ ডব্লিউ এফ -এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে , এটাই হবে বিশ্বে অন্তর্দেশীয় বাঘ পুনঃপ্রবর্তনের প্রথম নজির৷ এর আগে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে ভারতের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে বাঘ নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেই সব সংরক্ষণ প্রকল্পে যে পদ্ধতি ও ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়েছিল , কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও সেটাই ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে৷ গত ২৩ মার্চ কম্বোডিয়া সরকার এই পরিকল্পনা অনুমোদনও করে দিয়েছে৷

তবে বাঘ আনার কাজটা এখনই করা যাবে না৷ কারণ , নতুন করে বাঘ নিয়ে আসার আগে কম্বোডিয়া সরকারকে কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে৷ যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চোরাশিকার ঠেকানো৷ তা ছাড়া বাঘ এলে যাতে তাদের খাবারের অভাব না হয় , সে জন্য অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে৷ এই সব ধাপগুলি পেরোতে প্রায় দু'বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে৷ ফলে ২০১৮ সালের আগে হয়তো কম্বোডিয়ায় বাঘ নিয়ে আসা সম্ভব হবে না৷ কিন্ত্ত ডব্লিউ ডব্লিউ এফ -কম্বোডিয়ার ডিরেক্টর ছিট সাম আথের বক্তব্য , বাঘ কাম্বোডিয়ার ঐতিহ্যের অংশ৷ তাই কিছুটা দেরি হলেও তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সব রকম ভাবে সচেষ্ট হবেন তাঁরা৷ বাঘ ফেরানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেই 'দাতা ' দেশগুলির কাছ থেকে বাঘ নিয়ে আসা হবে৷ এই পুরো পরিকল্পনা কার্যকর করতে আনুমানিক দুই থেকে পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে৷

অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের পেনশন বাড়ছে

$
0
0

এই সময়: ২০০৬ সালের আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের পেনশন বাড়ছে৷ একই সঙ্গে তাঁরা এরিয়ার বাবদ একটা মোটা অঙ্কের অর্থও পাবেন৷ পাশাপাশি, ৩৩ বছর টানা চাকরি না করলে অবসর নেওয়ার পর সরকারি কর্মীরা পুরো পেনশন পাবেন না বলে যে নির্দেশিকা ছিল, ২০০৬-এর আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হবে না বলে জানানো হয়েছে৷

কেন্দ্রীয় পেনশনস্ ও পেনশনার্স কল্যাণ দপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী , ২০০৬ -এর আগে অবসর নেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের পেনশন কোনও মতেই পে ব্যান্ড এবং গ্রেড পে যুক্ত করে যা দাঁড়ায় , তার থেকে ৫০ শতাংশের কম হবে না৷ এই সিদ্ধান্ত সেই সমস্ত অবসরপ্রান্ত কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যাঁরা টানা ৩৩ বছরের কম চাকরি করেছেন৷ নিয়ম অনুযায়ী , কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করলে একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী অবসর নেওয়ার পর পেনশন পাওয়ার যোগ্য৷ ২০০৬ -এর ১ জানুয়ারি থেকে পেনশনের অঙ্ক নির্ধারণের পন্থাও পরিবর্তিত করা হয়েছে৷

একজন কর্মচারীর চাকরিজীবনের শেষ দশ মাসের গড় বেসিক অথবা শেষ বেসিক --- এর মধ্যে যে অঙ্ক বেশি পেনশন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেটাই ধরা হয়ে থাকে৷ আর ২০০৬ -এর আগে ৩৩ বছরের কম চাকরি করলে চাকরিজীবনের অনুপাতে পেনশনের অর্থাঙ্ক নির্ধারিত হত৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই নিয়মের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়৷ সরকারি এক নির্দেশে বলা হয়েছে , ২০০৬ সালের আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিদের পেনশনের অঙ্ক সংশোধিত হওয়ার জন্য উক্ত পেনশনভোগীরা ২০০৬ -এর ১ জানুয়ারি থেকে এরিয়ার পাবেন৷ সমস্ত মন্ত্রককে অবিলম্বে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷

‘গরমের ’ছুটি ঘিরে স্কুলে বিভ্রান্তি

$
0
0

এই সময় : প্রবল তাপপ্রবাহে রাজ্যের সরকারি , সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রান্ত এবং বেসরকারি স্কুলে ছুটি নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে৷ স্কুলশিক্ষা দন্তরের নির্দেশ অমান্য করেই কিছু স্কুলে পঠনপাঠন চলছে৷ তার মধ্যে বেশির ভাগই ডিএ গেটিং স্কুল৷ আবার বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের ছুটি দিলেও শিক্ষক -শিক্ষিকাদের নিয়মিত আসতে হচ্ছে৷ যা নিয়ে তাঁদের একটা বড় অংশই ক্ষুব্ধ৷ কারণ স্কুলে গিয়ে কোনও ক্লাস না করেই তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে৷ বিকাশ ভবনের কর্তাদের একাংশের মতে , এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়৷ তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদি হলে অনেক শিক্ষাদিবস নষ্ট হবে৷ স্কুলশিক্ষা দন্তর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞন্তিতে বলা হয়েছে , নয়া বিজ্ঞন্তি না দেওয়া পর্যন্ত এই ক্লাস বন্ধ থাকবে৷ সে ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষকদের বিশেষ ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ করতে গেলে তা না মানার সম্ভাবনাই প্রবল৷

এক পর্ষদকর্তা জানান , আবহাওয়া দন্তর এখনই তাপপ্রবাহ কমার কোনও আশ্বাস দেয়নি৷ তাই ছুটি আরও বাড়তে পারে৷ তেমন হলে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে ছাত্রছাত্রীরাই৷ এ দিকে , স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায় এই প্রথম প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য সিবিএসই -র চেয়ারম্যান ও কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশনস -এর (সিআইএসসিই ) প্রেসিডেন্ট ও সিইও -র কাছে ক্লাস সাসপেন্ডের আর্জি জানিয়েছেন৷ সেই কারণে স্কুলশিক্ষা দন্তরের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞন্তিও দেওয়া হয়েছে৷ অ্যাসোসিয়েশনস অব আইসিএসই স্কুলস -এর (পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর -পূর্বাঞ্চল ) সচিব নবারুণ দে বলেন , 'গরমের জেরে স্কুলশিক্ষা দন্তরের ছুটি বাড়ানোর নির্দেশিকা ওয়েবসাইটে দেখেছি৷ যদিও এ ব্যাপারে সিআইএসসিই আমাদের এখনও কিছু জানায়নি৷

কিছু স্কুল ইতিমধ্যে ছুটি দিয়েছে৷ তবে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি , তারা যেন দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত বাচ্চাদের স্কুলের বাইরে বের না করে৷ ' রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাসের কথায় , 'আমরা ইতিমধ্যে প্রাতঃ বিভাগের ক্লাস অর্ধদিবস করে দিয়েছি৷ আর দিবা বিভাগে দুপুর দুটো পর্যন্ত ক্লাস হচ্ছে৷ তবে শুক্র ও শনিবার ছুটি দিয়েছি৷ সোমবার পরিস্থিতি বিচার করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত৷ ' যদিও আইসিএসই এবং সিবিএসই -র একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য , 'নবম ও দশম শ্রেণিতে আমাদের পরীক্ষা ছাড়া ১০০০ ঘণ্টা এবং একাদশ ও দ্বাদশে পরীক্ষা ছাড়া ১২০০ ঘণ্টা ক্লাস করতেই হবে৷ ফলে এত আগে গরমের ছুটি দিলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না৷ '

