Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

মেয়ের পচা দেহ আগলে পরিবার

$
0
0

এই সময়, ডায়মন্ড হারবার: কাকদ্বীপে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় চরম অচলাবস্থা তৈরি হল৷ ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরও নিহত ছাত্রীর দেহের শেষকৃত্য করতে রাজি হল না পরিবার৷ পচন ধরতে শুরু করা দেহ বাড়িতে বরফ চাপা দিয়ে আগলে রেখে নিহতের বাবা জানিয়ে দিলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলে এবং পুলিশ সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মেয়ের শেষকৃত্য করবেন না তাঁরা৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়৷ এর মধ্যেই এলাকায় আরও এক কিশোরীরর পচাগলা দেহ উদ্ধার হওয়াকে কেন্দ্র করে রাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে৷ গোটা ঘটনায় দিশেহারা পুলিশ-প্রশাসন৷

রবিবার সকাল থেকে লাগাতার রাস্তা অবরোধ-বিক্ষোভ ও থানা ঘেরাওয়ের জেরে শেষ পর্যন্ত ওই ছাত্রী খুনের ঘটনায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করে পুলিশ৷ ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশের দাবি৷ পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রীর দেহে একাধিক আঘাত, নখের আঁচড় এবং যৌনাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ খুনের আগে মেয়েটির উপর নৃশংস যৌন অত্যাচার চালানো হয়েছে বলেও পুলিশের অনুমান৷ জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, 'ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে৷' যদিও মূল অভিযুক্তদের একজন ছাড়া বাকিরা ধরা না পড়ায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা রয়েছে৷

শনিবার ছাত্রীর দেহের ময়না তদন্ত করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের মর্গে৷ রাতে ছাত্রীর দেহ শেষকৃত্যের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলেও পুলিশ ধর্ষণের মামলা না করায় দেহ ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন এলাকার বাসিন্দারা৷ দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুলিশ ধর্ষণের মামলা না করা পর্যন্ত শেষকৃত্য হবে না বলে দাবি করে ছাত্রীর পরিবার৷ দেহটি বরফ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়৷ রাতে নিহত ছাত্রীর পরিবারের সাথে দেখা করতে গিয়ে বাসিন্দাদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে হয় কাকদ্বীপের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাকে৷ অভিযোগ, শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের উপর চাপ দেন মন্ত্রী-সহ তৃণমূলের লোকজন৷ কিন্ত্ত এলাকার বাসিন্দারা সাহস জোগানোয় খোদ মন্ত্রীর চাপের কাছেও মাথা নোয়ায়নি নিহতের পরিবার৷ এ দিন অবশ্য ফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, 'আমি কাউকে চাপ দিইনি৷'

রবিবার বেলা বাড়তেই উত্তাল হয়ে ওঠে নির্যাতিতার গ্রাম৷ গণধর্ষণের মামলা-সহ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হরিপুর গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা প্রতিবাদ মিছিল বার করেন৷ দুপুর ১২টায় মিছিল পৌঁছয় কাকদ্বীপ শহরে৷ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে৷ কাকদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র, চৌরাস্তার মোড়ে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে বিক্ষোভকারীরা৷ অচল হয়ে পড়ে গোটা শহর৷ কাকদ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারাও বিক্ষোভে সামিল হয়৷ অবরোধ-বিক্ষোভে যোগ দেয় বিভিন্ন গণসংগঠন ও মানবধিকার সংগঠনের কর্মীরা ও নিহত ছাত্রীর স্কুলের কয়েকশো পড়ুয়া৷ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত৷ উত্তেজিত বাসিন্দারা দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে কাকদ্বীপ থানা৷ বিকেলে সিপিএমের কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতা-নেত্রীরা ওই গ্রামে গেলেও বিক্ষোভ-আন্দোলনে রাজনৈতিক রং না লাগাতে অনুরোধ করেন গ্রামবাসীরা৷

এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে লট নম্বর আট কোস্টাল থানার বাপুজি গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনবাড়ি এলাকার একটি ধানখেত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি পচাগলা দেহ উদ্ধার করল পুলিশ৷ পোশাক দেখে দেহটি এক কিশোরীর বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান৷ বিকেলে ধান কাটতে গিয়ে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা৷ ঘটনার খবর চাউর হতেই আলোড়ন ছড়ায় গোটা কাকদ্বীপে৷ বাসিন্দাদের দাবি, 'এই কিশোরীকেও ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে৷ পুলিশ তদন্ত করে কিশোরীর পরিচয় খুঁজে বের করুক৷' পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে৷ খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নামলেও রাত পর্যন্ত কিশোরীর পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ৷

এ দিন দুপুরে বিক্ষোভে সামিল নিহত ছাত্রীর সহপাঠী খোকন দাস, রমেন দাস, সোমদত্তা পুরকাইত ও সোমাশ্রী বিশ্বাসরা বলেন, 'ও আমাদের খুব ভালো বন্ধু ছিল৷ ভাবতেও পারছি না পশুদের আঁচড় কামড়ে ওর মৃত্যু হবে৷ এই নৃশংসতাকে মেনে নিতে পারছি না৷ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-অবরোধে সামিল হয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি৷ পালিয়ে যাব না৷' এলাকার বধূ গঙ্গা বিশ্বাস, মিতালি মণ্ডল, আরতি বিশ্বাসরাও জানান, 'এই নৃশংস ঘটনার পর থেকে মনে হচ্ছে আমরা কেউ নিরাপদে নেই৷ অবিলম্বে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে৷ গোপাল একা এই কাজ করতে পারে না৷ ঘটনার সঙ্গে অনেকেই যুক্ত৷' বুদ্ধপুরে মূল অভিযুক্ত গোপাল হাজরার বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা৷

এই বিক্ষোভ-অবরোধে কোন রাজনৈতিক ঝান্ডা না থাকলেও বিকেলে নিহত ছাত্রীর বাড়িতে যান সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, 'কামদুনি, কাটোয়া, মধ্যমগ্রামের এ বার কাকদ্বীপ৷ রাজ্যজুড়ে দুষ্কৃৃতীদের অবাধ দৌরাত্ম্য বাড়ছে৷' কান্তির পর ওই বাড়িতে যান বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ কিন্ত্ত এই বিক্ষোভ আন্দোলনে যাতে রাজনৈতিক রং না লাগে তার জন্য কান্তি থেকে লকেট সকলের কাছেই আবেদন জানান এলাকার বাসিন্দারা৷

ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার জেলাজুড়ে দলীয় পতাকা ছাড়াই ধিক্কার দিবস পালন ও মোমবাতি মিছিল করবেন বাম কর্মীসমর্থকেরা৷ সন্ধে নাগাদ বিক্ষোভ অবরোধ উঠলেও আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার কাকদ্বীপ বন্ধের ডাক দিয়েছে৷ বিভিন্ন গণসংগঠন ও মানবধিকার সংগঠনের নেতৃত্বও নিহত ছাত্রীর পরিবারের পাশে থাকা আশ্বাস দিয়েছে৷ কাকদ্বীপের সমস্ত জগদ্ধাত্রী পুজোর সংগঠকরা মণ্ডপে মণ্ডপে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে৷ রবিবার প্রত্যেক পুজোর ভাসান থাকলেও বন্ধ ছিল শোভাযাত্রা৷ নিহত ছাত্রীর বাবা কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ পরে তিনি বলেন, 'আমাদের দিন আনতে দিন খাওয়া৷ এত কষ্টের মধ্যেও মেয়েটার পড়াশোনা বন্ধ হতে দিইনি৷ টেস্ট পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছিল৷ এক নিমেষে সব শেষ হয়ে গেল৷' ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস জানান, 'ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই৷ ঘটনার প্রথম খবর পাওয়ার পর ভাবতে পারিনি মেধাবী ছাত্রীটি এ ভাবে অকালে চলে যাবে৷ ঘটনার পর থেকে স্কুলের বাকি ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে৷'


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles