Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

বিহার করে দেখাল, পশ্চিমবঙ্গ পারবে কি?

$
0
0

দুই বৃদ্ধকে কাঁধে চাপিয়ে ঢাক-ঢোল সহযোগে হই হই করে একদল যুবক বুথে নিয়ে এলেন৷ বয়স আনুমানিক ৮০-৮৫৷ স্বাধীনতার পর সেই প্রথম ভোট দিলেন দু'জনে৷ কখনও উচ্চবর্ণের ভাড়াটে সেনাদের প্রাণে মারার হুমকি, কখনও নকশালদের ভোট বয়কটের ফতোয়ায় তাদের মতো দলিত, হরিজনেরা বুথের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেন না৷ নির্বাচন কমিশনের সৌজন্যে সে বারই প্রথম ভোট হয় আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপে৷ ঘটনাটি দু-দশক আগের৷ ১৯৯৫-এর বিহার বিধানসভার ভোট৷ স্থান জাহানাবাদের এক গ্রাম৷ বিহারের ভোটে তখনও শেষকথা ছিল-'জিসকা লাঠি, উসকা ভঁয়েস'৷মাস দেড়েক আগে সেই জাহানাবাদেরই এক গ্রামে বিহারের এ বারের বিধানসভা ভোট চাক্ষুষ করলাম৷ দু-দশক আগের সেই ভোটের পরও বিহারের নানা নির্বাচনে প্রাণহানির বিরাম ছিল না৷ বছর পাঁচেক আগে থেকে ছবিটা এতটাই বদলে গিয়েছে যে এবারের ভোট হয়ে উঠল দেশের আদর্শ৷ প্রাণহানি দূরে থাক সামান্য হাতাহাতির ঘটনাও নেই৷ উল্লেখ করার মতো অঘটন মাত্র একটি৷ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বুথে বাঁদরের হামলায় কয়েকজনের ছোটখাটো চোট৷ জাহানাবাদের সেই গ্রামে গিয়ে গিয়ে দেখি একটাই মাদুরে পাশাপাশি বসে দু-দলের ক্যাম্প এজেন্ট ভোটারদের স্লিপ পরীক্ষা করছেন, বাংলায় আমরা যা কল্পনাও করতে পারি না৷ প্রথম দফার ভোটের পরই বুথ ফেরত্ জনতার মুখে মুখে ঘুরতে থাকে একটি স্লোগান-'না গোলি, না বম্, দেখা সিরফ্ ভোট না দম৷'এর কৃতিত্ব শুধুই নির্বাচন কমিশন, আধা সেনা আর রাজ্য প্রশাসনকে দিলে মস্ত ভুল হবে৷ আসলে বিহার নিজেকে বদলে নিয়েছে৷ একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক৷ গত লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ৩৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেখানে বিহারে এবারের পাঁচ দফার ভোটে অভিযোগের সংখ্যা ছিল সাকুল্যে হাজার দেড়েক৷ লোকসভার সেই ভোটে এ রাজ্যে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে লেখা লক্ষাধিক দেওয়াল মুছতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে৷ বিহারে সদ্য অনুষ্ঠিত ভোটে অনুমতি ছাড়া কারও বাড়িতে একটা পোস্টার সাঁটার অভিযোগও নেই বললেই চলে৷বিহার পারল, পশ্চিমবঙ্গ পারবে কি? আধা সেনা থাকায় ২০০১ পরবর্তী লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে প্রাণহানির থামানো গিয়েছে৷ কিন্ত্ত রক্তারক্তির বিরাম নেই৷ প্রতিপক্ষের মিছিল, জনসভায় সশস্ত্র হামলা, রিগিং, ছাপ্পা, বাইক বাহিনীর দাপট, বহিরাগতদের চোখ রাঙানি লেগেই আছে৷ রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট হলে নির্বাচন কেমন হিংসা উন্মত্ত হয়ে দাঁড়ায় পঞ্চায়েত-পুরসভার নির্বাচন তার প্রমাণ৷ দু-বছর আগে বহু চর্চিত পঞ্চায়েত ভোটে ৫১ জনের প্রাণ যায় এ রাজ্যে৷ বিহারের বিগত পঞ্চায়েত ভোটে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল শূন্য৷

