Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

আমেদাবাদের আকাশে উড়ছে অক্টোপাস-ডলফিন

$
0
0

কমলেশ চৌধুরী, আমেদাবাদ

শীতের আকাশে রামধনুর ছটা! অপেক্ষা ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের৷ মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেল আর রাজ্যপাল ওমপ্রকাশ কোহলির হাত থেকে বেলুনে বাঁধা ঘুড়ি উড়ে যেতেই মুহূর্তে রঙিন হয়ে গেল সবরমতীর সাজানো পাড়৷ নীল আকাশের দখল নিল দেশ-বিদেশের ঘুড়ি৷ ভোকাট্টা নেই৷ শুধুই লাটাই-মাঞ্জা হাতে ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা৷ আর খেলার মজা৷

বাঙালির যদি থাকে বিশ্বকর্মা পুজো, তবে গুজরাটিদের মকরসংক্রান্তি৷ উত্তরায়ণ৷ ১৪ জানুয়ারি গুজরাটের ঘর ঘর থেকে ঘুড়ি উড়বে৷ তারই প্রস্ত্ততির ছবি কালুপুর, জামালপুরের ঘুড়ি বাজারে৷ বড় রাস্তার পাশেও চলছে মাঞ্জা নিয়ে পাঞ্জা লড়ার প্রস্ত্ততি৷ গুজরাটিদের এই উত্‍সবকে সামনে রেখেই ১৯৮৯ সালে আমেদাবাদে 'আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উত্‍সব' শুরু করেছিল রাজ্য সরকার৷ উদ্দেশ্য, রাজ্যে পর্যটক বাড়ানো৷ ২৭ বছরে পৌঁছে উত্‍সব অনেক সাবালক৷

শুধু আমেদাবাদ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের আরও ১২ শহরে৷ বড় এবং সেরার তকমা অবশ্য এখনও আমেদাবাদের ঝুলিতেই৷ এসেছেন ৩১ দেশের ৯৮ ঘুড়িপ্রেমী৷ সঙ্গে অন্য রাজ্যের ৫৫ জন, স্থানীয় আরও ৫০৷ বুধবার পর্যন্ত আমেদাবাদ রিভারফ্রন্টে ঘুড়ি ওড়াবেন ওঁরা৷ বৃহস্পতিবার আমজনতার পালা৷ রবিবার সেই উত্‍সবেরই ঢাকে কাঠি পড়ে গেল৷

গুজরাট সরকার সবরমতীর পাড়ে সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে সাদা কংক্রিটে ঢেকে ফেলেছে৷ দেখে মনে হয়, ক্যানাল৷ নদীর হারিয়ে যাওয়া সেই স্বাভাবিক সৌন্দর্য যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরিয়ে দিল ঘুড়ির উত্‍সব৷ আকাশে উড়ছে অক্টোপাস, ডলফিন, স্টিং রে৷ বাঙালির চার কোনা চেনা ঘুড়ির জগতে এ এক অন্য পৃথিবী৷ ২০ মিটার লম্বা ডলফিন ঘুড়ি নিয়ে এসেছেন নিউ জিল্যান্ডের স্তেফান কুক৷ ওজন প্রায় ১০ কেজি৷ ঘুড়ি উড়তেই হাততালির ঝড়৷ এর খানিক ক্ষণ পরেই আস্তিন থেকে অক্টোপাস বের করল মার্কিন দলটি৷



ইংল্যান্ডের রবার্ট উইলিয়ম ওড়ালেন সুপারম্যান৷ উত্‍সবে রবার্টের এ বার নবম বছর৷ এত বার এসেছেন যে, আমেদাবাদে বহু বন্ধুবান্ধব৷ বেলজিয়ামের রজারের আবার এ বারই প্রথম আসা৷ সঙ্গে এনেছেন 'ব্রিডল্যান্ড' ঘুড়ি৷ মানুষজনের ভিড় আর উত্‍সাহ দেখে বেশ অবাক৷ বললেন, 'এত লোক হাততালি দিচ্ছে, পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চাইছে, আগে কোথাও দেখিনি৷' কদর পাচ্ছে চিনের ড্রাগন ঘুড়িও৷ ফুটবলে শত্রু ব্রাজিল আর্জেন্তিনা এখানে পরম বন্ধু৷ একজন এক সুতোয় ৫০টি ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন তো অন্য জন অ্যাক্রোবেটিক ঘুড়ির কারসাজি দেখাতে ব্যস্ত৷ প্রতিযোগিতার কোনও বালাই নেই৷

আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা না থাকতে পারে৷ মনে মনে কিন্ত্ত বিদেশের ঘুড়িকে টেক্কা দিতে তৈরি হয়েই এসেছেন ভারতীয় ঘুড়িপ্রেমীরা৷ যেমন আমেদাবাদের উত্‍পল প্যাটেল৷ হিলিয়াম গ্যাসকে হাতিয়ার করে ফোমের ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন তিনি৷ বাক্স থেকে ফোম বেরিয়ে আসছে৷ ঘুড়ির টেমপ্লেট সাজানো ফোম লাঠির সাহায্যে কেটে দিলেই উড়ে যাচ্ছে ঘুড়ি৷ মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেল নিজে সেই অভিনব ঘুড়ি ওড়ালেন৷ জানা গেল, ৫ ঘণ্টা ধরে ফোমের ঘুড়ি ওড়াতে খরচ প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা৷ আমেদাবাদের গোপাল প্যাটেল দলবল নিয়ে ওড়ালেন প্রায় ৩০ কেজির 'রিং কাইট'৷

পুরোটায় হাওয়া ভরলে ব্যাস দাঁড়ায় ১৫৫ ফুট৷ উড়তে পারে ১০০ মিটার পর্যন্ত৷ একটা বানাতে সময় লাগে দেড় মাস৷ খরচ প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা৷ পাঞ্জাবের বিজ্ঞানী দেবেন্দ্র পাল সিং সেহগাল আবার ঘুড়ি নিয়ে সচেতনতার প্রচারে নেমেছেন৷ তাঁর ঘুড়িতে স্বচ্ছ ভারত থেকে কন্যাভ্রূণ বাঁচানোর কথা৷ বললেন, 'সবচেয়ে ছোট ঘুড়ি, সবচেয়ে ছোট লাটাই বানিয়ে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলেছি আমি৷ আর দেখিয়ে দিতে চাই, ঘুড়ি উড়িয়েও মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা যায়৷'

রাজস্থানের আব্দুল কাদির, কর্নাটকের গোপাল রাও একটি সুতোয় ৫০ থেকে ২০০টি ঘুড়ি লাগিয়ে তাক লাগাচ্ছেন৷ ডেল্টা কাইট নিয়ে হাজির তামিলনাড়ুর সুন্দর মূর্তি৷ আমেদাবাদে হাজির বাংলাও৷ কাগজ, বাঁশের চিরাচরিত ঘুড়ি, সঙ্গে সান্তা, প্রজাপতির মতো কিছু নতুন উদ্ভাবন নিয়ে হাততালি কুড়োচ্ছেন কলকাতার বিবেকানন্দ রোডের সোমনাথ বর্মন৷

সকালের স্ফূর্তি বেলা বাড়তেই কিছুটা পড়ে এল৷ অবশ্য আমজনতা বা ঘুড়ি খেলুড়ে- কারও উত্‍সাহে ভাটা নেই৷ ভাটা হাওয়ায়৷ মোদী আর মমতার রাজ্যের এই মুহূর্তে একটা বিষয়ে খুব মিল৷ শীত বেপাত্তা৷ বেলা বাড়তেই গনগনে রোদ সহ্য করতে হচ্ছে৷ যদিও বেলা পড়তেই ঘুড়ির পালে আবার হাওয়া লাগল৷ স্থানীয় দর্শক তখন সোল্লাসে মেতে৷ ক'দিন পর লাটাই থাকবে ওঁদেরই হাতে৷ তখন আর স্রেফ মজা নয়, চলবে কাটাকাটির অঙ্ক৷ তবেই না গুজরাট বলবে, কাই পো চে!


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>