Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

উচ্ছেদে ব্যর্থ সিপিকে তুলোধনা আদালতের

$
0
0

এই সময়: হাইকোর্টের নির্দেশে খোদ পুলিশ কমিশনার গিয়েছিলেন জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতে৷ কিন্ত্ত দখলি জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী৷ দলবল জুটিয়ে তিনি গায়ে আগুন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় চুপচাপ সেখান থেকে চলে এসেছিলেন নগরপাল৷ সেই ঘটনায় বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে তীব্র ভত্র্‌সনার মুখে পড়তে হল কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ কর পুরকায়স্থকে৷ এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য নজিরবিহীন ভাবে সিপিকে উদ্দেশ করে বলেন, 'পুলিশ কমিশনারের সামনে একজন আত্মহত্যার হুমকি দিল, আর তিনি বোবা-কালার মতো গোটা ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখলেন! এটা তো অপরাধ৷' এই প্রসঙ্গেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে৷' ওই জমি দখল করতে প্রয়োজনে সেনা নামানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদালত৷

দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় ওই জমি থেকে উচ্ছেদ মামলায় আদালতের তোপ থেকে বাদ যায়নি কলকাতা পুরসভাও৷ এ ভাবে ব্যক্তিগত জমি দখলে যে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ একটি চক্র কাজ করছে তা বুঝিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট৷ ওই জমি থেকে দখলদার হঠাতে রাজ্যকে শেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ যদি এই সময়ের মধ্যে পুলিশ কমিশনার সেই কাজ করতে না পারেন তা হলে ১৪ জানুয়ারি আদালতে সরকারকে লিখিত ভাবে তা জানাতে হবে৷ তার পর জমি উদ্ধার করতে হাইকোর্ট কড়া পদক্ষেপ করবে৷ আদালতের প্রশ্ন, 'কেউ যদি পুরসভার হেড অফিসে বেআইনি ভাবে ঢোকে, পুরকর্তারা কি তাদের সেখানে থাকতে সায় দেবেন? নবান্ন বা রাইটার্সে কেউ বেআইনি ভাবে ঢুকলে তা-ও কি মেনে নেবে সরকার?'হাইকোর্টের নির্দেশে গত শুক্রবার নাকতলায় প্রায় ৩৮ কাঠার ওই জমি দখলমুক্ত করতে যায় কলকাতা পুলিশ৷ সে দিন বেলা ১১টা নাগাদ কয়েকশো পুলিশকর্মীকে নিয়ে সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ হাজির হন ওই মাঠ দখলমুক্ত করতে৷ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের স্বামী তৃণমূল নেতা ভাস্কর দাম সকাল থেকে সেখানে দলবল নিয়ে বসেছিলেন৷ পুলিশ মাঠ দখল করতে গেলে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে পুলিশের সামনেই হুঁশিয়ারি দেন ভাস্কর৷ ফলে ঘণ্টা চারেক বসে থেকে সেখান থেকে হাত গুটিয়ে ফিরে যায় সিপি-র নেতৃত্বাধীন পুলিশবাহিনী৷ ভাস্কর এ দিন বলেন, 'বিষয়টি আদালতের বিচার্য৷ তাই আদালতের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না৷ আমরা আইনি পথেই এগোব৷'

পুরসভা যে সে দিন উচ্ছেদে অংশ নেয়নি তা জানানো হয় আদালতকে৷ তার পরেই 'পুরসভা বেআইনি কাজ করেছে' বলে মন্তব্য করে বিচারপতি বলেন, 'এটা রাজ্যের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক৷' এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, ওই জমি দখলমুক্ত না করতে পারা নিয়ে তারা কোনও পদক্ষেপ করছে না৷ এ দিন আদালতের নির্দেশের পর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'যে দিন পুলিশ সেখানে যায় তার আগের দিন বিকেলে লিখিত ভাবে সেখানে অংশ নিতে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়৷ খুব কম সময়ের মধ্যে কর্মী-অফিসারের ব্যবস্থা করা যায়নি বলে, সে দিন পুরসভা অংশ নিতে পারেনি৷' গোটা জমিটিই পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দাবি করে মেয়র বলেন, 'গোটা ওই জমিটিতেই পাম্পিং স্টেশন তৈরির জন্য ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে৷' যদিও সরকার আদালতে এ ব্যাপারে অন্য বক্তব্য জানিয়েছে৷ পুরসভা ওই মামলায় সরাসরি যুক্ত নয় বলে দাবি করে মেয়র বলেন, 'সরকারের সঙ্গে কথা বলে ১৪ জানুয়ারি আমরা আদালতকে আমাদের বক্তব্য জানাব৷'

এ দিন ওই জমির মালিক লীনা দত্তর হয়ে আদালতে বিষয়টি উত্থাপন করেন আইনজীবী কিশোর দত্ত৷ মামলাকারীর বক্তব্য, জমিটি তাঁর বাবা সরকারকে জনস্বার্থে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত সেই জমি একটি ক্লাব দখল করে বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে৷ আদালত নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার রবিশঙ্কর দত্তও তাঁর রিপোর্টে গোটা ঘটনা উল্লেখ করেন৷ এ দিন সেই রিপোর্ট দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি৷ তাঁর বক্তব্য, 'যিনি আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁকে পুলিশের গ্রেন্তার করা উচিত ছিল৷' সরকারকে ওই জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতেই হবে বলে বিচারপতি আদালতের বক্তব্য স্পষ্ট করে দেন৷ তিনি বলেন, 'এটা নিয়ে আদালত কড়া পদক্ষেপ নেবে৷ প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে ডেকে সাহায্য নেওয়া হবে জমি দখলে৷' প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে অন্য একটি মামলায় রাজ্য পুলিশকে দুর্গাপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিভাগের চাকরি পরীক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এ দিনের মামলাতেও বিস্মিত আদালতের প্রশ্ন, 'একজন পুলিশ কমিশনার আদালতের একটা নির্দেশ কার্যকর করতে পারলেন না!'

রাজ্য সরকার কেন জমির দখলদার উচ্ছেদ করতে পারবে না তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে, বিচারপতি বলেন, 'গোটা ঘটনার পিছনে একটি চক্র কাজ করছে৷ তারাই রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে৷ সেখানে এদের সকলের সঙ্গে সকলের যোগ রয়েছে৷' সরকার বেআইনি ভাবে এক ইঞ্চি জমিও দখল করতে পারবে না বলে আদালত হুঁশিয়ারি দেয়৷ কেন না তার আগে সরকারের তরফে কৌঁসুলি অভ্রতোষ মজুমদার বলেন, নাকতলার ওই প্লটে চার কাঠার মতো জমি পুরসভার দরকার, জল প্রকল্পের একটি কাজের জন্য৷ তখনই আদালত জানিয়ে দেয়, আইনি পথে সেই জমির জন্য আবেদন করুক পুরসভা৷ কোনও রাজনৈতিক নেতাকে সামনে রেখে এ কাজ করা যাবে না৷লিখিত নির্দেশে আদালত ওই জমি থেকে দখল উচ্ছেদ করতে রাজ্যকে শেষ সুযোগ দেওয়া হল বলে উল্লেখ করে৷ তার মধ্যে পুলিশ জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারলে আদালতের কোনও সমস্যা নেই বলেও নির্দেশে বলা হয়েছে৷ কিন্ত্ত যদি সরকার কলকাতা পুলিশের সিপি-র মাধ্যমে তা না পারে, তবে তা সরকার জানাক আদালতকে৷ তার পর আদালত দখল উচ্ছেদ করতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে৷


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles