এ দিন সকাল থেকেই ভিড়ে ঠাসা ছিল স্পোর্টস কমপ্লেক্স৷ কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে জড়ো হয়েছিল ৬৭০ জন পথশিশু৷ তাদের কেউ জন্মের পরই হারিয়েছে বাবাকে৷ কারও বা মা মারা গিয়েছে দুর্ঘটনায়৷ যদিও, ছোটবেলার সে সব কথা এখন আর মনেও নেই ওই খুদেদের৷ উল্টে তারা এখন সরকারের আর্থিক সাহায্যে চলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়েই নিজেকে সুরক্ষিত বলে মনে করে৷ এদেরই একজন পার্ক সার্কাসের মহম্মদ ইকবাল৷ ওই এলাকার রেললাইনের ধারের ঝুপড়ি থেকে সে এখন উঠে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে৷ ১১ বছরের ছোট্ট ইকবালের শুধু মনে আছে ট্রেনের আওয়াজ৷ বড় হয়ে চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ইকবাল জানাল,'বাড়ি থেকে সবসবময় ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পেতাম৷ এর বাইরে আর কিছু মনে নেই৷'
পার্ক সার্কাসের বিপাশা দে আবার জন্মের পরেই হারিয়েছে তার মাকে৷ মায়ের মৃত্যুর পরে বাবাও সে ভাবে নজর দেয়নি তার দিকে৷ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে বড় হওয়া মেয়েটি চলতি বছরে ১৫-তে পা রেখেছে৷ বিপাশা অবশ্য নিজের অতীত ভেবে কষ্ট পেতে চায় না৷ উল্টে আইনজীবী হয়ে সে পাশে দাঁড়াতে চায় দুঃস্থ মানুষদের পাশে৷ বিপাশা জানাল, 'এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এসে টের পাই, অসংখ্য ছেলেমেয়ে রয়েছে যাদের জীবনে বাবা-মা নেই৷ তাই ও সব ভেবে আর কষ্ট পাই না৷'আয়েত্রী, বিপাশা, সোহেলের মতোই অতীত ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় রিমি, দিশা, মৌমি, অরিত্রিকরা৷ এদিন তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঠিকানাকেই তারা নিজেদের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে৷ আর এই ক্রীড়া উত্সব যে তাদের আনন্দে সামিল হওয়ার অন্যতম প্রাঙ্গণ, তা নিজের মুখেই জানাচ্ছে খুদেদের দল৷ প্রতিযোগিতা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বেহালার কৌস্তভ যেমন বলেই ফেলল, 'বড় অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ তো আমাদের সে ভাবে হয় না৷ তাই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি, খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় খারাপ তো লাগছে৷' মন খারাপ হওয়া এই পথশিশুদের জন্য দন্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজার প্রতিশ্রীতি, 'আগামী বছরে ওদের জন্য আরও ভালো ভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে দন্তর৷ এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ওদের খুশি রাখার জন্য আরও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করা হবে৷'
এই সময়: সকাল থেকেই ভীষণ খুশি ব্যারাকপুরের আয়েত্রী মুখোপাধ্যায়৷ বছরে এই একটা দিনের জন্যই তো অপেক্ষা করে থাকে ১৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটা৷ কেননা, শিশুবিকাশ ও সমাজকল্যাণ দন্তর আয়োজিত 'পথশিশু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা'ই একমাত্র ঠিকানা, যেখানে আয়েত্রী পাশে পায় তার মতো বাবা অথবা মাকে হারানো অসংখ্য বন্ধুকে৷ তাদের দেখেই সে নিজেকে বোঝায়, সে একা নয়৷ তার মতো আরও অসংখ্য ছেলেমেয়ে রয়েছে, যারা বঞ্চিত প্রিয়জনদের স্নেহ থেকে৷ আয়েত্রীর মতো এমনই ৬৭০ জন খুদেকে বুধবার সমস্ত দুঃখ ভুলে আনন্দে গা ভাসাতে দেখা গেল সল্টলেকের স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে৷ তাদের কেউ ১০০ মিটার দৌড়ে জিতে হাতে তুলে নিল বিজয়ীর পুরস্কার, আবার কাউকে দেখা গেল নিজের সর্বক্ষণের বন্ধুকে হেরে যেতে দেখে তার সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নিতে৷