নতুন বছরে প্রিয়জনকে অভিনব চমক দিতে চান, কিন্ত্ত উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না? ক্লিশে হয়ে যাওয়া গ্রিটিংস কার্ড বা নামী কোনও রেস্তোরাঁর বাইরে 'অন্য কিছু' করতে চাইলে সোজা চলে যান জিপিও-তে৷ চমক তো বটেই, একই সঙ্গে প্রিয়জনের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট ছাপিয়ে তাঁকে 'অমর'ও করে ফেলতে পারেন৷ ডাকব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করতে এবং ডাকের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর পরিমাণ বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ ইন্ডিয়ান পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের৷ মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে যে কোনও ব্যক্তিই নিজের ছবি দিয়ে তৈরি করাতে পারবেন ডাকটিকিট৷ খামে রীতিমতো ব্যবহারও করা যাবে সেই টিকিট৷
শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন, ঋতুপর্ণা সেনগুন্ত, সুব্রত ভট্টাচার্য ইত্যাদি বহু বিখ্যাত ব্যক্তিই কলকাতা জিপিও-তে ঢুকেছেন নিজের ছবি দেওয়া ডাকটিকিট তৈরি করাতে৷ ইন্টারনেটের বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তার সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে ডাকবিভাগের ব্যবসা৷ তাই, সাধারণ মানুষের কাছে ডাকটিকিটের জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং অবশ্যই ডাকবিভাগের খালি হয়ে আসা সিন্দুক কিছুটা ভরার তাগিদে নতুন কিছু করার ভাবনা এসেছিল বিভাগের কর্তাদের মনে৷ 'পার্সোনালাইজড স্ট্যাম্প' তারই ফসল৷কলকাতা জিপিও-ই ভারতের মধ্যে প্রথম এমন ডাকটিকিট ছাপতে শুরু করে৷ ভারতীয় ডাকবিভাগের উদ্যোগকে উত্সাহ দিতে কলকাতার তো বটেই, সর্বভারতীয় সেলিব্রিটিরাও বিভিন্ন সময় এসেছেন এখানে৷ এঁদের মধ্যেই রয়েছেন শাহরুখ, দীপিকা, ঋতুপর্ণা ইত্যাদিরা৷
ডাকটিকিটে নিজের ছবি ছাপার ধাপগুলি কী কী জিপিও-র ফিলাটেলি ব্যুরো কাউন্টারে আসুন নিজের পছন্দমতো ছবি দিন আবেদনের ফর্মটি ভর্তি করুন ৩০০ টাকা জমা দিন নির্দিষ্ট দিনে এসে ছবি নিন
'পার্সোনালাইজড স্ট্যাম্প' বা 'পি স্ট্যাম্প' নামে বিশেষ এই ডাকটিকিট কলকাতার জিপিও থেকে আত্মপ্রকাশ করে ২০০১ সালে৷ পরের দেড় দশকে তেমন কোনও প্রচার ছাড়াই ডাকটিকিটে নিজের ছবি দেখার প্রবণতা বেড়েছে বহু গুণ৷ বেড়েছে খরচও৷ জিপিও-র ডাকটিকিট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, শুরুতে মাত্র ৩০ টাকা দিলেই ১৬টি ডাকটিকিটের একটি সেট তৈরি করে দেওয়া হত জিপিও থেকে৷ সঙ্গে আগ্রহী ব্যক্তি নিজের একটি ছবি ও পরিচয়পত্র দিলেই তাঁর ছবিও ছেপে দেওয়া হত সরকারি ডাকটিকিটের পাশে৷ এখন অবশ্য খরচ পড়ে ৩০০ টাকা৷ডাকটিকিট বিভাগের দুলাল দাস জানিয়েছেন, যে কোনও ডাকটিকিটের গায়ে করাতের মতো যে দাঁত কাটা অংশ থাকে তাকে 'পারফোরেশন' বলা হয়৷ ডাকবিভাগকে টাকা দিলে আপনার ছবি দেওয়া যে ডাকটিকিট ডাকবিভাগ ইস্যু করবে, তাতে দু'টি অংশ থাকবে৷ একটি অংশে ডাকবিভাগ প্রকাশিত ডাকটিকিটটি থাকবে৷ অন্য অংশে আপনার ছবি৷ দু'টি টিকিটের মাঝের অংশে 'পারফোরেশন' থাকবে৷ এই টিকিট খামেও ব্যবহার করা যাবে৷ কিন্ত্ত, ডাকবিভাগের টিকিটটি বাদ দিয়ে কেবলমাত্র আপনার ছবির অংশটি খামে ব্যবহার করা যাবে না৷
ডাকটিকিটে নিজের ছবি দেখতে চাইলে কী করতে হবে? জিপিও-র ডাকটিকিট বিভাগ বা ফিলাটেলি ব্যুরো জানিয়েছে, প্রথমে একটি ফর্ম ভর্তি করতে হবে৷ সেখানে নিজের বা যাঁর ছবি আপনি ডাকটিকিটে দেখতে চাইছেন তাঁর ছবি দিতে হবে৷ ভর্তি করতে হবে একটি আবেদনপত্র৷ এর পরই কাউন্টার থেকে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কত দিন পর আপনাকে ফের আসতে হবে আপনার মনপসন্দ ডাকটিকিট নেওয়ার জন্য৷ নির্দিষ্ট সময়ে এলেই আপনাকে দেওয়া হবে একটি এ-৪ মাপের শিট৷ এখানেই ১৬ থেকে ২০টি এমন ডাকটিকিট থাকবে যার প্রতিটিতেই থাকবে আপনার বা আপনার কোনও প্রিয়জনের ছবি৷ ডাকবিভাগের কাছে অনুরোধ করলে বাড়িতে ডাকযোগেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে এমন বিশেষ ডাকটিকিট৷কলকাতা জিপিও-র ফিলাটেলিক ব্যুরো জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি নিজেদের পছন্দমতো ছবি দিয়ে ডাকটিকিট তৈরি করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন৷ ফলে, পোস্টকার্ড বা অন্তর্দেশীয় বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকলেও ডাকটিকিট কেনার আগ্রহ কিছুমাত্র কমেনি৷
কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়