বছরের প্রথম দিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রণংদেহি হয়ে উঠলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়৷ কোনও রাখঢাক না -করে তিনি জানিয়ে দিলেন , 'কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলে আমার সহ্য হয় না৷ আগেও সহ্য হত না৷ ভবিষ্যতেও হবে না৷ ' রাজনীতির মাঠে মুখ্যমন্ত্রীকে রেয়াত করার তো প্রশ্নই নেই , বরং আগামী দিনে তিনি যে মমতা -প্রশ্নে আরও আক্রমণ শানাবেন , তা শুক্রবার নিজের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে বসে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন 'দ্রৌপদী '৷ঘটনা হল , রূপাও কিন্ত্ত মমতার মতো বিরোধীদের 'অলআউট ' আক্রমণে বিশ্বাস করেন৷ তাই তাঁর দলেরই কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল সুপ্রিয় যখন আসানসোলে তৃণমূলের মঞ্চে উঠে গান গাইছেন , তখন রূপা কোনও রাখঢাক না -করেই বলে ফেললেন মমতা সম্পর্কে তাঁর বীতরাগের কথা৷ বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলের মঞ্চে গান গাওয়ার খবর তখনও পেঁৗছয়নি রূপার কানে৷
ঠিক যেমন বিজেপির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবুলের ঝালমুড়ি খাওয়া 'বরদাস্ত ' করেননি এই দাপুটে নেত্রী৷ সহ্য করেননি আইনস্টাইনের তত্ত্ব টেনে বাবুলের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়াও৷ তাই জনসভাতেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি৷ সে বিতর্ক অবশ্য চুকে গিয়েছে বহুদিন আগেই৷ সে সব আর নতুন করে মনে করতে চান না তিনি৷ মোবাইলে জরুরি মেসেজ পাঠাতে পাঠাতে রূপা বলছিলেন , 'বাবুল আমার অনেক দিনের বন্ধু৷ আমরা কেউ যখন বিজেপিতে আসেনি , তখন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব৷ লেবু চটকে লাভ হয় না৷ বরং , আরও তেতো হয়ে যায়৷ কিন্ত্ত ওই যে বললাম , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা আমি কোনও দিন সহ্য করব না৷ ' সদ্য রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর পদ পেয়েছেন তিনি৷ যদিও বিজেপি নেতারা সবাই জানেন , মহিলা মোর্চার কোনও বিশেষ দর নেই ৬ মুরলিধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দন্তরে৷ রাজ্য সভাপতি যা নির্দেশ দেন , তাই এত দিন বিনা প্রশ্নে মেনে এসেছেন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী৷
কিন্ত্ত সভানেত্রীর নাম যখন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় , তখন কি অন্য দৃশ্য দেখা যাবে বিজেপির অন্দরে ?কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রূপার সটান জবাব , 'সবার সঙ্গে আলোচনা করব ঠিকই৷ সবার মত শুনব৷ কিন্ত্ত সিদ্ধান্ত একাই নেব৷ কারণ , আমার সিদ্ধান্তের ভালো -মন্দের সব দায় আমারই৷ ' প্রাক্তনদের মতো বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে চলার 'বান্দা ' যে তিনি নন , তা এদিন ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেত্রী৷ পাঁচতলায় রূপার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে দু'টি কাঠবেড়ালির৷ তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে রূপার৷ কিন্ত প্রায় এক বছর রাজনীতির ময়দানে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেও কোনও রাজনৈতিক বন্ধু জোটেনি তাঁর৷ রূপার কথাতেই , 'রাজনীতিতে আমার কোনও বন্ধু নেই৷ যিনি মানুষের জন্য কাজ করবেন , তাঁর সঙ্গেই থাকব৷ '
মহিলা মোর্চার দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন ঠিকই৷ কিন্ত্ত আগামী বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির মহিলা ব্রিগেডকে নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন তো ? মুখে কিছু না বললেও , রূপার 'বডি ল্যাঙ্গোয়েজ '-এ সংশয় স্পষ্ট৷ কারণ তিনি বিলক্ষণ জানেন , এ রাজ্যে বিজেপির মহিলা মোর্চার কার্যত কোনও অস্তিত্ব নেই৷ তবুও চোয়াল শক্ত করে রূপার জবাব , 'প্রতিটা জেলায় যাব৷ ঢেলে সাজাব সংগঠন৷ পাশাপাশি , আগামী তিন তারিখ দিল্লির নেতাদের কাছেও জানতে চাইব , যে চেয়ারে আমাকে বসালেন , তার পায়া আছে তো ! পিছনে হেলান দিলে পড়ে যাব না তো ?' এর পরই তাঁর স্বগতোক্তি , 'ঢাল -তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার হলে যুদ্ধে জিতব কী ভাবে !'৷
Manipuspak.Sengupta@timesgroup.com