নতুন গ্যাস সংযোগ ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই চালু করেছে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা৷ এবার আরও একধাপ এগিয়ে তারা দিন কয়েক হল জন্য চালু করেছে সিলিন্ডারের দাম দেওয়ার এতেই শেষ নয়৷ নগদ কমানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সফল করতে অদূর ভবিষ্যতেই গ্রাহকদের বাড়িতে দেওয়ার সময় সঙ্গে থাকবে পয়েন্ট অফ সেলস। এই মেশিনে ডেবিট বা কার্ড সোয়াইপ করেই গ্রাহক স্বচ্ছন্দে মেটাতে পারবেন দাম৷ আর সিলিন্ডার তাঁর যদি ভর্তুকির অর্থ পাওনা, তা হলে তা এখনকার মতো পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে যাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে৷ দেশে কালো টাকা ব্যবহারে রাশ নগদ লেনদেন কমানোর বারে বারে জোর দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ তারই অঙ্গ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী সিলিন্ডারের দাম মেটানোর গ্রাহকদের জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করেছে৷
কী কাজ করবে এই ব্যবস্থা? যে সমস্ত গ্রাহক অনলাইনে বুকিং করবেন, তাঁরা ইচ্ছা অনলাইন পেমেন্ট করার সুযোগ পাবেন৷ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে সিলিন্ডার বুক করলেই অনলাইনে পেমেন্ট করার অপশন আসবে৷ আর গ্রাহক যদি সেই অপশনে গিয়ে ক্লিক করেন, তা হলে তিনি তাঁর ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড অথবা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে সিলিন্ডারের দাম আগাম মেটাতে পারবেন৷ পরের দিন এই তথ্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে পৌঁছবে৷ তার পর তৈরি হবে ক্যাশ মেমো৷ বড় দোকান, রেস্তোরাঁ তো বটেই অনলাইনে ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সিইএসসি-র বিদ্যুতের বিল মেটানোর ক্ষেত্রেও কার্ড ব্যবহারের জন্য কোনও বিনিময় (ট্রানজাকশন) চার্জ দিতে হয় না৷ উল্লেখ্য, এধরনের একটি লেনদেনের ক্ষেত্রে বিনিময় চার্জ বিলের মোট অর্থাঙ্কের ০.৮ থেকে ১.২ শতাংশ৷ অনলাইনে সিলিন্ডারের দাম মেটানোর ক্ষেত্রে কি গ্রাহকদের এই চার্জ দিতে হবে ? ইন্ডিয়ান অয়েলের এক কর্তার জবাব, 'আমাদের মোট যত বুকিং হয় , তার এক শতাংশ বুকিং হয় অনলাইনে৷ তাই এখন গ্রাহকদের বিনিময় চার্জ দিতে হবে৷ তবে আমরা অনলাইন বুকিং আরও জনপ্রিয় করতে চাইছি৷ আর তার ফলে , অনলাইনে বুকিং উত্তরোত্তর ভাবে বৃদ্ধি পেলে , সে ক্ষেত্রে আমরা এই চার্জ না নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাঙ্ক ও কার্ড সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলব৷'
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ম মন্ত্রক সূত্রের খবর , বাড়িতে ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ড সোয়াইপ করে সিলিন্ডারের দাম মেটানোর ব্যবস্থা আগামী বছরেই চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে ডেলিভারিম্যানরা পিওএস মেশিন নিয়ে গ্রাহকদের বাড়িতে সিলিন্ডার পেঁৗছে দিতে যাবে৷ কোনও গ্রাহক যদি নগদের পরিবর্তে কার্ডে দাম মেটাতে চান , তা হলে ওই পিওএস -এ সোয়াইপ করে তিনি তা দিতে পারবেন৷ এই পরিকল্পনার ব্যাপারে সংস্থাগুলির তরফে ডিস্ট্রিবিউটরদের সম্প্রতি জানানোও হয়েছে৷ কিন্ত্ত , পরিকল্পনা কী ভাবে রূপায়িত হবে , অর্থাত্ পিওএস মেশিন কারা সরবরাহ করবে , সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ মধ্য কলকাতার এক ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার মালিকের কথায় , 'ডেলিভারিম্যানরা রোজ যে হাজার হাজার টাকা ক্যাশ ক্যারি করেন , তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ যেমন , তেমনই আমরা প্রতি মাসে অন্তত চার -পাঁচ হাজার টাকার জাল নোট পাই৷ ফলে , মাসিক হাজার পাঁচেক টাকা আমাদের জাল নোটের কারণে লোকসান হয়৷ পিওএস চালু হলে আমাদেরই তো লাভ৷ '
উত্তর কলকাতার অন্য এক ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার কর্তা বলেন , 'আমার মনে হয় , সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ডিস্ট্রিবিউটরই ট্রানজকশন চার্জ নিজেরা অ্যাবজর্ব করে নেবে , গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপাবে না৷ 'নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউর্টস ফেডারেশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সুকমল সেন বলেন , 'অনলাইনে যত বেশি মানুষ সিলিন্ডার বুকিং ও পেমেন্ট করার সুযোগ নেবেন , তত নগদে লেনদেন কমবে৷ একই সঙ্গে আমাদের জাল নোট পাওয়ার সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে৷ কমবে নগদ চুরির প্রবণতাও৷'
কৌশিক প্রধান