একটু 'ভালো' স্কুলে ছেলেমেয়েকে পড়িয়ে কেরিয়ারে এগিয়ে দেওয়ার বাসনায় হাত পুড়ছে বাবা-মায়েদের৷ ক্রমেই মহার্ঘ্য হচ্ছে মহানগরের বেসরকারি স্কুলে ভর্তির ফি৷ এ বছর কলকাতার নামজাদা স্কুলগুলির প্রি-নার্সারিতে ভর্তির ফি অন্তত ১০-১৫ শতাংশ হারে বেড়ে গিয়েছে৷ গত বছর যে স্কুলে ভর্তি হতে লেগেছে ৬০ হাজার টাকা, এবার সেখানেই লাখের উপর টাকা দিয়ে ভর্তির মাসুল গুনছেন অভিভাবকরা৷ লাগামছাড়া এই ফি বৃদ্ধির পরেও থেকে যাচ্ছে নানা অনিয়মের অভিযোগ৷
যেমন মধ্য কলকাতার ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল৷ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে নার্সারিতে ভর্তি হতে এখানে লেগেছিল হাজার ষাটেক টাকা৷ এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা৷ স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল রাজা ম্যাক গি-র ব্যাখ্যা, 'পরিকাঠামো থেকে পরিষেবা সব কিছুতেই খরচের পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ছে৷ ফলে আমাদের ফি বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকছে না৷' কিন্ত্ত অভিভাবকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, পরিষেবা খাতে কী এমন আকাশ-পাতাল পরিবর্তন করা হয়েছে, যার জন্য গতবারের তুলনায় এক ধাক্কায় ৩৫ হাজার টাকা বাড়াতে হয়? রাজা ম্যাক গি অবশ্য সেই প্রসঙ্গে না-গিয়ে বলছেন, 'আমাদের এখানে অনেক ছাত্র রয়েছে, যাদের পরিবার দরিদ্র৷ তাদের জন্য আমরা একটা টাকাও নিই না৷ ওদের জন্য আমাদের নানা স্কলারশিপের ব্যবস্থাও তো রয়েছে৷' পার্ক স্ট্রিট বা সল্টলেকের এপিজে স্কুলের ছবিটাও একই রকম৷ এ বছর সেখানে নার্সারিতে ভর্তি হতে লেগেছে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা৷ ওই স্কুলের তরফেও বাজারের মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দেখানো হয়েছে৷ সরকারি হিসেবেই হেরিটেজ স্কুলে এ বছর প্রি-নার্সারিতে ভর্তির জন্য ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা লেগেছে৷ প্রথম শ্রেণিতে সেই ফি-ই গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৮০০৷ এর মধ্যে ৯০ হাজার টাকা অ্যাডমিশন ফি৷ টিউশন ফি, সেশন ফি, সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদি মিলিয়ে সেটাই দু'লাখ ছুঁইছুঁই করছে৷ সাউথ পয়েন্টের অ্যাডমিশন ফি ৫৮,০০০ টাকা৷ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের মুখপাত্র কৃষ্ণ দামানির অবশ্য সংযোজন, 'পরিষেবার সঙ্গে ফি বৃদ্ধির কোনও যোগাযোগ নেই৷ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মাসমাইনে বৃদ্ধি, একটা গোটা দিন স্কুলে চালাতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত খরচ-খরচা বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই৷'
অনেকে মনে করছেন, কেবল অ্যাডমিশন ফি নিয়েই ক্ষান্ত হয় না স্কুলগুলি৷ এই শহরের অনেক স্কুলের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷ অনেক অভিভাবক বলছেন, কোনও কোনও স্কুলে নানা অনুদান বাবদ টাকা নেওয়ার রেওয়াজ আছে৷ যার জেরে মোট টাকার অঙ্ক কখনও কখনও ৮-১০ লাখে পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ যদিও খাতায়-কলমে সেই টাকার কোনও হিসেব দেওয়া থাকে না৷
অনেক সময় স্কুলগুলি নিজেদের ভর্তির তালিকার দাম বাড়াতে ভুয়ো নাম প্রকাশ করছে বলেও অভিযোগ উঠছে৷ যাতে নীচের দিকে থাকা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা দাবি করা যায়৷ এর উপর রয়েছে এমএলএ-এমপিসহ প্রভাবশালীদের সুপারিশ তালিকা৷ যার জেরে তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ তবে টাকা নিয়ে তেমন একটা উদ্বেগ নেই অভিভাবকদের অনেকের মধ্যে৷ প্যারেন্টাল কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের পর্যবেক্ষণ, 'ভালো থেকে আরও ভালো স্কুলের খোঁজে বাবা-মায়েরা নিজেদের ক্ষমতার বাইরে বেড়িয়ে যাচ্ছেন৷ প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে বাচ্চাকে ভালো স্কুলে ভর্তি করছেন অনেকে৷'
Joy.Saha @timesgroup.com