Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

প্রতিকূলতা জয় করে জীবনের ময়দানে রাজ-সালমারা

$
0
0

এই সময়: ওরা কেউ বেড়ে ওঠে নোংরা খাল লাগোয়া বস্তিতে৷ কেউ প্লাস্টিক বেচে পরিবারের মুখে দু'মুঠো খাবার জোগায়৷ কেউ সেরিব্রাল পলসি, অটিজমের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শিখতে চেষ্টা করে নতুন কিছু৷ কোনির মতো ফাইটটাই ওঁদের জীবনের মূলমন্ত্র৷ ওরা- খুশি, রাজকুমার, সাহেবান, তমন্না, শ্রীতমা৷ আর ওদেরই মতো আরও বারোশো শিশু৷ রবিবারের সকালটা যাদের জীবনে বয়ে আনল আনন্দের হিন্দোল৷ হার না-মেনে ফাইট চালানোর অক্সিজেনটা ওরা নিয়ে নিল নিকো পার্কে দিনভোর হুল্লোড় করে৷

টয় ট্রেন থেকে নেমেও দুলুনিটা টের পাচ্ছিল রাজকুমার৷ দাদাদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ বছরের ছেলেটা এই প্রথম এমনধারা ট্রেনে চেপেছে, তা নয়৷ কিন্ত্ত, শেষ কবে বসেছিল সেটা ভুলতে বসেছে প্রায়৷ বছরে এই একটা দিনই তো অন্য ভাবে কাটে তার৷ বাকি দিনগুলো ইন্দ্রজিত্‍দার সঙ্গে জীবনের লড়াইটা লড়ে সে৷ খুব ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে উলুবেড়িয়ার এক ছোট্ট হোমে ঠাঁই হয়েছিল ফুটফুটে একরত্তিটার৷ আদর করে হোমের লোকেরা নাম রেখেছিল রাজকুমার৷ কিন্ত্ত, রাজকুমারের যে রাজত্ব নেই৷ ট্রাস্টির ভরসায় চলা হোমের রেস্ততেও টানাটানি৷ তাই সুপার ইন্দ্রজিত্‍ দাশগুপ্ত আর বড় দাদাদের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই চালায় সে-ও৷ তবে পড়াশোনা করে বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন চোখ থেকে মেলায় না ছেলেটার৷

উলুবেড়িয়ার রাজকুমারকে চেনে না কামারহাটির সালমা৷ চেনার কথাও নয়৷ সম্মানজনক ভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করাটা শুধু এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে ওদের৷ রবিবার নিকো পার্কে রোটারি ক্লাব কলকাতার ৯০তম বার্ষিক উদ্যাপন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিল ওরা৷ আর হাজির হয়ে নিজের বস্তিজীবনটা ভুলেই গিয়েছিল ক্লাস সিক্সের সালমা৷ রোজ ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে লোকের বাড়ি বাসন মাজতে ছোটে সে৷ সাড়ে আটটার সময় সাত-আট বাড়ি কাজ সেরে সে যতক্ষণে ঘরে ফেরে, ততক্ষণে মা বাইরে কাজ করতে চলে গিয়েছেন৷ ছোট ভাই-বোনেদের সামলে স্কুলমুখী হয় সালমা৷ অনেকদিন যেতেও পারে না, চুল্লুখোর বাবার অত্যাচারে৷ তবু স্থানীয় সরকারি স্কুলে ৬০ শতাংশেরও বেশি নম্বর প্রায় প্রতিবার৷ ক্লাস ওয়ানের পর পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যার, স্রেফ নিজের ইচ্ছা আর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চেষ্টায় জীবনের আলোয় ফিরতে উদ্যোগী হয়েছে সে৷

পার্কের হুল্লোড়ে সালমাদের দলেই মিশে ছিল বছর বারোর সাহেরান আলি৷ দোকানে দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে সে৷ বাড়িতে অসুস্থ বাবা৷ তাই পরিবারের দায়িত্ব তার রোগা প্যাংলা কাঁধেই৷ এর পর কি পড়াশোনা হয়? হয়৷ চেষ্টা থাকলেই হয়৷ বারবার স্কুলছুট হলেও হয়৷ আর তার প্রমাণ ক্লাস সিক্সের এই সাহেবান আলিই৷ গত পাঁচ বছরে বার তিনেক স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে সে৷ ফিরেও এসেছে মনের জেদে ভর করে৷ শ্যামলা রঙের ঢ্যাঙা ছেলেটার মার্কশিটে তাই জ্বলজ্বল করে ৭০-৮০ শতাংশ করে নম্বর৷

এই রবিবারটা রাজকুমার, সাহেরান, সালমাদের কাছে কতটা আলাদা, সেটা বলে দিচ্ছিল ওদের হাবভাবই৷ কেমন লাগছে? একলহমায় মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল সবার৷ ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ বলে উঠল, 'খুব খুব আনন্দ করছি৷ এখানে খুব ভালো লাগছে৷ রাইডগুলোও খুব ভালো৷ কতরকম গান বাজে৷ আর ওই ঘোড়াটা? কী মজার রাইড!' এই মজা একটা দিনের জন্য কঠিন বাস্তবটা ভুলিয়ে দিল ওদের৷


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249