বিধানসভা নির্বাচনের দোরগড়ায় আর 'ছোট' ঘটনা নিয়েও আর বিরোধীদের হইচই করতে দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী৷ দুষ্কর্মে আর তিনি প্রশ্রয় দেবেন না, ক'দিন ধরেই সেই বার্তা দিচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার সেটা আরও স্পষ্ট করলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই গণ্ডগোল লেগে থাকা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে৷ ওই গণ্ডগোলের প্রতিটিতেই নাম জড়িয়েছে তাঁর দলের ছাত্র শাখার৷ সর্বশেষ ঘটনাটিতে টিএমসিপি-র এক নেতাও গ্রেন্তার হয়েছিল৷ রায়গঞ্জের কাছে গোয়ালপোখরে প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'প্রায়ই দেখি, ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডগোল হয়৷ এ সব যেন আর না হয়৷ আমাদের লক্ষ রাখতে হবে৷ আমি ভিসিকে বলব, স্ট্রংলি এটাকে হ্যান্ডেল করতে৷ যাতে ছেলেমেয়েরা শান্তিপুর্ণ ভাবে পড়াশোনা করতে পারে৷''আমাদের লক্ষ রাখতে হবে' বলে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত তাঁর দলের জেলা নেতাদেরই বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ কেননা, এ ধরনের ঘটনা আখেরে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে বুঝতে পেরেছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর পরের বক্তব্যেও ছিল নেতা-কর্মীদের সংযত হওয়ার পরোক্ষ নির্দেশ৷
মমতা বলেন, 'আমরাও ছাত্র রাজনীতি করেছি৷ একটি-দু'টি কলেজে কখনও কখনও গণ্ডগোল টুকটাক হয় নিশ্চয়ই৷ সেগুলোকে কখনও বড় আকার দিতে নেই৷ আমার মনে হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বেশি রাজনীতিকরণ না করে সেখানে ছেলেমেয়েরা ভালো করে পড়াশোনা করবে৷ সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য৷' অথচ ২০১২-এর ৫ জানুয়ারি রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহকে 'ছোট ঘটনা' বলে তা নিয়ে হইচই করার জন্য একসময় বিরোধীদের তুলোধনা করেছিলেন এই মুখ্যমন্ত্রীই৷ বলেছিলেন, ছোট ছোট ছেলেরা সামান্য ভুল করে ফেলেছে৷বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই মুখ্যমন্ত্রীই 'ছোট ছোট ছেলেদের' সেই 'সামান্য ভুলও' আর বরদাস্ত করতে রাজি নন৷ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, মুখ্যমন্ত্রী তত প্রকাশ্যে দলীয় নেতাদের বদলের প্রশাসনকেই সামনে আনতে চাইছেন৷ সোমবার মথুরাপুরে উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক সভায় জেলাশাসক পি বি সালিমের নাম ধরে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন৷ মঙ্গলবার গোয়ালপোখরের সভাতেও তাঁর মুখে ছিল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের দরাজ সার্টিফিকেট৷ পরে তপনে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রশাসনিক সভায় জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর নাম উচ্চারণ করে বলেন, 'তাপস ভালো কাজ করছে৷ আমি ওঁকে আইএএস দিয়ে দিলাম৷' তাপস চৌধুরী ডব্লিউবিসিএস অফিসার হিসেবেই জেলাশাসকের পদে যোগ দিয়েছিলেন৷
সভামঞ্চেও তিনি দলের নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধিদের হয়ে কিছুই বলেননি এ দিনের দু'টি সভায়৷ মঞ্চে এলাকার সাংসদ, বিধায়করা উপস্থিত থাকলেও উন্নয়নের সমস্ত কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন প্রশাসনকে৷ এমনকী, তাঁর দলের হাতে থাকলেও জেলা পরিষদের ভুমিকা নিয়েও একটি শব্দও খরচ করেননি মমতা৷ মঞ্চে সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতিরা থাকলেও তাঁদের তেমন আমল দেননি তিনি৷ বরং বেশি সময় ব্যয় করেছে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বাক্যালাপে৷ জনপ্রতিনিধিদের কাউকে ভাষণও দিতে দেননি তিনি৷ দু'দিন আগে গুলি করে দু'জনকে খুন করার অভিযোগে তাঁর নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয়েছে ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায়কে৷ সোমবার সুজাপুরে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির গুদামে বোমা ফেটে দু'জনের মৃত্যুর পর তাঁর কাছ থেকে দুরত্ব তৈরি করেছেন দলের নেতৃত্ব৷এই প্রেক্ষাপটে দলনেত্রীর নতুন অবস্থান বুঝে সুর নরম করেছেন দলের নেতারাও৷ টিএমসিপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি ইন্দ্রনীল আচার্য বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী তো ঠিক কথাই বলছেন৷ আমরাও চাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি বজায় থাকুক৷ সংগঠনের কেউ গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লে প্রশাসন আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে৷' রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালিও বলেন, 'আমরা প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্তিপুর্ণ রাখতে কড়া হাতে পরিচালনা করছি৷ তার মধ্যে দু'-একটি ঘটনা ঘটেছে ঠিকই৷ আশা করছি, এখন থেকে সব কিছু ঠিকঠাক চলবে৷'ইটাহারের বিধায়ক তথা তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, 'জনপ্রতিনিধিরা তো প্রশাসনেরই অঙ্গ৷ তাঁদের আলাদা ভাবে দেখার কিছু নেই৷'
রণবীর দেব অধিকারী ও মানস রায় গোয়ালপোখর ও তপন