লরেটো হাউস , ডন বসকো (পার্ক সার্কাস ) এবং ক্যালকাটা গার্লস হাইস্কুল ইতিমধ্যে স্কুলের সময়সীমা কমিয়েছে৷ এপিজে স্কুল (পার্ক স্ট্রিট ও বিধাননগর ) পুনরায় বিজ্ঞন্তি না দেওয়া পর্যন্ত ছুটি দিয়েছে৷ যদিও নবম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস হবে সকাল আটটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত৷ অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলই আপাতত আউটডোর কাজকর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরি বলেন , 'ক্লাস সাসপেন্ড হওয়ায় শিক্ষকদের এখন স্কুলে কোনও কাজ নেই৷ অধিকাংশ শিক্ষকই ভোটের কাজে ব্যস্ত৷ তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে দন্তর ও পর্ষদের উচিত শিক্ষকদেরও ছুটি দেওয়া৷ ' ৷

আরও ক’দিন পিছু ছাড়বে না তাপপ্রবাহ

$
0
0

এই সময় : বাংলা জুড়ে পারদ কিছুটা নামল মঙ্গলবার৷ কিন্ত্ত তা যে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হবে না , হলফ করে বলতে পারছেন না আবহবিদরা৷ তাঁরা বলছেন , আরও অন্তত ২-৩ দিন তাপপ্রবাহের নিরঙ্কুশ দাপট চলবে৷ কারণ রেহাইয়ের বন্দোবস্ত এখনও হাজির হয়নি৷ বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দু'ডিগ্রি কমে ৪৩ .২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে৷ কলকাতার পারদও ৪১ .৩ ডিগ্রি থেকে নেমেছে ৪০ .৬ ডিগ্রিতে৷ যদিও স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি দুই তাপমাত্রাই৷ তাপপ্রবাহের কবল থেকে তাই মুক্তি মেলেনি৷ সবচেয়ে বড় কথা , তাপমাত্রার এই সামান্য হেরেফেরে আমজনতার কোনও সুরাহা হয়নি৷ সেই বেলা বাড়তেই চড়া রোদ , সঙ্গে গরম হাওয়ার হলকা৷ জ্বালা ধরাচ্ছে লু৷ গরমের মধ্যে স্টেশনে যাত্রীদের সিটে বসেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বছর ষাটের এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি৷

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার গড়িয়া স্টেশন থেকে দেহটি উদ্ধার করে রেল পুলিশ৷ স্টেশনের হকাররা জানান , স্টেশনে বসে বেশ খানিক ক্ষণ ধরেই অসুস্থ বোধ করছিলেন ওই প্রৌঢ়৷ একসময় তিনি অসাড় হয়ে যান৷ শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বেজ জানান , মৃতের পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে৷ রাজ্যে অন্য প্রান্ত কোচবিহারে তাপপ্রবাহের দাপট নেই৷ তবে সেখানকার তুলনায় বেশ খানিকটা উপরেই রয়েছে দিনের পারদ৷ গরমের মধ্যে প্রচারে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়৷

গত প্রায় এক সন্তাহ ধরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে রাজ্যে৷ প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহ থাবা বসিয়েছিল৷ তার পর তা গোটা দক্ষিণবঙ্গেই নিজের প্রতিপত্তি বিস্তার করে৷ কলকাতায় পর পর তিন দিন তাপমাত্রা রয়েছে ৪০ ডিগ্রির উপরে৷ দু'দফা মিলিয়ে সংখ্যাটা চার৷ তার মধ্যে সোমবার পারদ যেখানে পৌঁছেছিল , ওই উত্থান ১৯৮০ সালের পর এপ্রিলের মহানগরে আর কখনও হয়নি৷ ওই বছরের ২৫ এপ্রিল ৪১ .৭ ডিগ্রিতে চড়েছিল পারদ৷ এ দিন অবশ্য সেই রেকর্ড ভাঙেনি৷ কিন্ত্ত আজ -কালের মধ্যে যে ভাঙবে না , তেমন আশ্বাসও দিচ্ছেন না আবহবিদরা৷ মৌসম ভবনের উপমহানির্দেশক গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিনও বলেন , 'পূর্বাভাস একই থাকছে৷ নববর্ষ তো বটেই , তার পরও গরমের দাপট চলবে৷ '

উপগ্রহ চিত্র ছানবিন করে আবহবিদরা বলছেন , বৈশাখের প্রথম সন্তাহের শেষ দিকে মেঘ ঢুকলে তাপপ্রবাহের রথ থামতে পারে৷ কিন্ত্ত তখন আবার ভ্যাপসা গরম অস্বস্তি বাড়াবে৷ বৃষ্টির আশা এখনও দেখছেন না আবহবিদরা৷ প্রকৃতির 'জোটের ' অপেক্ষায় তাঁরা৷ ঝাড়খণ্ডের মালভূমি যথেষ্ট তেতে রয়েছে , বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্প তার সঙ্গে জোট বাঁধলে তবেই কালবৈশাখী আছড়ে পড়ার আশা তৈরি হবে৷ কিন্ত্ত জলীয় বাষ্পের 'ভগীরথের ' দেখা মিলছে না৷ বাংলাদেশের উত্তর দিকে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি দেশের মাঝে সরে এসেছে৷ কিন্ত্ত সেটি বাংলার সুরাহা করবে কি না , তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ আবহবিদদের সবচেয়ে অবাক করেছে , উপকূলবর্তী ডায়মন্ড হারবারের তাপমাত্রা৷ সেখানে পারদ পৌঁছেছে ৪১ .৯ ডিগ্রিতে৷ স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ ডিগ্রি বেশি৷ বঙ্গোপসাগরের প্রায় গায়ে লেগে থাকা শহরটিতেও যে ভাবে শুকনো গরম হাওয়ার দাপট , তাতে স্পষ্ট জোলো বাতাস এই মুহূর্তে কতটা কোণঠাসা৷ জলেই জীবন৷





পদ্মমধুতে লুকিয়ে চৌরঙ্গির ভাগ্য

$
0
0

রাজা চট্টোপাধ্যায়

কলকাতার পুরোনো চৌরঙ্গি বিধানসভার সিংহভাগ অঞ্চলই ২০০৯ সালে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে ভবানীপুর এবং বালিগঞ্জে৷ তবে পুরোনো বউবাজার এবং শিয়ালদহের সংমিশ্রণে তৈরি আধুনিক চৌরঙ্গিও রাজনৈতিক ঐতিহ্যে পুরোনো কেন্দ্রের মতোই৷ সাবেক চৌরঙ্গির মতো শিয়ালদহ-বউবাজারও বরাবর কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতিকেই লালনপালন করেছে৷ সেই রাজনীতির দুই কারিগর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোমেন মিত্রের টক্করে সাম্প্রতিকালে প্রথম জন ধারাবাহিক ভাবে সফল৷

সোমেনকে এখনও নিজের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী মনেই করেন না সুদীপ৷ তবু সোমেনের দৃঢ় বিশ্বাস, রাজনীতির ময়দানে খেলা এখনও অনেক বাকি৷ নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাঝে রেখে এবার তাঁদের লড়াই আরও জমজমাট৷ লোকসভা ও বিধানসভা উপনির্বাচনের ধারা এবং পরবর্তী ঘটনাক্রম ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবারও 'ক্লোজ ফাইট'-ই হতে চলেছে চৌরঙ্গিতে৷ বিজেপির প্রায় ২৪ হাজার ভোটের 'আমানত' ভাঙে না বাড়ে, ভাঙলেও তা কোন পক্ষের বাক্সে যায়, সেটাই এবারের ভোটের মুখ্য আলোচ্য বিষয়৷ সনিয়া গান্ধী বাম-কংগ্রেসের জোটে সবুজ সঙ্কেত না-দিলে এবার কিন্ত্ত ভোটে লড়ার নাম উচ্চারণ করতেন না, দাবি সোমেনের৷

