অধিকর্তা: আছেন৷ কিন্ত্ত গত পাঁচ মাসে তাঁকে একবারের জন্যও দেখা যায়নি হাসপাতালে৷হাসপাতাল সচিব : ২০১২ সাল থেকে নেইঅ্যাকাউন্টস অফিসার : পদই নেইচুম্বকে এমন ছবি রাজ্যে চোখের একমাত্র সরকারি চক্ষু সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজির (আরআইও )৷খাতায় -কলমে যা চোখের চিকিত্সার 'সেন্টার অফ এক্সেলেন্স '৷ এহেন বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে গত পাঁচ মাস ধরে অধিকর্তার পদে কোনও স্থায়ী শিক্ষক -চিকিত্সক তো নেই-ই, যিনি আছেন তিনিও আসলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ! একাধিক প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর জন্য বহাল সবেধন নীলমণি ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার৷ যিনি আবার হাসপাতালেরই একজন প্রবীণ শিক্ষক -চিকিত্সক৷ ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি সন্তাহে চার দিন যাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয় বহির্বিভাগ আর অস্ত্রোপচার নিয়ে৷
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ভাঙা গেট পেরিয়ে দ্রুতগতিতে অধ্যক্ষের ঘরের দিকে ছুটছিলেন আরআইও -র এর করণিক৷ হাতে ওষুধের তালিকা লেখা খাতা৷ জটিল চক্ষুরোগের চিকিত্সা করাতে আসা এক রোগীর জন্য কিছু ওষুধ লিখেছিলেন আরআইও -র ইন্ডোরের ডাক্তারবাবু৷ কিন্ত্ত , হাসপাতালের মেডিক্যাল স্টোরে সাপ্লাই নেই সে সব ওষুধের৷ এ দিকে মুখ্যমন্ত্রী 'ফ্রি ' ঘোষণার পর ওষুধ সরবরাহের যাবতীয় দায়িত্ব হাসপাতালেরই৷ এমন অবস্থায় উপায় বলতে অধিকর্তার সইয়ের ভিত্তিতে 'স্পট কোটেশন ' করে ওষুধ কেনা৷ তাই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে ছুটতে হচ্ছে ওই করণিককে৷ ছবিটা একদিনের নয়৷ গত পাঁচ মাসে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও কারণে আরআইও -র কর্মী -আধিকারিকদের ছুটতে হয় মেডিক্যাল কলেজে৷কেন ? কারণ , আরআইও -র অধিকর্তা এবং মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তো একজনই !২০১৫ -র ২২ জুলাই টানা তিনবার এক্সটেনশনের পর আরআইও -র অধিকর্তা পদ থেকে অবসর নেন গৌতম ভাদুড়ী৷ তার পর প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা হওয়ার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়িকে , যিনি আসলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ৷ শুনে হাসি পেতে পারে , কিন্ত্ত এটাই ঘোর বাস্তব আরআইও -তে৷
১৯৭৮ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চক্ষুরোগ বিভাগকে রোগীস্বার্থে পৃথক প্রতিষ্ঠানের তকমা দেওয়া হয়৷ নিয়ম অনুযায়ী , এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা হওয়ার কথা কোনও প্রবীণ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞেরই৷ ছাত্রছাত্রী পড়ানো থেকে বহির্বিভাগ সামলানোরও কথা তাঁর৷ এত দিন পর্যন্ত অধিকর্তা অবসর নিলে আরআইও -র সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক -চিকিত্সককে অধিকর্তার পদে বহাল করা হত৷ সে নিয়ম মানলে অধিকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার কথা আরআইও -র প্রবীণ শিক্ষক -চিকিত্সক হিমাদ্রি দত্তের (গৌতম ভাদুড়ির অনুপস্থিতিতে যিনি বেশ কয়েকবার দায়িত্ব সামলেছেন -ও )৷ তা হলে কেন তাঁকে অধিকর্তার পদ দেওয়া হয়নি ? স্বাস্থ্যভবন সূত্র বলছে , হিমাদ্রি দত্ত সে অর্থে শাসকঘনিষ্ঠ নন৷ সে কারণেই তাঁকে অধিকর্তার পদে বসানো হয়নি৷ সেই একই কারণে নিয়মবহির্ভূত ভাবে অবসরের পর তিন -তিনবার এক্সটেনশনও দেওয়া হয়েছিল গৌতম ভাদুড়িকে৷ হিমাদ্রি দত্ত না হোক , রাজ্যের কোনও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং প্রবীণ শিক্ষক -চিকিত্সককেই কি দায়িত্ব দেওয়া যেত না ? সে উত্তর অবশ্য মেলেনি স্বাস্থ্যদন্তরের কর্তাদের থেকে৷
সেটা না -হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বিঘ্নিত হচ্ছে আরআইও -র প্রতিদিনের কাজ৷ দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল কর্তার কথায় , 'স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ায় অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ই ভারপ্রান্ত অধিকর্তাকে বুঝিয়ে বলতে হয়৷ তাতে কিছুটা সময় তো নষ্ট তো হয় -ই৷' সূত্রের খবর , অধিকর্তার নিয়মিত নজরদারির অভাবে প্রায় মাস সাতেক আগে চিকিত্সক -চিকিত্সাকর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত বায়োমেট্রিক মেশিন বসানোর কাজও শুরু হয়নি৷ থমকে আধুনিকীকরণের কাজও৷ এ নিয়ে তপন লাহিড়ির প্রতিক্রিয়া , 'চক্ষু বিশেষজ্ঞ না -হলেও , আমি চিকিত্সক তো বটেই৷ কোথাও সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিচ্ছি৷ আর অধিকর্তার ঘরে গিয়ে বসতে পারি না ঠিকই৷ কিন্ত্ত , প্রয়োজনীয় সব কাজই ঠিক সময়ে সেরে ফেলি৷ কোনও কাজ বাকি নেই৷'
আরআইও -র রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন সমস্যার কথা৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য , 'এটা সত্যিই যে , মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে গোটা বিষয়টা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না৷ আমি স্বাস্থ্য -শিক্ষা অধিকর্তাকে পূর্ণ সময়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞকে অধিকর্তা হিসেবে দেওয়ার জন্য অনেকবার আবেদন করেছি৷ উনি ব্যাপারটা দেখছেন৷ আসলে টেকনিক্যাল প্রসেস মানার জন্যই দেরি হচ্ছে অধিকর্তা নিয়োগে৷ ' স্বাস্থ্য -শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন , যোগ্য লোক পাচ্ছিলাম না বলেই দেরি হয়েছে৷ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে , আশা করি জানুয়ারির মধ্যে অধিকর্তা দিয়ে দেওয়া যাবে৷ তবে সমস্যা বিশেষ কিছু হচ্ছিল না৷ তপনবাবু সিনিয়র লোক , উনি ঠিকই সামলে নিচ্ছিলেন৷ 'বেহাল আরআইওঅধিকর্তা: পূর্ণ সময়ের কেউ নেই৷ অতিরিক্ত দায়িত্ব কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের উপর , যিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞহাসপাতাল সচিব : নেইঅ্যাকাউন্টস অফিসার : পদটাই নেইড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার : দায়িত্ব হাসপাতালেরই এক শিক্ষক -চিকিত্সককে৷ যাঁকে সন্তাহে দু'দিন আউটডোরে বসতে হয়৷ দু'দিন অস্ত্রোপচার করেন৷ তথ্যসূত্র: আরআইও৷
Maitreyee.Bhattacharjee@timesgroup.com