সৌগত একা নন, জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও দলের কর্মী-সমর্থকদের সেই কথাই জানিয়েছেন৷ তবে মদনের লড়াইকে কঠিন ধরে নিয়ে এখন থেকেই কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন দলের নেতারা৷ সূত্রের খবর, সৌগত-জ্যোতিপ্রিয় এই ঘোষণা করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই৷
দীর্ঘ কারাবাসের মধ্যে জামিন পেতে মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে 'প্রভাবশালী'-র তকমা ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন মদন৷ দলও তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরির আবহ রচনা করতে 'উপেক্ষার' কৌশল নিয়েছিল৷ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মদন সম্পর্কে জনসাধারণের সংশয় আরও বেড়েছিল৷
এক জনসভায় মমতা বলেছিলেন, কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতির দায় দলের নয়৷ তখনই কৌতূহল জেগেছিল, তা হলে কি মদনের কথা মাথায় রেখেই এমন কথা বলছেন নেত্রী? সপ্তাহ দুয়েক আগে অবশ্য মদন নিজেই আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে জানান, দল প্রার্থী করতে চাইলে তিনি ভোটে লড়তে রাজি৷ অবশেষে দলেরই কর্মিসভায় সৌগতর মতো প্রবীণ নেতার মুখ দিয়ে মদনকে ফের টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়ে দিল দল৷
এ দিন কামারহাটির দেশপ্রিয়নগরে কর্মিসভায় সৌগত বলেন, 'কামারহাটির কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে একটা অসুবিধার মধ্যে আছেন, এটা আমি জানি | পুরসভা নির্বাচনে আমরা আমাদের বিধায়ককে পাশে পাইনি | তবে এই কর্মী সম্মেলন থেকেই ঘোষণা করতে চাই, মদন মিত্রই আবার কামারহাটি থেকে আমাদের প্রার্থী হচ্ছেন৷ এটাই দলের সিদ্ধান্ত |'
এর পর সেই মঞ্চেই সৌগতর সুরে সুর মেলান তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় | তিনি বলেন, 'কোনওদিন কামারহাটির মানুষকে মদন মিত্রের অভাব বুঝতে দিইনি | মদন মিত্র আবার এই বিধানসভারই প্রার্থী হবেন |'
অনেকেই মনে করছেন, কামারহাটির প্রার্থী হিসেবে আগাম মদনের নাম ঘোষণা করে 'সাহসের' পরিচয় দিয়েছে দল৷ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই লড়াইটাকে 'দাঁড়ালাম আর জিতে গেলাম'-এর মতো সহজ ভাবে দেখছে না৷ সৌগতরা কামারহাটির তৃণমূল কর্মীদের এখন থেকেই মাঠে নেমে মদনের জয়ের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কর্মীদের প্রতি সৌগতর পরামর্শ, 'আগামী দিনে তাঁকে (মদন) জেতাতে হবে | এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে | আপনারা এখন থেকেই নেমে পড়ুন, যাতে ওঁকে যত বেশি সম্ভব ভোটে জেতানো যায়৷ আমি নিজে অনেকবার ভোটে প্রার্থী হয়েছি | আমি জানি, প্রার্থী নিজে জেতেন না | ভোট দিয়ে জেতায় জনগণ | জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে দেন পার্টির কর্মীরাই|'
দলের অন্দরেও উত্তর ২৪ পরগনার দাপুটে নেতারা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, হাজার হোক মদন এখন জেলবন্দি৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হোক বা না-হোক, সারদা মামলায় দীর্ঘ কারাবাসের ফলে জনতার মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ জেলার এক নেতার কথায়, 'কর্মীরা ওঁকে কতটা ভালোবাসল তার থেকেও বড় প্রশ্ন, এলাকার সাধারণ ভোটাররা ওঁকে প্রত্যাখ্যান করে বসে নেই তো? এখানেই তো বুথ স্তরের কর্মীদের চ্যালেঞ্জ৷'
সৌগতরা মদন সম্পর্কে দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেই সভায় প্রবল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কামারহাটির তৃণমূলকর্মীরা৷ কারও বুঝতে অসুুবিধা হয়নি, খোদ দলনেত্রীর বার্তাই দিয়েছেন বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়৷
তবে মদনকে ফের প্রার্থী করা নিয়ে দলের মধ্যে যে কোনও টানাপোড়েনই চলেনি, এমন নয়৷ দলের একটি অংশ চায়নি, মদনকে ফের প্রার্থী করার ঝুঁকি নিক দল৷ এই তালিকায় মদনের কাছের লোকও আছে বলে দলীয় সূত্রে একাধিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে৷ তাঁরা ধরেই নিয়েছেন এমন প্যাঁচে পড়ার পর মদনের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না৷ কিন্ত্ত এর উল্টো দিকের যুক্তি হল, মদনকে প্রার্থী না-করার ঝুঁকি নিলেও বিপদ হতে পারে বলে আঁচ পেয়েছে দল৷
তিনি যাই করে থাকুন না-কেন, বিপদে আপদে চেনা-অচেনা বহু মানুষের 'মুশকিল আসান' হিসেবে তাঁর একটা আলাদা পরিচিতি আছে বাজারে৷ সুতরাং কামারহাটিতে ঘাসফুল চিহ্নের প্রতীক নিয়ে অন্য কোনও মুখকে ভোটে দাঁড় করালে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ ভোটের দিন খেলা উল্টে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা ছিল দলে৷
এই সময়: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় বহু চমক থাকতেই পারে৷ কিন্ত্ত তার অনেক আগেই বড় মাপের চমক৷ জেলবন্দি মদনকে দল আর প্রার্থী করবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর কৌতূহল ছিল৷ শনিবার কামারহাটিতে দলের এক কর্মিসভায় দমদমের সাংসদ সৌগত রায় জানিয়ে দিলেন, কামারহাটিতে মদনই দলের প্রার্থী৷