৬০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে পড়ার পর বিশ্বজিতের দুটি বদল৷ খাবরা ও তুলুঙ্গাকে তুলে নিয়ে সাবিথ ও রফিকের মতো দুই দ্রুত গতির ফুটবলারকে এনে পাল্টা আক্রমণে চলে যাওয়ায় ম্যাচের রং বদল হল৷ দংয়ের দৌড় শুরু থেকেই থামিয়েছিলেনস্পোর্টিং ডিফেন্ডাররা৷ ফলে র্র্যান্টি একা৷ সাবিথ , রফিক দৌড় শুরু করতেই স্পোর্টিং ডিফেন্সে ফাটল৷ দংয়ের ভাসানো সেন্টারে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে হেডে প্রথম গোল র্র্যান্টির৷ তারপর বিকাশ জাইরুর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলা বল র্র্যান্টি সাজিয়ে দিলেন বিকাশকেই৷ টিমের দ্বিতীয় গোল ভাইচুংয়ের রাজ্যের ছেলে বিকাশের৷ তারপরের গোল র্র্যান্টির৷ বুকে করে চমত্কার বল নামিয়ে ঠান্ডা মাথায় স্পোর্টিং কিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে বোকা বানালেন তিনি৷আর এই গোলের পরই ওডাফাকে ছাপিয়ে নায়ক র্যান্টিই৷ আর বিশ্বজিত্ ফেসবুকে লিখলেন , 'দৌড় শুরু৷ এ বার শুধু ফাইট৷ একটা গোল খেলে দুটো দেব৷ দুটো খেলে চারটে ...৷ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেললেন : রেহনেস , রবার্ট, অর্ণব , বেলো , সামাদ , বিকাশ , খাবরা (সাবিথ ৬২ ), শেহনাজ (দীপক ৮৯ ), তুলুঙ্গা (রফিক ৬২ ), দং , র্যান্টি৷
স্পোর্টিং ক্লুব দে গোয়া - ১ : ইস্টবেঙ্গল -৩(ওডাফা ২৮ ) (র্র্যান্টি ৬৭ , ৮০ , বিকাশ ৭৮ )এই সময় : জনপ্রিয় সিনেমার গানে বলা ছিল , সত্যম , শিবম , সুন্দরম ---এই তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন , তাদের কাছে যেন দুঃখের পৃথিবীটাও আনন্দ আশ্রম হয়৷আর র্র্যান্টি মার্টিন্সের কাছে দুঃখের পৃথিবীকে আনন্দ আশ্রমে পরিণত করার তিনটে মন্ত্র হল ---ফুটবল , ফ্যামিলি আর ফিটনেস৷ ১১ বছর আগে ১৯ বছরের এক নাইজিরীয় গোয়াতে খেলতে এসেই ধাক্কা খেয়েছিলেন৷ ডুরান্ড কাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ডেম্পোর পক্ষ থেকে র্র্যান্টি মার্টিন্সকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল , 'ফেডারেশন কাপটাই তোমার কাছে শেষ পরীক্ষা৷ ভালো খেললে থাকবে , নইলে হাতে পাবে লাগোসে ফেরার টিকিট৷ ' ২০০৪ সালের সেই ফেডারেশন কাপটা সকলের কাছেই স্মরণীয়৷ ব্রাজিলীয় ফুটবলার জুনিয়রের মাঠেই মৃত্যু৷ আর র্যান্টির হাত ধরে ডেম্পোর প্রথম বার ফেডারেশন কাপ জয়৷২০০৪ সাল থেকে ২০১৬৷ ১১ বছর পরও ৩০ বছরের র্র্যান্টি বুঝিয়ে দিলেন তাঁকে নিয়ে যখনই প্রশ্ন উঠবে , তখনই তিনি জ্বলে উঠবেন , উঠবেনই৷
