সকাল থেকেই তীব্র অশান্তি ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সামনে। ডিএসও-র বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। কামদুনি মামলার রায় ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনা। আদালত চত্বরে হাজির ছিলেন কামদুনি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী মুখ টুম্পা কয়াল, মৌসুমি কয়াল, শিক্ষক প্রদীপ চক্রবর্তী-সহ কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। অধীর আগ্রহে রাজ্যবাসী অপেক্ষা করছিল সাম্প্রতিককালের অন্যতম নিকৃষ্ট অপরাধের রায় নিয়ে। অবশেষে বিচার পেল কামদুনি। গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করা হয়েছে দু'জনকে। দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, আমিনূর ইসলাম, গোপাল নস্কর, ভোলানাথ নস্কর, সইফুল আলি, আনসার আলি ও শেখ ইমানুল ইসলাম। বেকসুর খালাস হয়েছে রফিকুল গাজি ও নূর আলি।
যদিও আদালতের রায়ে খুশি নন নির্যাতিতার পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, যে দু'জনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে, তারাও দোষী। ধর্ষণ ও খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পুলিশি ব্যর্থতায় বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্য টুম্পা কয়ালের প্রশ্ন, চার্জশিটে নাম থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে খালাস পায় দুই অভিযুক্ত। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার ভাই।
এই ঘটনায় সিআইডি তদন্তে দেখা যায়, নৃশংস ভাবে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল কলেজছাত্রীকে৷ ঘটনার মূল অভিযুক্ত সইফুল আলি তার ছ'-সাত জন শাগরেদের সঙ্গে জুয়া খেলে জেতা টাকা দিয়ে মদ-মাংস কিনে খেয়েছিল ২০১৩ সালের ৭ জুন৷ অন্যরা চলে গেলে সাইফুল দুপুরের দিকে দেখতে পায়, ডিরোজিও কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটি ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একা ফিরছে৷ প্রথমে তার হাত ধরে টানে সইফুল, তার পর ধাক্কা দিতেই অজ্ঞান হয়ে যান অপরাজিতা৷ তাকে পাঁচিল-ঘেরা জায়গায় নিয়ে যায় সইফুল৷ জ্ঞান ফিরতেই ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে৷ ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন অপরাজিতা৷ এর পরে সাইফুল গলা এবং নাক টিপে ধরে তাঁকে খুন করে৷ তার পর জলা জায়গার ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে গিয়ে পাঁচিলের ধারে ফেলে রাখে৷ বিকেলের দিকে শাগরেদরা ফিরলে সইফুল তাদের ঘটনার কথা জানায়৷ সকলে মিলে পরামর্শ করে ঠিক করে, রাত বাড়লে মৃতদেহটি গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হবে৷ কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই এলাকার লোকজন অপরাজিতাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ায় অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায়৷
এই ভয়াবহ ঘটনার কিছু দিন পরেই শাসকদলের নির্দেশে এলাকা ছাড়ে নির্যাতিতার পরিবার৷ এত দিন তাঁরা বহিরা কালীবাড়িতে নিহত ছাত্রীর মামার বাড়িতে থাকলেও, গত চার দিন ধরে তেহাটা গ্রামে পিসির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার পর ওই ছাত্রীর পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিন জনকেই সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে শাসকদল৷ নিহত ছাত্রীর বাবা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদ দপ্তরে, বড় ভাই প্রাইমারি স্কুলে এবং ছোট ভাই মহাকরণে চাকরি পেয়েছেন৷
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৩ সালের ৭ জুনের পর কেটে গিয়েছে দু'বছর ৭ মাস। ৩১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। অবশেষে রায় ঘোষণা। কামদুনি গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল কলকাতা নগর দায়রা আদালত। তথ্যপ্রমাণের অভাবে বাকি দু'জন বেকসুর খালাস। আদালত সূত্রের খবর,যাবজ্জীবন হতে পারে তিনজনের। তিনজনের ফাঁসির সাজা হতে পারে।