Quantcast
Channel: Bengali News, বাংলা নিউজ, বাংলায় সর্বশেষ খবর, Live Bengali News, Bangla News, Ajker Bengali Khabar - Eisamay
Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

‘বিদ্রোহী’ রণক্লান্ত, তিনি অবশেষে ফের শান্ত

$
0
0

মমতা-মুকুলের দূরত্ব শুরু হওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেসে একটা 'গট-আপ'-এর থিওরি মুখে মুখে ফিরছিল, যার সারমর্মটি ছিল এই রকম৷ 'দিদির সঙ্গে দাদার আসলে কোনও সংঘাতই হয়নি৷ দু'জনে মিলে ঠান্ডা মাথায় বসে এই কৌশলটি স্থির করেছেন যাতে মদনের মতো মুকুলকে জেলে যেতে না হয় আবার দল থেকে বের হতেও না হয়৷' ভোটের দামামা বাজার অব্যবহিত আগে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ঝাঁকের কইয়ের ঝাঁকে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য দেখে এই প্রথম ধন্দ লাগছে, থিওরিটা সত্যি ছিল না তো? মুকুল রায়ের মাথা থেকে সিবিআই-এর খাঁড়া চিরতরে উঠে গিয়েছে এ নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার সময় এখনও আসেনি৷ তবে দশ মাস ধরে বিদ্রোহীর নিপুণ ছদ্মবেশে নিজেকে আড়াল করে রেখে তিনি যে মদন মিত্রের লাঞ্ছনা আর দুর্ভোগ এড়িয়ে যেতে পারলেন, তা তো আমরা সবাই দেখলাম৷ তৃণমূলের ক্ষমতার বলয়ে মুকুলের কাছে পোকা-মাকড় তুল্য শঙ্কুদেব পান্ডাকেও একাধিকবার তলব করা হয়েছে৷ গত দশ মাস ধরে সারা দেশ ঘুরে ঘুরে মুকুলবাবু যত ধর্মের যত ধরনের তীর্থস্থানে মাথা ঠুকে এসেছেন, যে ভাবে শরীরটাকে কলুষমুক্ত করতে রাতারাতি শাকাহারী হয়ে উঠেছেন, তাতে এই নয়া মহাত্মাকে সিবিআই নিজেই যদি সমীহ করতে শুরু করে থাকে, আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না৷ ভারতবর্ষে বাবাজিদের বাজার তো বরাবরই ভালো! কপিল শর্মার দৌলতে ওই যে একটা কথা খুব জনপ্রিয় হয়েছে না, বাবাজিকা ঠুল্লু!



পিছন ফিরে তাকিয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মনে উঁকি দেয় তা হল, বিদ্রোহী বলতে রাজনীতিতে সচরাচর আমরা যা বুঝে থাকি, মুকুল রায় কোনও দিন সত্যিই কি তা ছিলেন? ছোটো-বড়ো-মাঝারি যে কোনও দলেই প্রকৃত বিদ্রোহীর প্রথম কাজটি হয়ে থাকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও কারণে সোচ্চার হওয়া৷ বিদ্রোহীর মতপার্থক্য আদর্শভিত্তিক হতে পারে, নীতিগত হতে পারে, পদ্ধতিগত হতে পারে আবার স্রেফ ব্যক্তিগত উচ্চাশার কারণেও হতে পারে৷ পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের ইতিহাসে এমন বিদ্রোহীর সংখ্যা অনেক৷যেমন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির বিদ্রোহ ছিল সঞ্জয় গান্ধীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে৷ প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাজীব গান্ধী যে ভাবে কংগ্রেস ও সরকার পরিচালনা করছিলেন তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ দলীয় নেতৃত্বের সিপিএম-তোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে সোচ্চার ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরে ধীরে সেই ইস্যুটিকেই প্রধান হাতিয়ার করে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের দল গড়েছিলেন৷ আবার ব্যক্তিগত সততাকে মূলধন করে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ধীরে ধীরে অতি সুকৌশলে রাজীব গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন স্রেফ নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনায়৷

বিদ্রোহীদের মধ্যে নীতিনিষ্ঠ যাঁরা, তাঁরা আবার বিদ্রোহ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যাবতীয় দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ কেউ কেউ আবার ততটা নীতিনিষ্ঠ না হওয়ার কারণে অপেক্ষা করেন দলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য৷ কত রকম বিদ্রোহী, তাঁদের কত না রকম বিদ্রোহ!মাননীয় মুকুল রায় মহাশয়কে কি বিদ্রোহীদের এই সব পরিচিতি ছাঁচের মধ্যে একটিতেও ফেলা যায়? না-ই যদি যাবে তা হলে তিনি ঠিক কী গোত্রের বিক্ষুব্ধ বা বিদ্রোহী? কাঁচড়াপাড়া গোত্র? সিবিআই গোত্র? না জেল গোত্র? স্বামীর সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়া বা মান-অভিমান হলে স্ত্রী যেমন বাপের বাড়ি গিয়ে দরজায় খিল তুলে বসে থাকেন, মুকুলও তেমনি বেশ কিছুকাল যাবত্ দিদিমণির ছায়া এড়িয়ে চলছিলেন এ কথা সত্যি৷ কিন্ত্ত ওই পর্যন্তই৷ তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে তো দূরস্থান, অনুব্রত মণ্ডল কিংবা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধেও তিনি একটি বাক্য খরচ করেছেন কি এ পর্যন্ত? তাঁর বিক্ষোভ ঠিক কী নিয়ে, তৃণমূল দল অথবা সরকারের ঠিক কোন কোন বিষয় তাঁর অপছন্দ, কেনই বা তিনি আর এই দলে থাকতে চাইছেন না, এ নিয়ে মুকুলবাবুকে এ পর্যন্ত কেউ রা কাড়তে শুনেছেন কি? তা হলে? বিক্ষোভ বা বিদ্রোহের সঠিক কারণটাই যেখানে বোধগম্য হল না সেখানে এমন নীরব কবিকে বিদ্রোহীর আসনে বসালে কি প্রকৃত বিদ্রোহীর সাহসকে অবমাননা করা হয় না? কিংবা বিদ্রোহের পরিচিত সংজ্ঞাটিও কি নতুন করে লিখতে হয় না?

গত দশ মাস ধরে মুকুল রায় তা হলে ঠিক কী করেছেন? নিজের বাড়িতে অথবা কার্যালয়ে বসে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ফুসুর ফুসুর-গুজুর গুজুরে গল্পের গরুকে গাছে তোলা বা তীর্থস্থান ভ্রমণের তালিকাটা না হয় হিসেবের বাইরে রাখলাম৷ তিনি মহাবলশালী বিদ্রোহী, চাণক্যের অধুনা বঙ্গজ সংস্করণ, এমন একটা নামাবলী ধারণ করে, ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের তালিকায় যত স্বীকৃত রাজনৈতিক দল আছে তাদের প্রায় সব কয়টির নেতা নেত্রীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন৷ সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন বিজেপি-আরএসএস নেতাদের সঙ্গে৷ খোদ নরেন্দ্র মোদী থেকে মুরলীধর লেনে রাজ্য বিজেপি অফিসের দারোয়ান পর্যন্ত! তার পরে কংগ্রেস, সিপিএম এবং সব শেষে পশ্চিমবঙ্গের সাইনবোর্ড-সর্বস্ব বিবিধ খুচরো দলপতিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন অজস্র৷ আরএসএস-বিজেপি-কে বলেছেন তিনি তাঁদের দলে আসতে চান৷ সিপিএম-কংগ্রেসকে বলেছেন তিনি নিজের দল গড়ে নির্বাচনী জোট বাঁধতে চান এদের সঙ্গে৷ খুচরো দলগুলিকে বলেছেন ভোটে তারা যাতে প্রাপ্য গুরুত্ব পায় সেটা তিনি নিশ্চিত করবেন৷ আর সব পক্ষের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ অনুগামীকে দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করে রেখেছেন নতুন রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য৷ ফলে গত দশ মাস ধরে মিডিয়া তাঁর পিছু ধাওয়া ছাড়েনি এই আশায় যে মুকুল বোধ হয় সত্যিই কিছু না কিছু করবেন৷ এত হরেকরকমবা নেতার সঙ্গে দেখা করছেন যিনি, নির্বাচন কমিশনের হিয়ারিংয়ে যিনি লোক পাঠাচ্ছেন ঘনঘন, তিনি কি আর শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিতে পারেন?

তার মানে তৃণমূলের এই নতুন গোত্রের বিদ্রোহীর যাবতীয় কর্মকাণ্ডই ছিল পর্দার অন্তরালে, লোকচক্ষুর অগোচরে৷ সাহসী বিদ্রোহীর মতো প্রকাশ্যে নয়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্ক নেই, গোটা দুনিয়াকে এ কথা জানিয়ে দেওয়ার পরেও তিনি রাজ্যসভার দলীয় সদস্যপদ ছাড়েননি, তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব থেকে মমতা অর্ধচন্দ্র দিয়েছেন তবু ঘাপটি মেরে বসে থেকেছেন শেষের সারিতে৷ আর মাঝে-মধ্যে কলকাতায় অথবা দিল্লিতে নাছোড় রিপোর্টাররা ভিড় করলে হয় তিনি নানাবিধ দার্শনিক মন্তব্য করে (যেমন নভেম্বর বিপ্লবের মাস, দেখুন না কী হয় ইত্যাদি) নতুবা এক্কেবারে 'মোনালিসা'-হাসি হেসে তাদের আমোদ জুগিয়েছেন৷ দাদার এমন দীর্ঘায়িত কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দেখে ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে ইতি-উতি আয়োজন করেছেন দু'একটা সেমিনারের৷ অবান্তর বিষয় নিয়ে৷ সর্বোপরি এমন নিরামিষ ব্যাপারেও নিজে সামনে না এসে৷ আর কেউ বেশি চাপাচাপি করলেই মিকি মাউসের গলায় বলে উঠেছেন, 'কই আমি তো তৃণমূলেই আছি৷' লক্ষ্মণ সেনের আমল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে এমন বীরপুরুষ বিদ্রোহী কদাপি দেখা গিয়েছে কিনা সন্দেহ!