তবে আসরে নামার পর উপনির্বাচনে বামেদের (ফৈয়াজ আহমেদ খান) ঝুলিতে থাকা প্রায় ন'হাজার ভোটের পাটিগণিত মাথায় রেখে সুদীপকে একটা মোক্ষম জবাব দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি৷ তাই রাজনৈতিক জীবনের পড়ন্ত বেলায় দুধ -সাদা ধুতিতে কাদার ছিটে লাগিয়ে শিয়ালদহ -বউবাজারের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছেন 'ছোড়দা '৷ নয়নার বিরুদ্ধে লড়তে আঁতে লাগছে না ? সোমেনের জবাব , 'প্রতিদ্বন্দ্বীর যোগ্যতা বিচার করার অধিকার আমার নেই৷ আসল বিচারক তো ভোটাররা৷ ' সোমেন জানেন , নয়নার বকলমে লড়াইটা আসলে সুদীপেরই৷ স্বেচ্ছায় প্রার্থী হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলছেন , 'আর ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না৷ সাতবার বিধায়ক হয়েছি , একবার এমপি৷ সনিয়া গান্ধীর কথা ফেলতে পারলাম না৷ একসময় মমতার জন্য পরিবর্তন চেয়ে পাপ করেছি৷ তারই প্রায়শ্চিত্ত করছি৷'

তৃণমূল ছাড়ার আগে সোমেন মজা করে বলেছিলেন, 'দল রাখি না বউ!' এই দোলাচলেই শিয়ালদা-বউবাজারে ছোড়দার রাজনৈতিক ফোকাস এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল৷ অনুগামীরাও হয়েছিলেন বিভ্রান্ত৷ এখন 'দল -বৌ -এবং ছোড়দা' সবাই একদিকে৷ তাই পুরোনো ফর্মে ফেরার চেষ্টা করছেন সোমেন৷ অন্যদিকে, উপনির্বাচনে নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় অবহেলায় জিতলেও এবার বিশ্রামের জো নেই সুদীপের৷ স্ত্রীর আসন ধরে রাখতে মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে ফের চৌরঙ্গির অলি-গলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুদীপ৷ সাদা জিপসিতে ঘাসফুল মার্কা বড় ছাতার তলায় সুদীপ-নয়নার দাঁড়ানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন রাজা -রানির রথ বেরিয়েছে৷ সামনে ঢাকির দল৷ নয়নার হাতে ওয়ার্ড ভিত্তিক রুট ম্যাপ৷ মুখ ঝলসে যাচ্ছে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতার৷

সোমেনকে নিয়ে প্রশ্ন করলেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলছেন , 'আরও পাঁচ বছর পর দেখবেন উনি কংগ্রেস -সিপিএম আর বিজেপির যৌথ প্রার্থী হয়েছেন৷ তাতেও এখানে লাভ নেই৷ এবার আমাদের লড়াইটা উপনির্বাচনের থেকেও সহজ৷' কিন্ত্ত অঙ্কের হিসেব যে সহজ লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে না৷ ২০১৪ -য় চৌরঙ্গি উপনির্বাচনে বাম -কংগ্রেসের প্রান্ত ভোটের সঙ্গে নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রান্ত ভোটের ফারাক মাত্র ৬ হাজার ১২১৷ সুতরাং সোমেন -সুদীপ দুই শিবিরের লড়াইয়ে চৌরঙ্গিতে এবার নির্ণায়ক হতে চলেছে গত উপনির্বাচনে বিজেপির পাওয়া ভোট৷ দেড় বছর আগে চৌরঙ্গির উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠককে পিছনে ফেলে বিজেপি দু'নম্বরে উঠে এসেছিল৷ তাই খাতায় -কলমে এবার চৌরঙ্গিতে তৃতীয় স্থানে থেকে দৌড় শুরু করতে হচ্ছে 'ছোড়দা 'কে৷ উপনির্বাচনে বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রান্ত ভোট পাশাপাশি রাখলেই পরিস্কার হয়ে যায়, এগিয়ে থেকেও তৃণমূলের আয়েস করার সুযোগ নেই৷ সেবার ২৩ হাজার ৯৮৪ ভোট টেনে চৌরঙ্গিতে বিজেপির রীতেশ তিওয়ারি দ্বিতীয় হয়েছিলেন৷ আর কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক ২৩ হাজার ৩১৭ ভোট পেয়ে নেমে গিয়েছিলেন তৃতীয় স্থানে৷ নয়নাকে বিপাকে ফেলতে সোমেন শিবির এখন বিজেপির সেই ভোটে ভাগ বসানোর নানা পরিকল্পনা করছে৷ এবারও রীতেশ যদি তাঁর সেই ভোট ধরে রাখতে পারেন তাহলে সুদীপ-নয়নার দুশ্চিন্তা কমবে৷ কিন্ত্ত সোমেনও শিয়ালদহ -বউবাজার -জানবাজার , লেনিন সরণির হিন্দিভাষী অঞ্চলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন পদ্মের ভোট হাতে আনতে৷ বিজেপি -বিরোধীরা জানতে চাইছে উপনির্বাচনে পাওয়া তেইশ হাজার ভোট ধরে রাখতে পারবেন তো ? প্রশ্ন শুনেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন চৌরঙ্গির বিজেপি প্রার্থী রীতেশ৷ বললেন , 'প্রশ্নটাই তো নেগেটিভ৷ আমি তো ভাবছি অন্য কথা৷'

রীতেশ বিরক্ত হলেও চৌরঙ্গির মতো কেন্দ্রে তাঁর গতবারের পাওয়া ভোটটাই এখন যাবতীয় হিসেব নিকেষের প্রাথমিক ভিত্তি৷ তাহলে তৃণমূল কী ভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করছে ? তৃণমূলবিরোধী বিজেপি ভোট তাঁদের দিকে ঘুরবে না -ধরে নিয়েই চৌরঙ্গির সংখ্যালঘু এলাকায় এবার লিড আরও বাড়ানোর লক্ষ্য সুদীপ -নয়নার৷ চৌরঙ্গি বিধানসভার উপনির্বাচনে ইকবাল আহমেদের দৌলতে নয়না তাঁর জয়ের ব্যবধান ১৪ হাজার ৩৪৪ ভোটে তুলে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ ৬২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৬ হাজারেরও বেশি ভোটের লিড ছিনিয়ে এনেছিলেন ইকবাল৷ সদ্য নারদ বিতর্কে জড়ানো ইকবাল ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে এবারও সেই একই দাপট দেখাতে পারেন কি না তার উপর নির্ভর করছে তৃণমূলের ছক৷ ইকবাল নিজে এবারও হুগলির খানাকুলের প্রার্থী৷ কাজেই সেখানেও তাঁকে সময় দিতে হচ্ছে৷ তবে গত পুরভোটে ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়ে সানাকে জিতিয়ে এনে ইকবাল এলাকায় তাঁর কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন৷ সুতরাং এবারও এই ওয়ার্ডে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গতবারের মতোই ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করবে তৃণমূল৷

২০১৪-লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হারলেও চৌরঙ্গি বিধানসভায় কিঞ্চিত্ সান্ত্বনা পেয়েছিলেন সোমেন মিত্র৷ এই কেন্দ্রে সুদীপের চেয়ে ১৫০০ ভোটে এগিয়ে ছিলেন সোমেন৷ কিন্ত্ত অল্প দিনের ব্যবধানে বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় ১৪০০০ হাজার ভোটে জিতে যাওয়ায় সেই সান্ত্বনাটুকুও খোয়াতে হয়েছিল সোমেনকে৷ দল হিসেবে তৃণমূল দুর্নীতি -বিতর্কে জর্জরিত হলেও সারদা থেকে নারদ কোনও ইস্যুতেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও অভিযুক্ত হননি৷ ফলে ব্যক্তিগত ইমেজ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের বলার কিছু নেই৷ তাই নয়নাও স্বামীর পাশে মাথা উঁচু করেই মহল্লা পরিক্রমা করতে পারছেন৷ গত দেড় বছরে এলাকায় নিজের কাজ নিয়েও বেশ তৃন্তি আছে তাঁর মনে৷ বললেন, 'ওদের জোট হয়ে থাকলে আমাদের মানুষের সঙ্গে জোট হয়েছে৷ ' সোমেনবাবু তো হেভিওয়েট? প্রশ্ন শুনেই হাসিমুখে নয়নার জবাব , 'এই রকম প্রশ্নের তো কোনও উত্তর দেব না৷' ভোটের পাটিগণিতে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষছে সবাই৷ লাভ কার, উত্তর মিলবে শীঘ্রই৷


আক্রমণে বিরোধীরা, পর্যবেক্ষক নিয়ে কড়া কমিশনও

$
0
0

এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: বিরোধীদের লাগাতার সমালোচনার মুখে এ বার সরাসরি পর্যবেক্ষকদেরও সতর্ক করল নির্বাচন কমিশন৷ মঙ্গলবার দিল্লি থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদির নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চ সতর্ক করে দেয় পর্যবেক্ষকদের৷ ফুল বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গে দু'পর্যায়ের ভোটেই পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ শুধু সাধারণ পর্যবেক্ষকরাই নয়, পুলিশ পর্যবেক্ষকদের কাজকর্ম নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করতে ছাড়েননি জাইদি৷ পর্যবেক্ষকদের যোগাযোগের ফোন নম্বর ঠিকমতো প্রচার না-হওয়া নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাজে উষ্মা প্রকাশ করতেও রেয়াত করেনি ফুল বেঞ্চ৷

উষ্মার কারণ আছে৷ মঙ্গলবার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে একযোগে সরব হয়েছে বাংলার বিরোধী দলগুলি৷ সিপিএম জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের আর কোনও আস্থা নেই৷ সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট ভাবে এটাও বলে দিয়েছেন, কোনও কেন্দ্রে ১১০টি বুথে রিগিং হলেও তাঁরা পুনরায় ভোটের দাবি জানাচ্ছেন না৷ কারণ, কমিশন সুরক্ষা দিতে পারবে না৷ তাই নিজের দলীয় কর্মীদের তিনি মৃত্যুর মুখে ফেলে দিতে চান না৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধিদল গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, কোথায় গেলেন পর্যবেক্ষকরা? তাঁরা কী করছিলেন ? তাঁরা হয় ফোন তোলেননি অথবা তাঁদের ভুল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীও ঠিক ভাবে মোতায়েন হয়নি৷ ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে৷ কমিশন তা ঠেকাতে ব্যর্থ৷

কংগ্রেসের প্রশ্ন, এমন ব্যাপক বুথ দখল , ছাপ্পা ও হিংসার পর কমিশন কী করে শান্তিতে ভোট হয়েছে এই কথাটা বলতে পারে? এখানেই ক্ষান্ত না -হয়ে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনাকেই সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে কংগ্রেস৷ সাম্প্রতিক কালে কোনও রাজ্যে ভোট করাতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের এমন আক্রমণের মুখে নির্বাচন কমিশন কখনও পড়েছে কি না সন্দেহ৷

এর পরই জাইদি জানিয়ে দেন , তাঁরা খুব গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগগুলি বিবেচনা করবেন৷ কিন্ত্ত তার পরেও ইয়েচুরি বলে এসেছেন , কমিশনের তাঁর আর কোনও বিশ্বাস নেই৷ তাঁর কথায়, 'আমরা অনুমান করেছিলাম , ব্যাপক রিগিং হবে৷ বারবার করে আপনাদের সাবধান করেছিলাম৷ আপনারা কিছু তো করলেনই না , উল্টে বলে দিলেন ভোট শান্তিতে হয়েছে৷ কী করে বললেন , বুথে ও নির্বাচনকেন্দ্রে কোনও অশান্তি হয়নি ? আপনাদের কাজটা কি শুধু বুথ ও নির্বাচনকেন্দ্রে৷ তা হলে আধা -সামরিক বাহিনীকে দিয়ে ফ্ল্যাগমার্চ করাচ্ছেন কেন ?' ওই বৈঠকে সন্দীপ সাক্সেনাও ছিলেন৷ জাইদি তাঁর সামনেই জানিয়ে দেন , কমিশনের এলাকা শুধু বুথ নয় , বুথের বাইরেও৷ তিনি এ -ও জানিয়েছেন যে , এর পরের পর্ব থেকে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে৷ কারণ , অসমের ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে৷ সেখান থেকে বাহিনী রাজ্যে আসবে৷

তাতেও উদ্বেগ যায়নি ইয়েচুরির৷ তাঁর চিন্তা হল , এর পরের পর্বে বীরভূমে ভোট৷ সেখানে তো তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কমিশনে কত অভিযোগ জানানো হল৷ কিন্ত্ত তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি৷ বীরভূমে কী করে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ ভোট করাবে কমিশন ? কমিশন অবশ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করেছিল , ভরসা রাখুন৷ কিন্ত্ত তা যে রাখা যাচ্ছে না , সেটাও স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন সীতারাম৷



কমিশন অবশ্য এ দিনই কটু মন্তব্য করার জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে তিরস্কার করেছে৷ কমিশন সূত্রের খবর, অনুব্রতকে প্রথমে পরপর দু'বার শো-কজ করা হয়৷ এর মধ্যে ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কটূক্তি করার অভিযোগটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন৷ তৃতীয় দফার ভোট নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জাইদি কলকাতার আধিকারিকদের বলেন, পর্যবেক্ষকদের কাজকর্ম নিয়ে হাজারো অভিযোগ উঠেছে৷ প্রার্থী থেকে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পর্যবেক্ষকদের ভোটের দিন চোখে দেখতে পাচ্ছেন না৷ ফলে অভিযোগ জানাতে হয়রানি হতে হচ্ছে৷ এই অভিযোগ যাতে না-ওঠে, সেদিকে নজর দিন৷ সক্রিয় হয়ে প্রতিটি বুথে যান৷ স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কথা বলুন৷ বিশেষ করে বীরভূমের পর্যবেক্ষকদের বাড়তি সতর্ক করেছেন জাইদি , ইয়েচুরির অভিযোগের কথা মাথায় রেখেই৷

সিইওকে তিনি বলেন , রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, পর্যবেক্ষকদের যে ফোন নম্বর দিয়েছেন বাস্তবে তা ভুল৷ এমনকি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে লিয়াঁজো অফিসার বদলে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও রাজনৈতিক দলগুলিকে জানানো হচ্ছে না৷ ওয়েবসাইটে পর্যবেক্ষকদের ঠিক নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন৷ এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামের পক্ষ থেকে সিইওর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেওয়া হয় যে , কমিশন ভোট পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে৷ স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে , কমিশন একাধিকবার প্রতিশ্রীতি দেওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে এলাকায় টহলদারির কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের শেষে বিরোধী দলের ১১ জন পোলিং এজেন্ট কেশিয়াড়ি , ঘাটাল ও দাঁতনে বাড়ি ফিরতে পারেনি৷ এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস ও বামেদের পক্ষ থেকে সিইও -র সঙ্গে কেউ দেখা না -করলেও ভাটপাড়ার বিজেপি প্রার্থী আর কে হান্ডা এসে অভিযোগ করে যান ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে৷ তাঁর অভিযোগ , ভাটপাড়াকে চম্বলে রূপান্তর করেছেন অর্জুন৷ কংগ্রেস অবশ্য ভোট দানের অধিকার রক্ষার দাবিতে এ দিনও সিইওর দন্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়৷

