টানা কয়েক দিনের দুর্বিসহ দুর্ভোগ সয়ে, এবং রাজ্য সরকারের তরফে সে রকম ত্রাণ বা সাহায্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে চেন্নাইবাসীর একাংশ৷ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিধানসভা কেন্দ্র আর কে নগরে ঢুকতে গিয়ে জনরোষ ও ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন নাথাম বিশ্বনাথন, সেলুর রাজু ও গোকুল ইন্দিরার মতো সিনিয়র মন্ত্রীরা৷ অন্যান্য কয়েকটি এলাকাতেও গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন সরকারি প্রতিনিধিরা৷ বর্ষণজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা ২৬৯-তে দাঁড়িয়েছে৷
শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় চেন্নাইতে হাল্কা বৃষ্টিপাত, এবং তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী জেলাগুলি ও পুদুচেরিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে৷ তবে, তিন দিন বন্ধ থাকার পর এ দিন মাউন্ট রোডের পাশাপাশি চেন্নাইয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়৷ কিছু সরকারি বাস রাস্তায় নামে৷ আদিয়ার ও কুয়ান নদীতে জলের উচ্চতা কমে আসায় চেম্বারমবক্কম, পুঝল ও পুনডি নদী থেকে ছাড়া জলের পরিমাণও কমতে শুরু করেছে৷ চেন্নাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকালে সেখান থেকে বিমান চলাচল আংশিক ভাবে শুরু করা হবে৷ তবে নতুন করে বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ায় সেই পরিষেবাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ সুযোগ বুঝে চেন্নাইয়ের পাশ্ববর্তী বিমানবন্দরগুলি (যেমন, হায়দরাবাদ, কোয়েম্বাটোর, বেঙ্গালুরু) থেকে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে উড়ান সংস্থাগুলি৷ আপাতত চেন্নাইয়ের পার্শ্ববতী আরাক্কোনামের রাজালিতে নৌসেনার বিমানঘাঁটি থেকে যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক বিমান চলাচল আংশিক ভাবে চালু হয়েছে৷ উত্তর আরাক্কোনামের প্রধান লাইনে এবং তিরুনেলভেলি ও রামেশ্বরম স্টেশন থেকে 'চেন্নাই বিচ' পর্যন্ত খান চারেক স্পেশ্যাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলেছে৷ মেট্রো পরিষেবার উপরেও চাপ রয়েছে৷ সমস্ত স্কুল কলেজ এখনও বন্ধ৷
ত্রাণ কাজেও গতি আসছে৷ শহর ও শহরতলির সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালাচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তারা অন্তত ১০,৫৮৫ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছে, এবং শুক্রবার থেকে এনডিআরএফ-এর আরও ২০টি বাহিনী কাজে নামবে৷ ফলে চেন্নাইতে তাদের মোট ৫০টি বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে৷ টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেল ও এসএমএস - বাঁচার আর্তি নিয়ে এই সব মাধ্যমেই বার্তা পাঠাচ্ছেন জলে আটকে পড়া মানুষরা৷ সেগুলি দেখে দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে এনডিআরএফ৷ উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখতে সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগ চেন্নাই পৌঁছেছেন৷ কেন্দ্র সরকারও এ দিন ত্রাণ হিসেবে বিস্কুট ও নুডল সহ ১৭ টন শুকনো খাদ্য, ৫ হাজার লিটার দুধ এবং ১ লাখ খাবার জলের বোতল চেন্নাইতে পাঠাবে৷ জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটি (এনসিএমসি)-র বৈঠকেই শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত হয়৷ ত্রাণ ও উদ্ধারকারী টিম নিয়ে বিশাখাপত্তনম থেকে চেন্নাই বন্দরে পৌঁছে গিয়েছে নৌসেনার জাহাজ 'ঐরাবত'৷
শুক্রবারও হেলিকপ্টার থেকে খাবারের প্যাকেট ফেলার সময় দেখা গিয়েছে, জলমগ্ন বাড়িহুলির ছাদে জড়ো হওয়া মানুষরা ত্রাণের জন্য চিত্কার করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন৷ কেউ-কেউ আবার গলা পর্যন্ত জল ঠেলে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে হাঁটছেন৷ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে খাদ্য, জলের বোতল ও কম্বল বিলি করছে৷ অন্য দিকে, রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীগুলির চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় না-রাখলে কলেরা, ডায়েরিয়া, নাক-কান-ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ-সহ বিভিন্ন রোগ, এমনকি মহামারী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, দরকার হলে তিনি নিজে চেন্নাইতে যাবেন৷ ওডিশা সরকার চেন্নাইয়ের জন্য ৫ কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছেন৷ পাশাপাশি, চেন্নাইতে আটকে থাকা মহারাষ্ট্রের শ'দেড়েক আইআইটি পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে দু'টি বিশেষ বাস পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার৷ মাদ্রাজ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, চেন্নাইতে আটকে থাকা রাজ্যের অন্যান্য অংশের বাসিন্দাদের ঘরে ফেরানোর জন্য বিনামূল্যে বাসযাত্রার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ প্রসঙ্গত, গতকালই চেন্নাইয়ের জন্য অতিরিক্ত (অর্থাত্ ৯৪০ কোটির পাশাপাশি০ ১ হাজার টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ হেলিকপ্টারে চেপে শহরের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনও করেন তিনি৷ - সংবাদসংস্থা
চেন্নাই: বৃহস্পতিবার থেকে অবিরাম ধারাপাতের রেশ কমে আসায় সামান্য স্বস্তি মিলেছিল৷ কিন্ত্ত শুক্রবার সন্ধেবেলায় ফের বৃষ্টি শুরু হয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিল চেন্নাইয়ের৷ এখনও শহরের অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুত্, মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ৷ তবে কিছু অংশে জল কমতে থাকায় সেই জায়গাগুলিতে পরিষেবাগুলি শুরু করা হয়েছে৷ মানুষ পথেঘাটে বেরোচ্ছেন৷ দোকানপাটও ধীরে-দীরে খুলছে৷ খাওয়ার জল, সবজি বা দুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া৷ এক লিটার দুধের প্যাকেটের দাম হাঁকা হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা৷ এক কেজি টমেটোর জন্য দোকানীরা ৮০-৯০ টাকা চাইছেন! চালকের অভাবে অধিকাংশ তেলের ট্যাঙ্কার না-চলায়, মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি পেট্রোল পাম্প খোলা রয়েছে৷ সেখানে গাড়ির লম্বা লাইন৷ সমস্ত এটিএম বন্ধ৷