এরপর ডাক্তারকে বললাম, 'আমার পা টা কেটে দিতে পারবেন?' ডাক্তার জানালেন, তাঁর কাছে কোনও যন্ত্রপাতি নেই। এরপর আমি আমার সহকর্মীর কাছ থেকে আমার খুকরিটা চেয়ে নিলাম। সেইটে ডাক্তারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, এবার কাটুন। ডাক্তার বললেন, 'আমি পারব না, স্যার।' এরপর আমি নিজের হাতে খুকরিটা নিয়ে নিলাম। একবার স্ত্রী প্রিসকিলার মুখটা তখন চোখের সামনে ভেসে উঠল। মনে হল, এমন একটা স্টুপিড কাজ আমায় করতে হচ্ছে, যেটা করা ছাড়া আমার হাতে অন্য কোনও উপায় নেই। এরপর নিজের পায়ের উপর খুকরি দিয়ে বসিয়ে দিলাম এক কোপ। পা-টাকে কেটে ফেলে তুলে দিলাম ডাক্তারের হাতে। বললাম, 'নিন, এবার এটা জ্বালিয়ে দিন।'
আমার পা-টার এমন অবস্থা হয়েছিল, যে তার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। অন্যরা
আমার পায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে দেখছে, এটাও আমার ভালো লাগছিল না। আমি তখন সেটার থেকে নিষ্কৃতী পেতে চেয়েছিলাম। কেউ কাজটা করতে চায়নি, তাই আমাকেই করতে হয়। এটা আমি এমন কিছু করিনি যেজন্য আমায় এতটা ক্রেডিট দেওয়া হচ্ছে।
এরপর কাঠের পা লাগিয়েছি। কিন্তু, মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলাম, আর পাঁচজন ক্যাডেটের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে পড়ব না। প্রথম লড়াইটা করতে হয় মেডিক্যাল টেস্ট দিতে গিয়ে। টেস্টের ইন-চার্জ আমাকে পরীক্ষায় বসতেই দিচ্ছিলেন না। এর আগে এক বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি এই টেস্টের কষ্ট নিতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কিন্তু, আমি সেসব শোনার পাত্র নই। নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ প্রমাণ করার তাগিদ তখন আমায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষা দিলাম। বাকি সাত দু পায়ের অফিসারকে পিছনে ফেলে সেরার তকমা ছিনিয়ে নিলাম আমিই।
সেনাবাহিনীর ভাইস চিফ আমাকে জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁর সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। ৬,০০০ফিট উচ্চতার এক হেলিপ্যাডে যখন তাঁর হেলিকপ্টার নামল, তখন আমি সেখানে উপস্থিত। আমি যে কাঠের পা নিয়েই ওই উচ্চতায় চড়েছি, তা স্যার ভাবতেই পারেননি। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল টিএন রায়নার সঙ্গে লাদাখ যাই। দাপিয়ে বেড়াই তুষারঘেরা পাহাড়ের উপর। এসব দেখে আমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়। আমি হলাম প্রথম বিশেষভাবে সক্ষম অফিসার, যাঁকে ব্যাটালিয়ানের কম্যান্ডার করা হয়।
আমি একটাই কথা বিশ্বাস করি, জীবন একটাই। সেটা পুরোটা বেঁচে নাও। তোমার হাতে দিনে ২৪ ঘণ্টা রয়েছে। সব কাজ গুছিয়ে নাও। আর যেটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তা হল কখনও হাল ছেড়ো না। যদি কোনও কাজ করতে চাও, তবে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সেটা করে ফেলো।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: আমি মেজর জেনারেল ইয়ান কারডোজো। ১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ৫ গোর্খা রাইফেলের মেজর। লড়াই চলছিল জোরদার। হঠাত্ই এক BSF জওয়ান বলল 'এদিকে কাউকে পাঠাও।' আমি আমার দলকে বললাম, 'আমি যাচ্ছি।' ওই জওয়ানের দিকে ছুটে যেতেই আচমকা বিস্ফোরণ। বুঝতে পারিনি আমি মাইন বিছানো রাস্তায় দৌড়চ্ছি। আমার একটা পা মারাত্মক জখম হল। এক বাংলাদেশি গোটা ঘটনাটা দেখতে পেয়েছিল। সে আমাকে তুলে নিয়ে ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টারে নিয়ে গেল। ওরা তখন আমায় দেখে চরম ব্যতিব্যস্ত। আমি ডাক্তারকে বললাম, 'মরফিন জাতীয় কিছু দিন।' ডাক্তার জানালেন, শেষ হয়ে গিয়েছে।