কমিশনকে ইয়েচুরির প্রশ্নআমরা অনুমান করেছিলাম , ব্যাপক রিগিং হবে৷ বারবার করে আপনাদের সাবধান করেছিলাম৷ আপনারা কিছু তো করলেনই না , উল্টে বলে দিলেন ভোট শান্তিতে হয়েছে৷ কী করে বললেন , বুথে ও নির্বাচনকেন্দ্রে কোনও অশান্তি হয়নি ? তৃতীয় দফার ভোট নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জাইদি কলকাতার আধিকারিকদের বলেন , পর্যবেক্ষকদের কাজকর্ম নিয়ে হাজারো অভিযোগ উঠেছে৷ প্রার্থী থেকে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পর্যবেক্ষকদের ভোটের দিন চোখে দেখতে পাচ্ছেন না৷

ভোটপর্ব মিটতেই সন্ত্রাস পাণ্ডবেশ্বরে

$
0
0

এই সময়, পাণ্ডবেশ্বর, আসানসোল ও মেদিনীপুর: ভোটপর্ব মিটতেই সন্ত্রাস ফিরল বর্ধমান শিল্পাঞ্চলে৷ পাণ্ডবেশ্বরে সোমবার রাত থেকেই তৃণমূলের সশস্ত্র বাইক বাহিনী এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের৷ রাত হতেই এলাকায় বোমাবাজি হয়৷ সিপিএমের এক কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেশ কয়েকজন কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর ও মারধরও করা হয়েছে৷ পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে কাতর বিবৃতি দিয়ে সাহায্য চেয়েছেন সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়৷

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, কেশিয়াড়ি, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুরেও দু'পক্ষের বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন৷ জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জের রাজনৈতিক সংঘর্ষ গড়ায় মঙ্গলবার সকালেও৷ এ দিনই দিল্লিতে ভোটের দিনের গোলমাল ও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিজেপির প্রকাশ জাভড়েকর৷ বিরোধীদের প্রবল সমালোচনার পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসিম জাইদি জানিয়েছেন, এর পরের পর্ব থেকে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে৷ অসমের ভোট শেষ হয়েছে৷ সেখান থেকে বাহিনী আসবে রাজ্যে৷

সোমবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টো পর্যন্ত পাণ্ডবেশ্বর থানায় ভোট সন্ত্রাসের মোট আটটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ এর মধ্যে দু'টি তৃণমূল করেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে৷ বাকি ছ'টি অভিযোগ সিপিএম করেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি৷ সিপিএমের অভিযোগ, অভিযুক্তদের গ্রেন্তার না-করে বাজারপাড়ায় তৃণমূলের এক নেতার বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে৷ যাতে তাঁর বাড়িতে কেউ হামলা করতে না পারে৷ পাণ্ডবেশ্বর থানার এক আধিকারিককে জিজ্ঞাসা করতেই তাঁর জবাব, 'এ আর কী সন্ত্রাস! আগে একটা সময় ছিল ভোটের সময় পাণ্ডবেশ্বর থানায় ডিউটি করতে চাইত না কোনও পুলিশকর্মী৷ এ বার তো দু-একটা বিক্ষিন্ত ঘটনা ছাড়া বড়সড় কিছু ঘটেনি৷

সোমবার ভোট শেষ হওয়ার পর সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকা ছেড়ে চলে যায়৷ সিপিএমের অভিযোগ, তার পরই বাইরে থেকে আসা যুবকরা মুখে কাপড় ঢেকে এলাকায় বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ তাদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা৷ রাত ন'টা থেকে শুরু হয় বোমাবাজি৷ যে-সব সিপিএম কর্মী বুথে বসেছিলেন তাঁদের বাড়ি চিহ্নিত করে বোমাবাজি, ভাঙচুর ও মারধর করা হয়৷ পাণ্ডবেশ্বরে খোট্টাডিহি এলাকায় ২৪ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্ট ছিলেন বীরেন্দ্র কুমার৷ ভোট শেষ হতেই বাঁশ-লাঠি দিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারা হয়৷ দলীয় কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে৷ সিপিএম এজেন্ট হয়ে মার খেয়েছেন হরিপুর কলোনির স্বপন গড়াইও৷

পাণ্ডবেশ্বর বাজারপাড়ায় সিপিএমকর্মী বাসুদেব বাগদির বাড়িতে বোমা মেরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ বোমা পড়ে আরও কয়েকটি বাড়িতে৷ বাসুদেব জানান, 'নীচের ঘরটি এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলাম৷ তিনি প্রচুর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মজুত করেছিলেন৷ আগুনে সব ছাই হয়ে গিয়েছে৷' মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, 'আমাদের কর্মীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে তৃণমূল৷ পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷'

দুপুরে বাজারে একটি হোটেলের সামনে বহিরাগত যুবকদের ভিড় দেখা গেল৷ স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা দফায় দফায় বাইকে বা গাড়ি করে তাদের খাওয়াতে নিয়ে আসছিলেন৷ বহিরাগত যুবকদের মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা৷ তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর জবাব, 'যারা এত দিন সন্ত্রাস করে ভোটে জিতেছে তাদের মুখে সন্ত্রাসের কথা মানায় না৷ আমাদের কর্মী কাশী মোদীর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর গোডাউন পুড়িয়ে দিয়েছে৷ সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে গোডাউন করেছিল৷ সেই অপরাধে তাঁর গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে৷' কেউ গ্রেপ্তার না-হলেও গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এডিসিপি (পূর্ব) কুমার গৌতম৷

রাতেও লাউদোহা-ফরিদপুর এলাকার নতুনডাঙা গ্রামে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ গোলমাল হয়েছে রানিগঞ্জ -জামুড়িয়াতেও৷ সোমবার ভোটের পর নিউ এগারার বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ৷ রানিগঞ্জ মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি সন্দীপ গোপ বলেন, 'পুলিশকে বলেও লাভ হয়নি৷ বরং বলা হচ্ছে রাতেও আক্রমণ করা হবে৷ ' খবর পেয়ে বল্লভপুর ফাঁড়ির পুলিশ আসে৷ জামুড়িয়া বাজারের মন্দিরে সোমবার রাতে দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে বলে যায় কেন, এখানকার লোক বিজেপিকে ভোট দিয়েছে৷ জামু‌ি .ডয়ার বিজেপি নেতা কাশী শর্মা ও তাঁর ছেলেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ভোটের পর মারধর করেছে বলে বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস রায় জানান৷ বিজেপি প্রার্থীর এজেন্ট রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাঁর অভিযোগ , 'মঙ্গলবার সকালে সত্তরের আমাদের এজেন্ট দয়াময় নন্দীর বাড়ির সামনে বোমা মারা হয়৷ ' সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী বলেন , 'আমাদের কর্মী শ্যামা রুইদাসের বাড়িতে হামলা হয়েছে৷ ও ভয়ে পালিয়েছে৷ আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছিল ব্যবস্থা নিতে৷'

