Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

'মুখ' মোদী-ই কি কাল হল?

$
0
0

অমল সরকার, পাটনা ও গৌতম হোড়, নয়াদিল্লি

বিহারে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে দলের একমাত্র মুখ হয়ে লড়াইয়ে নামার ঝুঁকি নিয়েই কি সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? নাকি কাল হল মেরুকরণের রাজনীতি? বিহার ভোটে মহাজোটের ধাক্কায় পর্যুদস্ত হওয়ার পর এই প্রশ্নগুলোই এখন তাড়া করছে মোদীর দলকে৷ প্রকাশ্যে যাই বলুন, ভিতরে ভিতরে এখন হারের কারণ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷

চাইলেই সুশীল মোদী থেকে শুরু করে যে কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে চিহ্নিত করে বিহার দখলের লড়াইয়ে নামতে পারত বিজেপি৷ কিন্তু সেটা না করে বিহারে ২৬টি জনসভা করে দলকে জেতানোর দায়িত্বটা প্রায় একার কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কৌশলটা অবশ্য নতুন নয়৷ এর আগে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে এই একই কৌশল সফল হয়েছে৷ কিন্তু ওই সব রাজ্যের তুলনায় বিহারের পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই আলাদা৷ একে তো এই নির্বাচন হচ্ছে কেন্দ্রে এনডিএ ক্ষমতায় আসার দেড় বছর পরে৷ যে সময়ের মধ্যে মানুষের মনে মোদী-মুগ্ধতা অনেকটাই ফিকে হয়েছে৷ আংশিক ভাবে হলেও তার জায়গা নিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার মনোভাব৷ তা ছাড়া বিহারে বিপক্ষ শিবিরে ছিলেন নীতীশ কুমার-এর মতো স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য এক জন নেতা৷ যাঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় বিজেপি জোটে ছিল৷ ফলে নীতীশ সরকারের সমালোচনা করতে গেলে নিজের গায়েই কালি ছেটাতে হত৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল লালুপ্রসাদের মতো যাদব ভোটব্যাঙ্কে ধনী সুবক্তার উপস্থিতি এবং বিজেপি-বিরোধীদের সামগ্রিক ঐক্য৷ এর পরেও কেন শুধু তাঁকে সামনে রেখে লড়ার কৌশলে সম্মতি দিয়েছিলেন মোদী, সেই প্রশ্নটা রাজনৈতিক মহলের মতো ভাবাচ্ছে বিজেপির একাংশকেও৷

বিহারে কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা সি পি যোশীর ব্যক্তিগত ধারণা, অঙ্ক কষেই মোদী এই ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু হিসেবটা মেলেনি৷ ঠিক কী চেয়েছিলেন মোদী? যোশী বলছেন, বিজেপির যা অবস্থা তাতে দলে এই মুহূর্তে মোদীর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই৷ কিন্তু নীতীশের সঙ্গে তাঁর একটা পুরোনো শত্রুতা ছিল৷ কারণ, তিনি বিজেপির নেতৃত্বে আসার প্রতিবাদেই নীতীশ দীর্ঘদেনির জোট ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷ অন্য দিকে বিরোধী নেতাদের মধ্যে নীতীশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক জন ব্যক্তিত্ব৷ তাঁকে হারাতে পারলে শুধু যে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে হারানোর তৃপ্তি মিলবে বা অপমান ফিরিয়ে দেওয়া যাবে তাই নয়, বিরোধীদেরও একটা মোক্ষম ধাক্কা দেওয়া যাবে৷ আর জাতীয় রাজনীতিতেও মোদী এমন একটা জায়গায় পৌঁছবেন, যার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কারও পক্ষেই সহজ হবে না৷ তিনি একেবারে নিষ্কণ্টক হয়ে যাবেন৷ সেই আশাতেই এত বড় ঝুঁকিটা নিতে রাজি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷

সমস্যা হল, অঙ্কটা মেলেনি৷ বরং যা হতে পারত তাঁর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার মূল হাতিয়ার, সেটাই হয়ে গিয়েছে ব্যুমেরাং৷ কারণ, বিহার বিপর্যয়ের দায়টা এখন মোদীর ঘাড়েই এসে চাপছে৷ অরুণ শৌরির মতো প্রাক্তন হয়ে যাওয়া নেতা থেকে জোটসঙ্গী শিবসেনা, সকলেরই মত, বিহারের ভোটযুদ্ধটাকে যখন মোদী বনাম নীতীশের লড়াই হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল, তখন নীতীশের জয়ের অর্থই হল মোদীর হার৷ শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত খোলাখুলিই বলেছেন, বিহারের ফল নীতীশ কুমারের বিশাল জয়৷ যা তাঁকে রাজনৈতিক নায়কের মর্যাদা দিয়েছে৷ সঞ্জয়ের মতোই বিজেপির অনেক নেতা-সাংসদও ঠারেঠোরে বলতে চেয়েছেন, নীতীশকে এই নায়কোচিত উচ্চতায় পৌঁছনোর সুযোগটা মোদীই করে দিয়েছেন৷ বিশেষ করে যখন দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি যে সব জায়গায় সভা করেছেন তার বেশিরভাগ জায়গাতেই বিজেপি ও শরিক দলের প্রার্থীরা হেরে গিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী যে ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে সভা করেন, বিজেপি জিতেছে তার মধ্যে মাত্র ১২টিতে৷ আর যে ৮৫টি জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন অমিত শাহ, তার হিসেব ধরলেও ইতিবাচক ইঙ্গিত নেই৷ অথচ, মাঠ ছাপানো ভিড় হয়েছিল প্রতিটি সভাতেই৷ কিন্তু ভোটের বাক্সে তা প্রতিফলিত হল না৷ বিজেপির অন্দর থেকেই অবশ্য বেরিয়ে আসছে ভিড়ের আসল রহস্যও৷ অকল্পনীয় পরাজয়ের পর দলের নেতারাই একান্তে জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতির বহু সভাতেই সাজানো ভিড়ের আয়োজন হয়েছিল৷ মোদীজি ও অমিতজির সভায় লোক হাজির করার জন্য দলের তরফে নাকি একপ্রকার হুইপই জারি করা হয়েছিল৷

বিজেপি নেতারা অবশ্য যুক্তি বা সমালোচনা কিছুই মানতে চাইছেন না৷ অন্তত প্রকাশ্যে৷ দলের মুখপাত্র সুদেশ বর্মা বলেছেন, 'মোদীই তো আমাদের ইউএসপি৷ বিহারে সব জায়গা থেকে প্রার্থী, নেতা, কর্মীরা মোদীর জনসভা চাইছিলেন৷ তাই তিনি এতগুলো জনসভা করেছেন৷' তাঁদের পাল্টা দাবি, আসলে দল হেরেছে বলেই এই সব প্রশ্ন উঠছে৷ কৌশলে কোনও ভুল নেই৷ এ যাত্রায় সেটা কার্যকরী হয়নি বলেই যাবতীয় সমালোচনা৷ কিন্তু নেতারা যাই বলুন, এ বারের ফলাফলে স্পষ্ট, শুধু গ্রামের মানুষ নন, বিজেপির বরাবরের শক্ত ঘাঁটি শহগুলির শিক্ষিত, আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল মানুষও এ বার মোদীর বিপক্ষেই রায় দিয়েছেন৷ লালু জমানার অরাজকতার কাহিনি এখনও পাটনার মানুষের মুখে মুখে৷ তবু পাটনার ১৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করতে পেরেছে মাত্র সাতটি আসন৷ এই পরিস্থিতিতে এ বার কেন্দ্রেও ঠিক কী কৌশল নিয়ে তারা এগোবে, সেটা কিন্তু ভাবাচ্ছে বিজেপিকে৷


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>