হঠাত্ করে জেলবন্দি মদনের প্রসঙ্গ এ দিন সামনে এল কী ভাবে? বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই দুই বেআইনি আর্থিক সংস্থা সারদা এবং র্যামেলের প্রসঙ্গ তোলেন৷ গত কয়েকদিন ধরেই রানাঘাট পুরসভার বিরুদ্ধে র্যামেল সংস্থাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে শাসকদলে তোলপাড় চলছে৷ তাতে সামনে এসেছে তৃণমূলের রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক তথা স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের নামও৷ ওই সংস্থার একটি বাজার তৈরিতে পুরসভা সাহায্য করেছে, নাগরিক সমিতির এই অভিযোগের পর পার্থবাবু দলীয় স্তরে তাঁর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন৷ কিন্ত্ত তাতে যে মুখ্যমন্ত্রী সন্ত্তষ্ট নন তা বোঝা গিয়েছে৷ তিনি নিজেই এ প্রসঙ্গ সামনে এনে বলেছেন, 'বিজেপি আমাদের 'ম্যালাইন' করতে সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে৷ আমাদেরও রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে৷ প্রচারে মানুষের কাছে এটা বলতে হবে৷ আমি এখনও বিশ্বাস করি, মদন চুরি করেনি৷' শাসকদলের এক নেতার ব্যাখ্যা, সারদা কেলেঙ্কারিতে মদন মিত্র জেলে গিয়েও দল বা নেত্রীর প্রতি তাঁর আনুগত্য বজায় রেখেছেন৷ ফলে দল যে তাঁর পাশে আছে সেই বার্তা দিতেই নেত্রী অযাচিত ভাবে এই প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন৷
আসিফ খানের হঠাত্ করে রাজনৈতিক 'ইউ টার্নে' অবাক হয়েছেন অনেকেই, একদা মুখ্যমন্ত্রীকে 'ডাকাতরানি' হিসেবে উল্লেখ করা এই তৃণমূল নেতা এ দিন বলেন, 'সিবিআই এই তদন্তে শুধু তৃণমূলকে ভাঙার চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি৷ এখন যেহেতু মুকুল রায় দলে ফিরেছেন, তাই তাঁর ঘনিষ্ঠদের আবার নতুন করে ডাকা শুরু হয়েছে৷' কিন্ত্ত আপনি তো একসময় এই তদন্তে তৃণমূল যুক্ত বলে অভিযোগ করেছিলেন? পাল্টা প্রশ্ন করে আসিফ খানের জবাব, 'সারদায় তৃণমূল যে যুক্ত তা কি সিবিআই প্রমাণ করতে পেরেছে? ওরা তৃণমূলকে শেষ করার চক্রান্ত করছিল৷ এতদিন তদন্তে কিছুই তো উঠে আসেনি৷ বরং লোকে তৃণমূলকে আরও বেশি করে ভোটে জিতিয়েছে৷ এর থেকে কী প্রমাণ হয়? সিবিআই আসলে বিজেপির একটি হাতিয়ার৷ যেহেতু আমিও মুকুলদার ঘনিষ্ঠ, তাই আমাকেও এখন শুধু শুধু ডেকে পাঠানো হচ্ছে৷'
এই সময়: কলকাতা হাইকোর্টে মদন মিত্রের জামিন নাকচ হওয়ার পর দলের তরফ থেকে কোনও সাড়াশব্দ না-করায় শাসকদলের অন্দরেই গুঞ্জন উঠেছিল, তা হলে দল কি প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর পাশে নেই? অবশেষে বহুদিন পর, শনিবার নদিয়া জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার করে দিলেন, সারদা কেলেঙ্কারির জেরে জেলবন্দি তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর এবং দলের৷ এ দিন দলীয় বৈঠকে নিজের থেকেই চিটফান্ড প্রসঙ্গ তুলে দলীয় নেতৃত্বের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি এখনও বিশ্বাস করি, মদন টাকা চুরি করেনি৷' গত বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর অগাধ আস্থার কথা শোনা গিয়েছিল মদনের মুখেও৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নেন তা ভালোর জন্যই৷' এ দিনই সিবিআইয়ের ডাক পেয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন 'প্রাক্তন' তৃণমূল নেতা আসিফ খান৷ প্রায় দু'ঘণ্টা সিবিআই দন্তরে কাটানোর পর একদা 'বিদ্রোহী' আসিফ খান নিজেকে তৃণমূলের সৈনিক বলে দাবি করে বলেন, 'সারদা তদন্তে সিবিআই পুরোপুরি ব্যর্থ৷ শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকে কালিমালিন্ত করার জন্য বিজেপি সিবিআইকে ব্যবহার করছে৷' এর পাশাপাশি আসিফ দাবি করেন, তিনি তৃণমূলেই ছিলেন৷ তৃণমূলেই আছেন এবং থাকবেন৷