ভোটের দিন তৃণমূলের তিন কর্মীকে থানায় আটক ও একজনকে গ্রেন্তারের পর থানাতেই তৃণমূলের এক বড় নেতাকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে৷ এই বিষয়ে জামুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসন বলেন , 'চড় মারার ঘটনা জানা নেই৷ তবে আমাদের লোকরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছে৷ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী আমাদের কথা শোনেনি৷ রানিগঞ্জে বিজেপির ঘটনা বা সত্তরে মঙ্গলবার বোমা ছোড়ার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ ' জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে , অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ রানিগঞ্জের নিমচায় মঙ্গলবার বিকেলে সিপিএম -তৃণমূল সংঘর্ষে আট জন আহতে হয়েছে৷ নিমচার সিটু নেতা অভিযোগ করেন তৃণমূল সমর্থকরা মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে৷ খবর পেয়ে সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী ছুটে আসেন৷ পুলিশ এলে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখান৷ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা অমিত সিং বলেন , 'ওরা ভোট পায়নি বলে এলাকার চলাচলের রাস্তায় নুড়ি বেঁধে দেয়৷ আমরা সেই নুড়ি সরাতে গেলে ওরা তৃণমূলের চার জনকে মারধর করে৷ পুলিশে আমরাও অভিযোগ জানিয়েছি৷'

রানিগঞ্জ থানার ওসি দীনেশ মণ্ডল বলেন , অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ৷ উত্তন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরও৷ দাঁতনে তৃণমূল -সিপিএম সংঘর্ষে এক তৃণমূল সমর্থক ও ৯ জন সিপিএম সমর্থক জখম হন৷ কেশিয়াড়ি বিধানসভার কালিদহ , রাজনগর এলাকায় সিপিএমের পোলিং এজেন্টদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল৷ চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকায় ছত্রগঞ্জ গ্রামে সোমবার রাতে আবার দুই তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম৷ কেশিয়াড়ির সিপিএম প্রার্থী বিরাম মান্ডির অভিযোগ , 'সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হওয়ায় কাল রাতে বিজয় পয়ড়া নামে এক অবসরপ্রান্ত শিক্ষককে মারধর করে তৃণমূলের কর্মীরা৷ ' দাঁতনের দোয়াসকা গ্রামে তৃণমূল -সিপিএম সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মী ও ৯ জন সিপিএম কর্মী আহত হন৷ তৃণমূল নেতা বিক্রম প্রধান বলেন , 'সিপিএমের লোকজন রামেশ্বর মুর্মু নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয়৷ আহত হন রামেশ্বর ও তাঁর স্ত্রী৷ তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সিপিএমের কয়েক জন মহিলা কর্মী পথ আটকান৷'

দাঁতনের সিপিএম জোনাল সম্পাদক রামচন্দ্র বাউল বলেন , 'তৃণমূলের আক্রমণে সিপিএমের ন 'জন আহত হয়েছেন৷ ' চন্দ্রকোণা বিধানসভা এলাকায় আবার অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে৷ সেখানে ছত্রগঞ্জে অশ্বিনী ঘোষ ও অনিল সামন্তকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে৷ সিপিএম নেতা গুরুপদ দত্ত বলেন , 'আমাদের প্রার্থী -সহ কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছেন৷ আর আমরা নাকি তৃণমূল কর্মীদের বোমা ছুড়ছি ? এ কথা শুনলে মানুষ হাসবে৷ ' কেশপুরের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিএম জোনাল সম্পাদক মানিকলাল সেনগুন্ত৷ এ দিকে , ভোট পর্ব মেটার পর মঙ্গলবার সবংয়ের দুবরাজপুরে তৃণমূলের জয়দেব জানার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া -সহ ১৪ জনের আগাম জামিনের আবেদন করা হয়েছে মেদিনীপুর জেলা আদালতে৷ আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য বলেন , 'আগামী ২১ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক৷'

বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় সিপিএমের এক পোলিং এজেন্টের সূর্যমুখী চাষ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টের বিরুদ্ধে৷ বড়জোড়ার মানগ্রামে সিপিএমের একটি অস্থায়ী পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে৷

VDO: সমুদ্রের নীচে অবাধ চলাফেরা বিশাল 'গডজিলা'র!

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: সমুদ্রের নিচে তীব্রগতিতে ছুটে আসছে একটি গিরগিটির মতোন দেখতে বিশালাকার প্রাণী। ডাইনোসর যুগের একটি বিরাট, মাংসাশী প্রাণি স্থলে উঠেই হামলা করল মানুষের উপর। পালিয়ে বাঁচবার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে মানুষজন। শহরের বুকে স্টেডিয়ামে নিজের বংশবৃদ্ধির জন্য অসংখ্য ডিম পেরে রেখে দিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর জীবটি। খুন চেনা চেনা লাগছে তো। সায়েন্স-ফিকশন মুভি গডজিলার কথা বলছি। এবার সেইরকমই একটি জীব সমুদ্রের নীচে সন্ধান মিলেছে।

ভিডিওটি দেখুন...


প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে গালাপোগাস দ্বীপে এই বিশালাকৃতি গোসাপের দেখতে পাওয়া গিয়েছে। লম্বায় প্রায় ৬ ফুটের বেশি এই প্রাণিটি হুবহু সিনেমার জীবটির মতোন দেখতে। তাই এর নামকরণও হয়েছে সিনেমার নামেই। গডজিলা।

ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, সমুদ্রের মধ্যেই লেজের সাহায্যে বেশ ভালই সাঁতার কাটতে অভ্যস্ত। গডজিলার চলাফেরা, খাবার খাওয়া, সাঁতার কাটা--সমস্ত কিছু ক্যামেরাবন্দি করেছেন স্টিভ ওয়াঙ্কওয়ার্থ। সমু্দ্রের নীচ থেকে জলের মধ্যে প্রায় ৯ ফুট উপরে সাঁতার কাটতে পারে। উল্লেখ্য, গডজিলা পুরোপুরি নিরামিশাষী প্রাণি। খাবারের সন্ধানের জন্য মাঝেমাঝেই এই দ্বীপে দেখতে পাওয়া যায়।

স্বপ্নে ভূতের গপ্পো বা রোমহর্ষক পরলোকসভা

$
0
0

আমার ক্ষেত্রে স্বপ্ন-বিশারদদের একটি বক্তব্য আশ্চর্যজনক ভাবে মিলে গেল৷ তাঁরা বলে থাকেন , আপনি যদি দিনের বেলায় কোনও বিষয় নিয়ে চর্চা বেশি করেন , দেখবেন , রাতের স্বপ্নে তা ফিরে এসেছে৷ শয়ন -স্বপন -জাগরণ সব মিলেমিশে একাকার আর কী !আমি স্বপ্নে দেখলাম প্রেতাত্মা পরিষদের একটি প্রতিবাদ সভা৷ কেন দেখলাম , যত্পরোনাস্তি সংক্ষেপে তার একটি গৌরচন্দ্রিকা করা আবশ্যক৷ বহুকাল আগে হেনরিক ইবসেন -এর নাটকের (তার নামটিও 'ঘোস্টস ') একটি চরিত্রকে বলতে শুনেছিলাম , 'হোয়েনেভার আই টেক আপ এ নিউজ পেপার , আই সিম টু সি ঘোস্টস গ্লাইডিং বিটুইন দ্য লাইনস৷ দেয়ার মাস্ট বি ঘোস্টস অল দ্য কানট্রি ওভার , অ্যাজ থিক অ্যাজ দ্য স্যান্ড অব দ্য সি৷ উই আর , ওয়ান অ্যান্ড অল , সো পিটিফুলি অ্যাফ্রেড অব দ্য লাইট৷ '



ভালো করে ভেবে দেখুন , ভোটের মরসুমে আমাদেরও ঠিক একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে নাকি ? কাগজ খুলুন , দেখবেন পাতায় পাতায় , ছত্রে -ছত্রে ভূতেরা কিলবিল করছে , সজনে গাছের ডালে শুঁয়োপোকার মতো৷ টেলিভিশনের চ্যানেল ঘোরান , ভূত-ভূত করে গুপি -বাঘাদের গোঙানি আর আর্তনাদ শুনতে পাবেন৷ চতুর্দিকের ঢক্কা -নিনাদ শুনে মনে হচ্ছে , প্রেতপুরী থেকে উড়ে এসে ভূতেরা দখল করে ফেলেছে রাজ্যটা , বুথে -বুথে হাজারে হাজারে তারাই ভোট দিচ্ছে , তাদের আশীর্বাদেই ফের দিদিমনি ফিরে আসতে চলেছেন নবান্নে৷ ভূতের ভয়ে মুগুর -ভাজা , কাঁধে কার্বাইন ঝোলানো ভিন -দেশি রক্ষীরাও সব জবুথবু, রিটার্নিং কিংবা প্রিজাইডিং অফিসারদের মুখে তো গ্যাঁজলা উঠছে৷

সূর্যকান্ত মিশ্র কিংবা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে ছেড়ে ভূতেদের কেন হঠাত্ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এত পছন্দ হচ্ছে , আমার মাথায় ঢোকেনি৷ যত দূর জানি রাতের শ্মশানে বোম -ভোলা , সারা গায়ে ছাই মাখা তান্ত্রিকদের মতো সূর্যবাবুদের দলবলই নর -কঙ্কাল কিংবা মড়ার খুলি -টুলি নিয়ে ভূতের নেত্য করতে বেশি পছন্দ করত৷ জীবন -মৃত্যু -পায়ের -ভৃত্য-চিত্ত -ভাবনাহীন করে বীরদর্পে পকেটে রিভলভার নিয়ে দাপাদাপি করতে একদা পছন্দ করতেন অধীরবাবুই৷ সবার চেয়ে ভূতেদের সঙ্গে তাঁরই আত্মীয়তা গভীরতম হওয়ার কথা৷ সে যাই হোক ভূতেদের কখন , কাকে , কোন কারণে পছন্দ হয় সে সব আমার মতো ক্ষুদ্র রক্ত -মাংসের মনিষ্যির পক্ষে জানা সম্ভব নয় , সেই অপচেষ্টা করছিও না৷ তবে গতকাল রাতের স্বপ্নে ভূতেদের প্রতিবাদ সভাটি প্রত্যক্ষ করে আমার বিস্তর আমোদ হয়েছে , সেই কারণেই আপনাদের সঙ্গে রোমহর্ষক অভিজ্ঞতাটি বাঁটোয়ারা করে নিতে চাইছি৷ অবশ্যই 'রাম নাম সত্য হ্যায় ' জপতে জপতে৷

নিঝুম রাতে সভাটি বসেছিল ময়দানের এক প্রান্তে ফোর্ট উইলিয়ামের সিংদরজার ঠিক বিপরীতে একটা মস্ত বড়ো গাছের তলায় ধবধবে সাদা এক খণ্ড কাপড়ের ওপর৷ ওই যেখানে নওরোজ উত্সবের সময় কলকাতার কাবুলিওয়ালারা বিবি -বাচ্চা নিয়ে নাচা গানা করে৷ এমনই গুমোট গরম যে ঝিঁঝিঁ পোকাগুলোও ডাকতে ক্লান্ত বোধ করছে , কাছেই একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালের স্তম্ভের তলায় নিদ্রারত দু'টি পথের সারমেয়৷ এটা যে সাক্ষাত্ ভূতেদের সভা সেটা মালুম হল গাছ থেকে ঝুলতে থাকা কালো কাপড়ের ওপরে অপটু হাতে লেখা কয়েকটি সাদা হরফ পড়ে৷

'ভূতেদের অপমান মানছি না , মানব না৷ 'সভার পৌরোহিত্য করছিলেন যিনি তাঁর চেহারা দেখে ভূষণ্ডির মাঠের শিবু ভট্টাচার্যের কথা মনে পড়ে গেল৷ পরনে সাদা ধুতি, আদুর গা , গলায় মোটা উপবীত , পায়ে খড়ম , নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের যাবতীয় ট্রেড -মার্ক৷ সমাবেশে তিনিই যে একমাত্র বেম্মোদত্যি সেটা বোঝা গেল ব্রাহ্মণের পায়ের দিকে তাকিয়ে৷ উপস্থিত বাকি সকলের পায়ের গোড়ালিটা সামনের দিকে , পাতা আর আঙুলগুলি পিছনে৷ একমাত্র ব্রাহ্মণের পদযুগলই মানুষের মতো৷ সাধারণত ব্রহ্মদৈত্যরা নির্বিবাদী হয়ে থাকে , গৃহস্থের মঙ্গলকামী হয় , বেলগাছের ডগা থেকে পারতপক্ষে মাটিতে নামে না , উত্তেজিত তো হয় না একেবারেই৷ কিন্ত্ত কী আশ্চর্য এই সভায় দেখলাম , তিনিই সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে ভাষণ দিচ্ছেন৷

'বন্ধুগণ , এত অল্প নোটিশে আপনারা সকলে যে আমার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন তার জন্য আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ৷ মুশকিল হল , এই সভা আমরা বেশিক্ষণ চালাতে পারব না৷ চারদিকে খবরের কাগজ আর চ্যানেলগুলোর রিপোর্টাররা ঘোরাঘুরি করছে , খবর পেলে যে কোনও মুহূর্তে তারা পৌঁছে যেতে পারে৷ তাই খুবই সংক্ষেপে আজ আমাদের কাজ সারতে হবে৷ আপনারা জানেন , পরলোকে আমরা সবাই যে যার মতো করে করে -কম্মে খাই , রক্ত -মাংসের মানুষগুলোকে নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথাই নেই৷ তাদের পাকা ধানে আমরা কখনও মই দিই না , কাউকে খুব বাড়াবাড়ি করতে দেখলে কেবল টুক করে ঘাড়টা মটকে দিই৷ অথচ আমাদের নিয়েই পশ্চিমবঙ্গের বেহদ্দ মিডিয়া অকারণে টানাটানি করা শুরু করে দিয়েছে , রোজ বলে চলেছে আমরাই নাকি এবার দলে দলে মাটিতে নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ভোট দিয়ে চলেছি৷ এটা ঘোরতর অন্যায় , সামগ্রিক ভাবে ভূত-প্রেত সমাজের চূড়ান্ত অসম্মান৷

এর প্রতিকারের উপায় বের করতেই আমি আজকের এই সভা ডেকেছি৷ আগে আপনারা যে যার বক্তব্য উপস্থিত করুন , তার পরে সম্মিলিত ভাবে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে৷ 'ব্রাহ্মণের কথা শেষ হতে না হতেই দেখলাম একজন মহিলা উঠে দাঁড়ালেন৷ পরনে লাল পেড়ে শাড়ি , হাতের কব্জিতে শাঁখা -পলা , বেশ নরম -সরম লাজুক প্রকৃতির , কেবল মাথার ওপর ঘোমটাটি এত বড়ো করে টানা যে মুখশ্রীটি অবলোকন করবার কোনও উপায় নেই৷ 'দেখুন ঠাকুরমশাই , এই অপপ্রচার যারা চালাচ্ছে তারা মিসোজিনিস্ট৷ মেল শভিনিস্ট শুয়োরের দল৷ শুধু ভূত ভূত করে বাজার মাতাচ্ছে৷ কেন আমরা পেত্নিরা কি মরে গেছি নাকি ? শাকচুন্নিরাই বা কোন অপরাধটা করল৷ কিংবা ডাকিনী -যোগিনী ? আমি চাই যে প্রতিবাদই করা হোক না কেন , তাতে যেন নারী -পুরুষের মধ্যে এই পরিকল্পিত বিভেদ সৃষ্টির কথাটা উল্লেখ করা হয়৷ '

