শিয়রে ৭০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, অথচ তদন্তে গড়িমসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের!
যাঁর ঘাড়ে আর্থিক বেনিয়মের সব বোঝা চাপিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, সেই বরখাস্ত হওয়া ফিনান্স অফিসার হরিসাধন ঘোষকে নিয়ে কী করা যায়, তা ভেবে পাচ্ছেন না কর্তারা৷ তহবিল কেলেঙ্কারির তদন্ত বর্তমানে অথৈ জলে৷ ঘরোয়া তদন্তের পর যাঁকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়, সেই হরিসাধনবাবুর শাস্তি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে দিশাহীনতায় ভুগছে সিন্ডিকেট অনুমোদিত শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি৷ অথচ, তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে হরিসাধনবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করে চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে৷
কিন্ত্ত অভিযোগ করলেই তো আর হল না! কী ভাবে সেই অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে পড়েছেন কর্তারা৷ নিট ফল, একের পর এক শুনানির তারিখ পিছিয়েই চলেছে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি৷ এ নিয়ে চার মাসে চার বার শুনানির তারিখ পড়লেও, শাস্তির পক্ষে তেমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি৷ সে কারণেই নানা অজুহাত দেখিয়ে দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ পরবর্তী শুনানি পড়েছে ২১ ডিসেম্বর৷ অথচ, এই তদন্ত ও সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়ার জন্যই একটি বড় সলিসিটর ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগ, ঢিলেমির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা কেবল সেই খাতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে৷
এই আবহে ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিনে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ কারণ, আসরে সেই যৌথ মঞ্চ৷ যাদের হাত ধরে আগামী মাস থেকে ফের আন্দোলনমুখী হতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়৷
গত ১৩ অগস্ট সিন্ডিকেট জানিয়ে দিয়েছিল, ২৮ অগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করবে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি৷ তারও আগে জুলাই মাসে আচার্য-রাজ্যপাল সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে হবে৷ তার পরেও কেন শুনানি নিয়ে এমন টালবাহানা? শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'আমার হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই ভাই৷ আমি এ কথা সিন্ডিকেটেও বলেছি৷ আইনি প্রক্রিয়ায় যে ভাবে এগোনো উচিত, এগোচ্ছি৷ ৪ নভেম্বর শেষ শুনানির দিন হরিসাধনবাবু আমাদের চিঠি দিয়ে জানান, যে অভিযোগ ওঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ দিতে হবে৷ তাই আমরা সেই তথ্য প্রমাণ জোগাড় করার জন্য সময় চেয়েছি৷'
যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক দিব্যেন্দু পালের পাল্টা বক্তব্য, 'তথ্যপ্রমাণ তো জোগাড় করার কথা তদন্ত কমিটির৷ তারা তো গত ৩০ এপ্রিল হরিসাধনবাবুর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করেছে৷ সেই চার্জশিটের ভিত্তিতেই সাজা ঘোষণা করার কথা অরুণবাবুদের৷ এতেই স্পষ্ট, ওই চার্জশিটে তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ ছিলই না৷ তা হলে কীসের ভিত্তিতে এই সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া?' যদিও অরুণবাবু জানিয়েছেন, দিব্যেন্দু পালদের সন্তুষ্ট করা ওঁর কাজ নয়৷ উপাচার্য সুগত মারজিত বলছেন, 'আমার আশা, যৌথ মঞ্চ বা কেউ এমন কোনও কাজ করবে না, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সমস্যা হয়৷ এর বাইরে এটুকু বলতে পারি, যদি কোথাও সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে তারা আদালতে যাক৷ আদালতই বলে দিক, আমি কী করব বা করব না৷' তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি হরিসাধন ঘোষ৷
Joy.Saha @timesgroup.com