ফের কুণাল অস্বস্তি তৃণমূলের!
কলকাতার বস্তি উন্নয়নে সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করে তৃণমূল পুরবোর্ডকে বিড়ম্বনায় ফেললেন জেলবন্দি কুণাল ঘোষ৷ কুণালের সুপারিশ মানা হবে কি না, তা নিয়ে সাপের ছুঁচো গেলার অবস্থা পুর কর্তৃপক্ষের৷ না পারছে গিলতে, না পারছে উগরাতে৷ কুণালের প্রস্তাবে সায় দিলে প্রমাণিত হবে যে, শহরের বস্তি উন্নয়নে খামতি রয়েছে৷ বিধানসভা ভোটের আগে তা নিয়ে শাসক দলকে চেপে ধরতে পারেন বিরোধীরা৷ আবার টাকা ফিরিয়ে দিলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে উন্নয়নে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার অভিযোগ উঠবে৷
পুরসভা সূত্রের খবর, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি উন্নয়ন খাতে নিজের সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে মোট ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ৷ রাস্তা সংষ্কার, নিকাশি উন্নয়ন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তায় আলো বসানো, নতুন বাড়ি তৈরি-সহ বস্তির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে৷ স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় এ ব্যাপারে কুণাল ঘোষের কাছে আবেদন করেছিলেন৷ সেই মতো কুণাল ঘোষ কয়েক দিন আগেই পুরসভার কাছে প্রস্তাব পাঠান৷ নিয়ম অনুসারে, কলকাতা পুর এলাকায় সাংসদ তহবিলের টাকা পুরসভার মাধ্যমেই খরচ করতে হয়৷
কিন্তু পুরসভায় খোঁজ করতে গিয়ে এমপি ফান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিকের কাছ থেকে প্রকাশবাবু জানতে পারেন, কুণালের সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ কুণাল জেলবন্দি আসামি হওয়ায় তাঁর টাকা খরচ করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রকাশবাবু৷ তাঁর প্রশ্ন, 'কুণাল জেলে থাকলেও এখনও তিনি সরকারি ভাবে এমপি রয়েছেন৷ তাহলে তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে আইনি বাধা কোথায়? এই টাকা কুণালের ব্যক্তিগত নয়৷ এটা জনগণের টাকা৷ তৃণমূল ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছে৷'
প্রকাশবাবুর অভিযোগ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েক হাজার মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন৷ সেখানে রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জলের প্রভুত সমস্যা রয়েছে৷ বারবার বলা সত্ত্বেও পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করেনি৷ অথচ, কুণালবাবুকে একবার বলতেই তিনি রাজি হয়ে গিয়েছেন৷ সেটা টাকাও খরচ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ এর আগে অবশ্য কুণাল জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স কিনেছিলেন পুরসভা৷ যার উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপেই পুরসভা উল্টো সুর গাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
সরকারি ভাবে কলকাতা পুর এলাকায় সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের দায়িত্বে রয়েছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ৷ খাতায় কলমে তিনি হলেন 'নোডাল অফিসার'৷ কুণালের সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করা নিয়ে পুরসভার আপত্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, '২৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য কুণালবাবু টাকা বরাদ্দ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই৷ আমরা কোনও আইনি পরামর্শও চাইনি৷'
তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে কয়েকদিন আগেই সোচ্চার হয়েছিলেন কুণাল৷ তা নিয়ে জেলে অনশনও শুরু করেছিলেন৷ কুণালকে শান্ত করতে শেষপর্যন্ত সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের অনুমতি দেয় জেল কর্তৃপক্ষ৷ কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্সি-সহ বিভিন্ন জেল হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা বরাদ্দ করে তৃণমূল সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু কুণালের চাপে তৃণমূল যে কোনও ভাবেই যে মাথা নোয়াতে নারাজ, সাংসদ তহবিলের টাকা আটকে রাখার ঘটনাই তার প্রমাণ৷
Tapas.Pramanik@timesgroup.com