রবিবার ফাতোরদা স্টেডিয়ামে র্র্যান্টির ঘুরে দাঁড়ানোর চকমকির আগুনেই ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জেতার মশাল জ্বলল৷ স্পোর্টিং ক্লুব দে গোয়ার কাছে ২৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পরও বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্যের টিম ৩ -১ জয় পেল র্র্যান্টির জোড়া গোল করা আর গোল করানোর দক্ষতায়৷ এই প্রথম ইস্টবেঙ্গল গোয়ায় প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে জয় পেল৷ চার বার খেলেম্যাচের পর মারগাও থেকে ফোনে বিশ্বজিত্ বলছিলেন , 'আমি আমার ছেলেদের দায়বদ্ধতা দেখে মুগ্ধ৷ মেহতাবকে রেখে টিম গড়েছিলাম৷ সকালে ও নিজেই বলল , কোচ আমার সামান্য চোট আছে৷ আমি খারাপ খেললে তোমার ঘাড়ে দায় বর্তাবে৷ তুমি আমার বদলে পুরো ফিট কাউকে খেলাও৷ ' শুধু এখানে শেষ নয় , লাল হলুদ কোচ বলে চলেন , 'খাবরার স্ত্রী খুব অসুস্থ৷ অসম্ভব মনের চাপ নিয়েও ও যথেষ্ট কার্যকারী ফুটবল খেলল৷ গলায় ঘুসি খেয়ে প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়েই র্র্যান্টি পুরো ম্যাচ খেলে গেল৷ আমি মুগ্ধ৷ 'কলকাতা লিগে মাত্র এক গোল৷ তারপর বাংলাদেশের টুর্নামেন্টে ম্যাচ উইনার হয়ে উঠতে না পারা৷ র্র্যান্টি কাছে এ বারও তাই লাগোসের টিকিট কাটানোর মতো হয়ে উঠেছিল৷ সেই জায়গা থেকেই ফের ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি৷
ভারতে আসা ইস্তক র্র্যান্টিকে যিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন , সেই ডেম্পো ও ইস্টবেঙ্গলে খেলা গোলকিপার অভিজিত্ মণ্ডল বলছিলেন , 'ওর জীবনে তিনটে মন্ত্র৷ ফুটবল , ফ্যামিলি আর ফিটনেস৷ ' কী ভাবে র্র্যান্টি এই তিন মন্ত্রকে সামনে রেখে এগোন ? ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে র্র্যান্টির সবথেকে ঘনিষ্ঠ অভিজিত্ বলে চলেন , 'খারাপ সময় এলে র্র্যান্টি আরও বেশি করে ফুটবলে ডুবে যায়৷ ফ্যামিলির সঙ্গে বেশি করে সময় কাটায়৷ আর ফিটনেসের জন্য সারাক্ষণ ফিজিওর কাছে পড়ে থাকে৷ আর সেটাই ওকে আসল সময় ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে৷ যা করল আজও৷ 'রবিবার ফাতোরদার ম্যাচটার শুরু দেখে অবশ্য মনে হয়নি , দিনটা র্র্যান্টি হতে চলেছে৷ বরং ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে এক অসাধারণ যোদ্ধা বলে মনে হচ্ছিল স্পোর্টিংয়ের নাইজিরীয় ওডাফাকে৷ ছিপছিপে চেহারা বানানো ওডাফা আমার ছেলেদের দায়বদ্ধতা দেখে মুগ্ধ৷ মেহতাবকে রেখে টিম গড়েছিলাম৷ সকালে ও নিজেই বলল , কোচ আমার সামান্য চোট আছে৷ আমি খারাপ খেললে তোমার ঘাড়ে দায় বর্তাবে৷ পুরো ফিট কাউকে খেলাওবিশ্বজিত্ ভট্টাচার্যএকটা ম্যাচ দেখে আই লিগে টিমের ভূত -ভবিষ্যত্ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷
তবে এক গোলে পিছিয়ে পরে তিন গোলে জয় যে কোনও টিমের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট৷ একই কথা খাটে র্র্যান্টি মার্টিন্সের জন্যও৷ র্র্যান্টি যে ব্যর্থতা কাটিয়ে গোলে ফিরল , এটা শুধু ওর পক্ষে নয় , টিমের পক্ষেও দারুণ পজিটিভ দিক৷ দো দংকে কলকাতা লিগে যা দেখেছিলাম তার থেকে কিছুটা আনফিট লাগল৷ টিমের ডিফেন্স সংগঠনকে অনেক মজবুত করতে হবে৷সুরজিত্ সেনগুপ্ত র্র্যান্টি মার্টিন্সকে তার পেশাদারিত্ব দেখাল৷ কলকাতা লিগের জড়তা কাটিয়ে আসল সময়ে নিজেকে মেলে ধরে৷ প্রথম ম্যাচ দেখে মনে হল , ইস্টবেঙ্গল এ বারও ওর ওপরই নির্ভরশীল হবে৷ দো দংয়ের কাছে আমি বেশি প্রত্যাশা করিনি৷ জানতাম , কলকাতা লিগে খেলা আর আই লিগে সেই মানে খেলার মধ্যে অনেক তফাত্৷ ও আজ বারবার ধরা পড়েছে প্রতিপক্ষের বড় চেহারার কাছে৷ ওকে স্টাইল বদলে বাইরের দিক দিয়ে অর্থাত্ উইং দিয়ে খেলতে হবে৷ টিমের স্বদেশিদের মধ্যে বিকাশ জাইরুকে বেশ ভালো লাগল৷ ও লম্বা রেসের ঘোড়া৷ সমরেশ চৌধুরীপিছিয়ে পড়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে ভালো জয় এল৷ তবে এখনই এ নিয়ে হইচইয়ের কোনও জায়গা নেই৷ এ তো আর কলকাতা লিগ নয় , যে বড় ম্যাচটা বার করে ফেললেই হয় ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে৷ আই লিগ জেতার জন্য ধারাবাহিকতাটাই আসল৷ এখন সব কোচ সবে টিম গুছোচ্ছেন৷ তাই অন্তত ৫ -৬ ম্যাচ না গেলে টিমের গভীরতা ও ভবিষ্যত্ নিয়ে কিছু বলা যাবে না৷ কোনও ফুটবলারকে নিয়েও আলাদা মন্তব্য করাটাও বোকামি৷
আই অ্যাম আই লিগ গোয়ায় চেনা মাঠে চেনা উল্লাস র্র্যান্টির৷ কাঁধে অন্য স্কোরার বিকাশ৷ রবিবার মারগাওয়ে ---অরবিন্দ টেংসেতিন ঘরের ছেলের চোখেযেন ৬-৭ বছর আগের চার্চিল ব্রাদার্সের 'কিং কোবরা '৷ যার এক ছোবলেই ছবি হয়ে যাওয়ার গল্প৷ খেলার ২৮ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে তিনি যে ছোবলটা দিলেন তা ছবির মতোই৷ প্রত্যেশ শিরোদগারের থেকে পাওয়া থ্রু ধরে তিনি বেলোকে টার্নিংয়েই গা থেকে ঝেড়ে ফেললেন৷ তারপর বক্সের মধ্যে অর্ণবকে দু- দু'বার ফেলে দিয়ে অনায়াস ভঙ্গিতে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে গোল করলেন ওডাফা৷ তারপর তা উত্সর্গ করলেন ভূমিষ্ঠ হতে যাওয়া চতুর্থ সন্তানের জন্য৷ তারপরও একাধিকবার তিনি বেসামাল করে দিলেন তাঁর মার্কার শেহনাজ ও দুই স্টপার বেলো , অর্ণবকে৷ তাঁর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হল৷ শট পোস্টে লেগে ফিরল৷