'ঠিক , ঠিক ,' বলে হাতে লাঠি নিয়ে যিনি উঠে দাঁড়ালেন তাঁর চেহারাটি এক্কেবারে মামদোর মতো৷ 'ঠাকুরমশাই , যে সব হতচ্ছাড়ার দল আমাদের কাঠগড়ায় তুলছে , তারা সবাই হিন্দু সাম্প্রদায়িক৷ ভালো করে লক্ষ করে দেখুন গোরস্থানে থাকা আমাদের মতো মামদো ভূতের নাম একটিবারের জন্যও কেউ বলছে না৷ কেন ? কেন ছাগল -দাড়ির বদলে আমাদের ঝোলা দাড়ি আছে বলে ?'মামদোর কথায় যেন বিক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ল৷ হৈ হৈ করতে করতে উঠে দাঁড়াল প্রায় সবাই৷ এক পা খোঁড়া একানড়ে , মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আলেয়া , কুনো ভূত, গেছো ভূত, পেঁচো ভূত, মেছো ভূত, জিন , পিশাচ , দানো সবাই৷

প্রচণ্ড কোলাহলের মধ্যে কে কী বলছে আলাদা করে তা শ্রীতিগোচর হল না , যদিও বুঝতে পারা গেল এরা সবাই ভূতেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মধ্যে একটা শ্রেণিস্বার্থের গন্ধও পাচ্ছে৷ অন্ধকারের নিবিড় নৈঃশব্দ খান -খান করে দিয়ে স্লোগান উঠতে শুরু করল , 'ভূতের নামে গরিব নিধন মানছি না মানব না৷ ষড়যন্ত্রীর কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও৷ 'অবস্থা বেগতিক দেখে ব্রহ্মদৈত্য শরণাপন্ন হলেন তাল -বেতালের৷ তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এলে ব্রাহ্মণ বললেন , 'তা হলে এবার আমরা কী করব ?'কবন্ধ --- ঠাকুরমশাই আমার তো গলা কাটা তাই কিছু শুনতেই পাচ্ছি না৷ আপনি যা ঠিক করবেন তাই করব৷

নিশি --- আমাকে বজ্জাতগুলোর নাম -ঠিকানা দিন৷ এক এক করে ঘুম থেকে তুলে এনে সবক শিখিয়ে দিই৷

কুনো --- ঠিকানা পেলে আমিও ঘরের ভিতরে ঢুকে কোনায় ধুলো -বালির মধ্যে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকতে পারি৷ তার পর রাতের বেলায় যেই ব্যাটারা বিছানায় শুয়ে নাক ডাকতে শুরু করে দেবে , টুক করে পায়জামার দড়িটা খুলে দেব৷

পেত্নি --- ঠাকুর , অপরাধ নেবেন না৷ আপনি অনুমতি দিলে আমি ওদের সংসারে ঢুকে গৃহশান্তি তছনছ করে দিতে পারি৷ আমার সে সম্মোহনী ক্ষমতা আছে৷

পিশাচ --- দূর এ সব কিছু করতে হবে না৷ আমি সব ব্যাটাকে ধরে ধরে শ্মশানে তুলে নিয়ে এসে শেয়ালের সামনে ছেড়ে দেব৷

এ বার বেশ বিচলিত দেখাল ব্রহ্মদৈত্য মশায়কে৷ 'না না , এ সব তোমরা কী বলছ ? ভূত বলে কি আমরা ভদ্র -সভ্য নই৷ এ ভাবে প্রতিশোধ নেওয়াতে আমার সায় নেই৷ আমি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদের পক্ষে৷ আমি বরং একটা প্রতিবাদপত্র লিখি , তোমরা সবাই তাতে সই কর৷

গেছো --- দূর ঠাকুর মশাই ওই সব চিঠি -ফিটি লিখে কিছু হবে না৷ প্রথমে ছাপবে না , ফেলে রেখে দেবে৷ তার পরে যদি ছাপেও দেখবেন চিঠি -পত্রের কলমে এক টুকরো জায়গা দিয়েছে৷ ও সব কেউ পড়েই না৷

ব্রহ্মদৈত্য --- তা হলে মানহানির মামলা করব না হয়৷ সিভিল , ক্রিমিনাল দুটোই৷

এ কথা শুনে মামদো যা বলল তাতে হাসির রোল উঠল সভায়৷ 'ঠাকুর , মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার অনেক আগে অভিযুক্তরা নিজেরাই সব ভূত হয়ে যাবে৷ সময় , টাকা -পয়সা দুটোই নষ্ট৷ 'বেতাল এতক্ষণ ধরে একটি কথাও বলেনি৷ কর্মপন্থা নিয়ে সভায় মতৈক্য হচ্ছে না দেখে এ বার সে বলে ওঠে , 'তোমরা সবাই দেখছি মান্ধাতার আমলের জিনিসপত্রে বিশ্বাস কর৷ ওতে কাজ হবে না৷ আমার মনে হয় ফেসবুক-টুইটারে সংক্ষেপে আমাদের কথাটা জানিয়ে দেওয়া উচিত৷ অনেক বেশি লোকে জানবে , চর্চা হবে , তখন মিডিয়াও বাধ্য হবে আমাদের বক্তব্য ছাপতে৷ 'ব্রহ্মদৈত্য --- কী লিখব আমরা ?বেতাল --- ছোট্টো একটি বাক্য৷ কোরাসে সবাই , 'কী সেটা ?'বেতাল --- ভূত হইতে সাবধান৷ ঘাড়টি নিজ দায়িত্বে রাখিবেন৷ তার পরে দেখবেন সব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে৷



'স্বাধীন' মেয়েবেলা? গর্ভপাতে ভারতে এগিয়ে ২০-র নীচের মেয়েরাই

$
0
0

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রমেই স্বাধীনচেতা হচ্ছেন শহুরে ভারতের মহিলারা? ভারতের শহরাঞ্চলে ব্যাপক হারে বাড়ছে ২০ বছরের নীচে বয়সের মহিলাদের গর্ভপাতের হার। সরকারের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শহুরে ভারতে গর্ভপাতের নিরিখে এগিয়ে ২০ বছরের নীচের বয়সের মেয়েরাই।

সম্প্রতি ভারতে গর্ভপাতের হার নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, শহরাঞ্চলে ২০ বছর পেরনোর আগেই বেশির ভাগ মেয়ে যৌনমিলন উপভোগ করছেন। তার জেরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে, তাঁরা গর্ভপাত করিয়ে নিচ্ছেন। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশন (NSSO)-র সমীক্ষার পরতে পরতে যৌনজীবনের বিষয়ে ভারতের মেয়েদের স্বাধীনচেতা মনোভাবই ফুটে উঠেছে।

রিপোর্ট বলছে, দেশে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মধ্যে গ্রামীণ ভারতে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন ৭৭ শতাংশ মহিলা। শহরে তা ৭৪ শতাংশ। গর্ভপাতের হার সার্বিক ভাবে গ্রামীণ ভারতে ২ শতাংশ ও শহরে ৩ শতাংশ। এরমধ্যে শহরে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি গর্ভপাত করাচ্ছেন ২০ বছরের নীচের বয়সের মহিলারা। ২০ বছরের নীচে গর্ভপাতের হার ১৪ শতাংশ। যা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। গত ২০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০ বছর বয়সের নীচের মেয়েদের মধ্যে গর্ভপাতের হার ২১ শতাংশ বেড়েছে।

গ্রামীণ ভারতেও গত একবছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে গর্ভপাতের হার। শহরে যেখানে গর্ভপাতের হার ৫.৯ শতাংশ, সেখানে গ্রাম খুব অল্পই পিছিয়ে ৪.৪ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে NSSO রিপোর্টে।

Viewing all 87249 articles
Browse latest View live