বিহারের ভোট দেখে এ রাজ্যে বিরোধীরা উল্লসিত এবং আশা করছেন নির্বাচন কমিশনকে বলে কয়ে ভোটের মাস খানেক আগে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা গেলে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলকে মোক্ষম জবাব দেওয়া যাবে৷ ২০১৬-র ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে, বাস্তব পরিস্থিতি বিরোধীদের পক্ষে সত্যিই ততটা অনুকূল, সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরী, রাহুল সিংহরা তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন কি না সন্দেহ আছে৷ বরং বাস্তব উল্টো দিকেই ঝুঁকে আছে৷ কিন্ত্ত রাজ্যপাটে পুনরাগমন নিশ্চিত জেনেও তৃণমূল কংগ্রেস কি বাংলায় বিহারের মতো অবাধ ভোট হতে দেবে? নির্বাচন কমিশনও কি তা নিশ্চিত করতে পারবে? জবাব হল, 'না'৷ তার কারণ শুধু শাসক দল নয়, দায়ী বিরোধীরাও, বিশেষ করে সিপিএম, একাদিক্রমে যারা ৩৪ বছর ক্ষমতাসীন ছিল৷আমার কলেজ জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিক৷ এক রাতে বন্ধুদের আড্ডায় খবর এল মেসে এক সহপাঠী অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ আমরা তাঁকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে ডাক্তার দেখে বললেন, 'বদহজম, এক রাত স্যালাইন নিলেই চলবে৷' মাঝরাতে আমরা মেসে ফিরে রান্না ভাতের থালা ফাঁকা৷ রহস্যটা বোঝা গেল৷ সেই বন্ধু, বাকিদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে......৷ এটাই ছিল তাঁর মানসিক ব্যধি৷ ভরপেট খেয়ে অন্যেরটা গলা পর্যন্ত গিলত৷ পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের মানসিকতা অনেকটা আমাদের সেই বন্ধুর মতো৷ জয় নিশ্চিত জেনেও কাউতে জিততে দেব না, সব আসন আমার চাই, এই বিকৃত মানসিকতা গ্রাস করেছে৷ আজ শাসক দল তৃণমূল যা করছে, সাড়ে তিন দশক এভাবেই নির্বাচনকে গা-জোয়ারি, নীতিহীন লড়াইয়ের পরিণত করেছিল সিপিএম৷ লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত-পুরসভা তো বটেই ক্লাব, পাড়া কমিটি, সমবায়, স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতি, কোনও ভোট বাদ নেই, সর্বত্র জয় হাসিল মানে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া নয়, প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে বিজয় কেতন ওড়ানো চাই৷ ৫১ শতাংশ নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা করা দাঁড়িয়েছে ১০০ শতাংশ৷ 'সব আসন জেতা চাই' বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মী সভায় যে নিদান দেন, রাজনীতির ভাষায় সেই একই নিদান দিতেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা 'সব বুথে দলকে অন্তত ৫১ শতাংশ ভোট পেতেই হবে' এই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে৷ কী ভাবে তা করা হয়েছে, সে স্মৃতি আজও বেশ তরতাজা৷



নির্বাচনকে ঘিরে এমন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো চিত্রনাট্যের সূচনা হয়েছিল কংগ্রেস জমানায়, সাড়ে তিন দশকের শাসনে সিপিএমের হাত দিয়ে যা ক্রমশ বিকশিত হয়েছে৷ তারই মাশুল আজ গুনতে হচ্ছে এ রাজ্যের প্রধান শাসক দলকে৷এ প্রসঙ্গেও আর একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনাই৷ মহিশূরে বছর দশের আগের এক রবিবারের সন্ধ্যায় চায়ের দোকানের আড্ডায় ভোট নিয়ে আলোচনা কানে আসতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে দিন শহরের কর্পোরেশন ভোট৷ অথচ সারাদিন শহরে একবারও তা মালুম হয়নি৷ বোমা-গুলি দূরে থাক, রাজনৈতিক দল, পুলিশের দাপাদাপি, কিছুই নজর করিনি৷ বছর কয়েক আগেও জনসংখ্যা-ভোটার অনুপাতে কর্নাটক ছিল দেশের মধ্যে শীর্ষে আর পশ্চিমবঙ্গ ছিল পিছনের সারিতে, জাতীয় গড়ের থেকে অনেক কম৷ যদিও তখনও এ রাজ্যে সব নির্বাচনেই ভোট পড়ত গড়ে ৮০-৮৫ শতাংশ৷ কর্নাটক-সহ বহু রাজ্যেই ভোটদানের ছবিটা ছিল ঠিক উল্টো৷ কেন এই বৈপরীত্য? কারণটি ছিল ভোটার তালিকায় জালিয়াতি৷ বাংলায় ভোটার তালিকায় তখন বহু বৈধ ভোটারের নাম ছিল না এবং যাদের ছিল তাদের সিংহভাগই ছিলেন সিপিএমের কমিটেড ভোটার৷ ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ই যা নিশ্চিত করা হত৷ সিপিএমকে ভোট দেবে বা না দিয়ে উপায় নেই এমন মানুষের নাম তোলা হত, আর বিরোধী মনোভাবাপন্নদের নাম থাকত যত্সামান্য৷ ফলে বিক্ষিন্ত কিছু এলাকা বাদে শাসক দল সিপিএম প্রশাসন আর সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে অনুগত ভোটারদের বুথে পাঠিয়ে জয় হাসিল করার পাশাপাশি বিরোধীদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারত৷ ভোটের হারও তাই কোথাও কোথাও ৯০-৯৫ শতাংশে পৌঁছে যেত৷ বিরোধীরা কোনও কোনও বুথে শূন্য,



বড়জোর একটি-দু'টি ভোট পেত৷ তারপর ভোটদানের হার আর শাসক দলের বিপুল জয়কে রাজ্যবাসীর গণতান্ত্রিক চেতনার দৃষ্টান্ত বলে চালানো হত৷ উল্টো চিত্রটা কি সত্যিই মলিন? বিহারে এবার রেকর্ড ভোট পড়েছে৷ কত? ৫৮ শতাংশ৷ অন্যত্রও ছবিটা সামান্য এধার-ওধার৷ তাই বলে ওই সব রাজ্যে কি গণতন্ত্র ধূলিসাত্ হয়ে গিয়েছে? খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, এ রাজ্যে ভোটদানকে যে ভাবে 'উত্সব' আখ্যা দিয়ে স্বতস্ফর্ততার মোড়ক দেওয়া হয় তা আসলে একপ্রকার বাধ্যবাধকতা৷ ভোট দেওয়া এবং না দেওয়া দুটোই বিপজ্জনক৷ বুথে না যাওয়ার অর্থ কাউকে সমর্থন না করা৷ যে দল যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে স্বাধীনচেতা মানসিকতা বরদাস্ত করে না৷ ঘটনাচক্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা শাসক দল৷ সাড়ে তিন দশকের জমানায় সংগঠন আর প্রশাসনের শক্তিতে বলীয়ান সিপিএম ভোট ব্যবস্থাকে যেভাবে পার্টির দ্বারা চালিত করে এসেছে, তা হুবহু নকল করছে তৃণমূল৷অর্থাত্ শাসক দলের ভোট জালিয়াতির কপিরাইট প্রধান বিরোধী দলের, ক্ষমতা হাত ছাড়া হওয়ায় যা তাদের জন্যই বুমেরাং হয়ে উঠেছে৷ সরকার হাতছাড়া, সংগঠনও ভেঙে চুরমার৷ প্রতিরোধের ডাকে সাড়া নেই৷ কমরেডরা বাড়ি বাড়ি যাওয়ার আগেই পৌঁছে যাচ্ছে শাসকদল৷ পরিবর্তনের জমানায় প্রতিটি ভোটেই কম-বেশি বাম-জমানার পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছে৷ সিপিএমের নেতারা, জনতাকে প্রতিরোধের আহ্বান জানাচ্ছেন৷ কিঞ্চিত্ সাড়া না পেয়ে তাঁরা নিশ্চই অনুধাবন করছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে 'আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছে তাকে দেব', ভোট গণতন্ত্রের এই সহজ সত্যটি তাঁরা লালন করলে আজ এত অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হত না৷ তাতে হয়তো, রাইটার্স বিল্ডিংসের ইনিংস সাড়ে তিন দশকের রেকর্ড গড়ত না, কিন্ত্ত আজ অন্তত পরাজয়ের আশঙ্কা মুক্ত থেকে মাঠে নামতে পারতেন৷ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে একটা নির্বাচন মিটতে না মিটতেই পরবর্তী ভোটটি জিততে ক্যাডারদের তৈরি রাখা এবং দলীয় নিয়ন্ত্রণে ভোট করানোর সযত্নে লালিত কৌশলই ক্ষমতাহীন সিপিএমের জন্য বুমেরাং৷ ফলে 'জিসকা লাঠি উসকা ভঁয়েস, এই বাক্যটি বিহার মিথ্যা প্রমাণ করলেও বাংলায় আজও সত্য৷








Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>