পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ দিন সৌরভের হামলার তত্ত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের কটাক্ষ, 'উনি একজন উন্মাদ৷ এ সব মন্তব্য করে এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন৷ ঘটনার পর একদিনও কোচবিহারে আসেননি৷' সৌরভ চক্রবর্তীর পাল্টা প্রতিক্রিয়া 'আমি কারও সঙ্গে বাক্য বিনিময় করতে চাই না৷ মৃত পুলিশকর্মীর পরিবার আলিপুরদুয়ারে থাকেন৷ সে জন্য আজ সেই বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে পরিবারের লোকেদের কথা বলিয়ে দিই৷ ব্যাপারটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন৷' এ দিন কোতোয়ালি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃত এসআই-এর স্ত্রী৷ পাশাপাশি এ দিন প্রতিবাদ জানাতে এলাকায় সিপিএমের প্রতিনিধি দল গেলে তাঁদের উপর তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ৷
জেলার পুলিশ সুপারের মতোই ঘটনার পর থেকে পুলিশকর্মীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'হূদরোগ'কেই দায়ী করেছেন কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ এর ঠিক উল্টো প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী৷ রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য খারিজ করে তাঁর দাবি, এসআই রঞ্জিতবাবু 'আক্রান্ত' হয়েই মারা গেছেন৷ দুই জেলা সভাপতির পরস্পরবিরোধী এহেন প্রতিক্রিয়া অস্বস্তির মুখে ফেলেছে শাসকদলকে৷
বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের ভোলার ডাবরি এলাকায় মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী৷ ঘটনার তদন্তে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের ব্যাপারে শোকার্ত পরিবার সৌরভবাবুর কাছে আবেদন জানায়৷ এর পর দীর্ঘক্ষণ সৌরভবাবুর মোবাইলে ওই পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কথাও বলেন বলে জানা গিয়েছে৷ ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বুধবারই অবশ্য পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তদন্তের দাবি করেছেন মৃত পুলিশকর্মীর স্ত্রী রত্না পাল৷
ঘটনার পর পুলিশ গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে কয়েক জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে বলে অভিযোগ৷ সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল লাগোয়া পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাইয়ের হাট এলাকায় গেলে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়ে সিপিএমের প্রতিনিধি দল৷ ধাক্কা মারা হয় সিপিএম আমলের বনমন্ত্রী অনন্ত রায়কে৷ বিক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তমসের আলি৷ প্রাক্তন বনমন্ত্রী বলেন, 'তৃণমূল এলাকায় সশস্ত্র মিছিল করে হাজির হয়৷ এর পর হামলা করে৷ বাধ্য হয়ে আমাদের ফিরে আসতে হয়৷' সিপিএমের ওই এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তমসের আলির অভিযোগ, তৃণমূল জেলা সভাপতি জুয়াড়িদের আড়াল করছেন৷
ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসীদের মন গলাতে এলাকায় পৌঁছান তৃণমূল জেলা সভাপতি ও বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷ পুলিশ অন্যায় ভাবে কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেছে দাবি করে তিনি তাঁদের পরিবারের হাতে জামাকাপড় তুলে দেন৷ ধাইয়ের হাট এলাকায় গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা করেন তিনি৷ সভায় রবীন্দ্রনাথবাবুর হাত-পা ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ধৃতদের পরিবারের মহিলারা৷ রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, 'হূদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই পুলিশ কর্তার৷ তবে এ ঘটনায় অন্যায় ভাবে যদি নির্দোষদের গ্রেপ্তার হয়, তা অবশ্যই দেখা হবে৷' ধৃতদের দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দেন তিনি৷ এমনকি রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘোষণা যতদিন ওই গ্রামবাসীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাইরে না আসছেন, ততদিন শোকার্ত পরিবারগুলির খাওয়ার খরচ দলের৷
সিপিএমকে পাল্টা আক্রমণ করে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, 'যখন তমসের আলি এলাকার বিধায়ক ছিলেন তখন তিনি জুয়ায় মদত দিতেন৷ সে সময় সিপিএমের যে সব কর্মীরা গ্রামপঞ্চায়েত-সহ হাটে-বাজারে তোলাবাজি করত, সরকার বদলের পর তারাই এখন এলাকাগুলোতে জুয়ার আসর বসাচ্ছে৷ সিপিএমের প্রতিনিধিদলকে গ্রামের মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছেন৷' ঘটনায় দলের যোগ নেই বলে দাবি তৃণমূল বিধায়কের৷
এই সময়, কোচবিহার: জুয়ার ঠেক ভাঙতে গিয়ে কোচবিহারে পুলিশকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় এ বার হস্তক্ষেপ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী৷ বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর মোবাইলে মৃত এসআইয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবার আলিপুরদুয়ারের শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে আসবেন ডিজি৷ এ দিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে চলে এল শাসকদলের উত্তরবঙ্গের দুই জেলা সভাপতির কাজিয়া৷ একজন যখন এসআইয়ের মৃত্যুর জন্য হূদরোগকে দায়ী করছেন, তখন আর একজন সমর্থন করছেন হামলার তত্ত্ব৷ একজন যখন মৃতের পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলিয়ে দিচ্ছেন, তখন আবার ধৃতদের নিরীহ দাবি করে তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন আর একজন৷ আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ও কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের তরজায় একেবারে বেআব্রু হয়ে পড়েছে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব৷