মুকুল রায়ের প্রতিটি পদক্ষেপের পিছনে ছিল সুচতুর পরিকল্পনা৷ তিনি জানতেন সারদা কেলেঙ্কারিতে তাঁর নামটি যে ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে এবং তৃণমূল বিরোধীরা যে ভাবে এত দিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে কামান দেগেছে, তাতে কোনও দলই শেষ পর্যন্ত তাঁকে জায়গা দেবে না৷ কেননা যে দলই জায়গা দেবে জনতার আদালতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে৷ বিজেপি দেবে না কেননা পশ্চিমবঙ্গে এমনিতেই নতুন করে তাদের কিছু হারানোর নেই, উপরি হিসেবে অপবাদ যে কোনও মূল্যে পরিত্যজ্য৷ সিপিএম দেবে না কেননা এই দল প্রাক-নির্বাচনী জোটের রাস্তায় হাঁটবে না৷ আর রাজ্যে অথবা কেন্দ্রে কংগ্রেসের গুরুত্ব কতটা সেটুকু না বোঝার মতো মূর্খ মুকুল রায় নন৷অতএব প্রশ্ন, মুকুল তা হলে এইভাবে এ দল-সে দল করে করে এতটা সময় ব্যয় করলেন কেন? একটাই কারণে৷ যাতে তিনি দিদির আঁচলের তলায় ফিরে গেলে কেউ না বলতে পারে মুকুল আমাদের কাছে আসেনি, আমাদের সাহায্যপ্রার্থী হয়নি৷ অর্থাত্ 'বিদ্রোহী' মুকুল সেজে গিয়ে 'বেচারা' মুকুল হয়ে ঘরে ফিরে আসাটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য৷

বলতেই হবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে তাঁর৷ এত দলের এতজন তাবড় তাবড় নেতাকে এতদিন ধরে বোকা বানানোটা অবশ্যই চাট্টিখানি কথা নয়! মূষিককে কেউ যদি সত্যিকারের বাঘ বলে মনে করে থাকে সে দোষ তো ইঁদুরের নয়! তৃণমূলের জার্সি খুলে রাস্তায় দাঁড়ালে যাঁর দারা-পুত্র-পরিবার পাশে দাঁড়াতে চায় না, সুখের পায়রারা নানা সময় নানা ভাবে উপকৃত হওয়ার পরেও যাঁকে ছেড়ে চোখের নিমেষে গা ঢাকা দেয়, জেলের ভয়ে যাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা দায় হয়, বাঁচাও বাঁচাও বলে যাঁকে ঊন্মাদের মতো ঘুরে বেড়াতে হয় এ ঘর-সে-ঘর, সেই পরগাছা গুল্মকে যারা শাল্মলী তরুবর ঠাওরেছে, ভুলটা তাদের৷ মুকুল আসলে মুকুলই৷ বিশাল আমগাছের ডালে একটি পল্লবের ডগার সামান্য পুষ্পগুচ্ছ৷ নেতাও নয়, বিদ্রোহীও নয়৷ তবে বিরাট মাপের অভিনেতা৷ প্রায় নাসিরুদ্দিন শাহের সমগোত্রীয়! তৃণমূলে পুনর্বাসিত হওয়ার পরে মুকুলকে মাথা নিচু করে থাকতে হবে, দিদি তাকে সবক শেখাবেন, এ সব জল্পনার ফানুস যাঁরা ওড়াচ্ছেন তাঁদের আসলে কিছুটা গাত্রদাহই হচ্ছে৷ তৃণমূলের নিয়মটাই হল যাঁর মাথায় দিদির হাত তিনিই 'পরমেশ্বর' তা তাঁর আচরণ যতই 'ঘৃণ্য' হোক না কেন৷ ভোটের বাজারে তৃণমূলের মতো দলে মুকুলের যে কার্যকারিতা, তা আর কারুরই নেই৷ বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যখন বিহার মডেলে এবার পশ্চিমবঙ্গেও ভোট করার হুঙ্কার দিচ্ছে৷ সত্যি কথা বলতে কি একমাত্র তৃণমূলেই মানায় বীর-সিংহ মুকুল রায়কে৷সেই কবে থেকেই তো শুনে আসছি, 'বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে!'


Viewing all articles
Browse latest Browse all 87249

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>