অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ তুলেই পূর্ব মেদিনীপুরের কণ্টাই রহমানিয়া হাই মাদ্রাসা পরিচালন কমিটি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ ২০১৪-র ১২ মার্চ বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন৷ সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার৷
মাদ্রাসা পরিচালন কমিটির তরফে আইনজীবী আবু সোহেলের দাবি, 'প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে জানিয়েছে, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে সংশ্লিষ্ট পরিচালন কমিটিই৷ শুধু তাই নয়, ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত ওই সব মাদ্রাসায় যত জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের ভবিষ্যতও সংশ্লিষ্ট পরিচালন সমিতির উপরেই নির্ভর করবে৷' ফলে রাজ্যের অনুমোদিত ৬১৪টি মাদ্রাসায় বেশ কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হল৷
পাশাপাশি, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষেই মাদ্রাসাগুলির চার হাজার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য যে ৭০ হাজার প্রার্থী কমিশনের পরীক্ষায় বসেছিলেন, সেই পরীক্ষার ফলও ঝুলে রইল৷ সব মিলিয়ে রাজ্যের ৬১৪টি হাই, সিনিয়র এবং জুনিয়র মাদ্রাসায় পঠনপাঠন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হল৷
রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, 'বুধবার গঙ্গাসাগর নিয়ে সল্টলেকে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম৷ তাই দপ্তরে যেতে পারেনি৷ রায়ের কপিও হাতে পাইনি৷ কাল, বৃহস্পতিবার দপ্তরে গিয়ে এ ব্যাপারে বিশদে খোঁজখবর নিয়ে যা বলার বলব৷' বিস্মিত বাম আমলে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রী আবদুস সাত্তারও৷ তাঁর বক্তব্য, 'সংখ্যালঘুদের অধিকার আরও সুরক্ষিত করতেই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়েছিল৷ মাদ্রাসাগুলি সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ সেখানে স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগের জন্যই সংখ্যালঘু স্বশাসিত কমিশন গঠন করা হয়েছিল৷
গোটা প্রেক্ষিত সম্ভবত রাজ্যের তরফে আদালতের সামনে উপস্থাপিত করা হয়নি৷ সে জন্যই হার৷ রাজ্যের উচিত বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ভাবে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হওয়া৷' মামলাকারীদের তরফে প্রধান আইনজাবী ছিলেন অবশ্য সাত্তার সাহেবের দলেরই সদস্য, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷
অন্য দিকে, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠন নিয়ে বাম আমলের ভুল নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে৷ এক আধিকারিক বলেন, '১৯৯৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হত৷ তখন কোনও সমস্যা ছিল না৷' তা হলে পৃথক ভাবে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গড়তে যাওয়া হল কেন?
আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, দেশজুড়ে সংরক্ষণ নীতি চালু হওয়ায় তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত শিক্ষক প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাই সমস্যার সমাধানে বাম জমানায় মাদ্রাসগুলিকে স্কুলশিক্ষা অধিকরণ বিভাগ থেকে পৃথক করে মাদ্রাসা অধিকরণ গঠন করা হয়৷ সেই সঙ্গে মাদ্রাসাকে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়ার সঙ্গেই সার্ভিস কমিশন গড়ে তাকেও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল৷
এই সময়: মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন অবৈধ ও অসাংবিধানিক৷ সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ই বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ৷ আদালত জানাল, সংবিধানের ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষাধিকার ভঙ্গ করে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য সরকার নিযুক্ত কমিশনের কোনও ভূমিকাই থাকতে পারে না৷